
ছবি: সংগৃহীত/২০২৩
বিশ্বজুড়ে খাদ্য নিরাপত্তাহীনতা এক ভয়াবহ পর্যায়ে পৌঁছেছে। সংঘাত, অর্থনৈতিক সংকট এবং জলবায়ু বিপর্যয়ের কারণে লাখো মানুষ অনাহারের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছেছে। এমনটাই উঠে এসেছে গ্লোবাল রিপোর্ট অন ফুড ক্রাইসিস (GRFC)–এর সাম্প্রতিক প্রতিবেদনে।
সবচেয়ে করুণ অবস্থা গাজায়, যেখানে ২১ লাখ জনসংখ্যার প্রতিটি মানুষ তীব্র খাদ্য সংকটে ভুগছে। ২০২৪ সালের মার্চে সেখানে অর্ধেকের বেশি মানুষ আইপিসি ধাপ ৪ (জরুরি) অবস্থায় ছিলেন, এবং ৫০ শতাংশ মানুষ ছিলেন সর্বোচ্চ স্তরের ‘বিপর্যয়’ (আইপিসি ধাপ ৫) অবস্থায়, যা দুর্ভিক্ষ ঘোষণার আগের সর্বশেষ ধাপ।
গাজার এই সংকট কেবল মানবিক ব্যর্থতা নয়, বরং এটি দীর্ঘমেয়াদি অবরোধ ও সংঘাতের ফল। ১৭ বছরের অবরোধ ও একের পর এক ইসরায়েলি সামরিক অভিযানে গাজার অর্থনীতি সম্পূর্ণ ভেঙে পড়েছে। ২০২৪ সালের শেষ নাগাদ, অঞ্চলটির ৭৫ শতাংশ কৃষিজমি, ৫৭ শতাংশ গ্রীনহাউস, এবং ৬৮ শতাংশ পানির কূপ ধ্বংস হয়ে যায়। উত্তর গাজা ও গাজা গভর্নরেটে ৭০ শতাংশ মানুষ ‘বিপর্যয়’ স্তরে জীবন যাপন করছেন, যারা প্রায় পুরোপুরি অপর্যাপ্ত মানবিক সহায়তার ওপর নির্ভরশীল।
এদিকে খাদ্যদ্রব্যের দাম অস্বাভাবিকভাবে বেড়েছে। ২০২৫ সালের ফেব্রুয়ারি থেকে এপ্রিলের মধ্যে গমের ময়দার দাম ৩,০০০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
মানবিক সহায়তা প্রবাহ এখনও ভয়াবহভাবে সীমিত। সংঘাত-পূর্ব অবস্থার তুলনায় অনেক কম সংখ্যক ট্রাক গাজায় প্রবেশ করছে, ফলে দুর্ভিক্ষের ঝুঁকি পুরো ২০২৫ জুড়ে থেকেই যাচ্ছে। এখনই একটি তাৎক্ষণিক যুদ্ধবিরতি এবং অবাধ মানবিক সহায়তা নিশ্চিত করা জরুরি।
পাকিস্তানেও বিপজ্জনক খাদ্য সংকট
গাজার অবস্থা সবচেয়ে ভয়াবহ হলেও, পাকিস্তানেও খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে। ২০২৪ সালের ডিসেম্বরে খাদ্য মূল্যস্ফীতি ০.৩ শতাংশে নেমে এলেও, দারিদ্র্য ও বেকারত্বের কারণে মানুষ প্রয়োজনীয় খাদ্যের চাহিদা পূরণ করতে পারছে না।
২০২২ সালের ভয়াবহ বন্যা এখনও চিহ্ন রেখে গেছে। এরপর ২০২৩ ও ২০২৪ সালের চরম আবহাওয়া বিশেষ করে বেলুচিস্তান, সিন্ধু এবং খাইবার পাখতুনখোয়ায় জীবন-জীবিকাকে আরও দুর্বল করে দিয়েছে। এসব অঞ্চলে পানির সংকটও দিন দিন তীব্রতর হচ্ছে, যা কৃষিতে বিপর্যয় ডেকে আনছে এবং ক্ষুদ্র কৃষকদের দেনার ফাঁদে ফেলছে।
সর্বশেষ তথ্যে দেখা গেছে, ১১ মিলিয়ন মানুষ আইপিসি ধাপ ৩ বা তার চেয়ে খারাপ অবস্থায়, এবং ২২ লাখ মানুষ জরুরি অবস্থায় রয়েছে। সিন্ধু ও খাইবার পাখতুনখোয়ায় অপুষ্টির হার বিশেষভাবে উদ্বেগজনক। শিশুদের মধ্যে কম ওজন নিয়ে জন্মানো, ডায়রিয়া এবং শ্বাসতন্ত্রজনিত সংক্রমণ এই সংকট আরও বাড়িয়ে তুলছে।
এর পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে মানবিক সহায়তা তহবিল হ্রাস পাওয়ায় খাদ্য সাহায্য কর্মসূচিগুলোও ব্যাহত হয়েছে।
এখনই পদক্ষেপ জরুরি
এই সংকট থেকে মুক্তি পেতে পাকিস্তানের কেন্দ্র ও প্রাদেশিক সরকারকে একযোগে কাজ করতে হবে।
- সামাজিক নিরাপত্তা জোরদার,
- মা ও শিশুর পুষ্টি সহায়তা নিশ্চিত,
- জলবায়ু সহনশীল কৃষিতে বিনিয়োগ।
— এই তিনটি ক্ষেত্রেই তাৎক্ষণিক ও দৃঢ় পদক্ষেপ জরুরি। নাহলে পাকিস্তান জর্জরিত হবে অনাহার ও দারিদ্র্যের একটি স্থায়ী চক্রে।
সূত্র: দ্য ডন।
রাকিব