
ছবি: জনকন্ঠ
নদীবেষ্টিত গাইবান্ধার চার উপজেলার ২৮ ইউনিয়নে চরাঞ্চলের শিশুদের জন্য নেই পর্যাপ্ত স্কুল ও স্বাস্থ্য কেন্দ্রের সুবিধা। পর্যাপ্ত স্কুল না থাকায় থমকে যাচ্ছে শিক্ষার্থীদের লেখাপড়া। শিক্ষা সুযোগ বঞ্চিত হয়ে বাল্য বিবাহসহ নানা সামাজিক বিচ্যুতি ও চরভিত্তিক নানা সংকটে জর্জরিত চরাঞ্চলের শিশুদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন অভিভাবকরা।
জেলার সাঘাটা, ফুলছড়ি, সদর ও সুন্দরগঞ্জ উপজেলার নদীবেষ্টিত ইউনিয়নে ৩ লাখ ৭০ হাজার মানুষ বসবাস করে চরাঞ্চলে। চরকেন্দ্রীক প্রাথমিক ও উপানুষ্ঠানিক প্রাথমিক বিদ্যালয় না থাকায় ইচ্ছে থাকলেও অভিভাবকেরা শিশুদের বিদ্যালয়ে পাঠাতে পারছেন না। নদীভাঙন, বন্যা, দারিদ্রতা, যোগাযোগ সমস্যা, স্থানীয়ভাবে কাজের সুযোগ না থাকায় বিদ্যালয় থেকে শিশু ঝরে পড়ার হার সমতলের চেয়ে চরাঞ্চলে সবচেয়ে বেশি।
এদিকে চরে বসবাসরত শিশুদের বিশাল একটি অংশ অপুষ্টিজনিত শারীরিক নানা জটিলতায় ভুগছে । চরাঞ্চলে পর্যাপ্ত কমিউনিটি ক্লিনিক ও স্বাস্থ্য কেন্দ্র না থাকায় চরবাসীদের দীর্ঘ পথ পাড়ি দিয়ে মুল ভূখন্ডে আসতে হয় ।
গাইবান্ধার কালুরপাড়া চরের রশিদ মোল্লা জানান, নদী ভাঙনে স্ত্রী-সন্তান নিয়ে বিভিন্ন চরে আশ্রয় নেওয়ায় দু’কন্যাকে বিদ্যালয় পাঠাতে পারেনি। অভাব-অনটনের কারণে কাজের জন্য ঢাকায় বাসাবাড়িতে রেখেছেন দু-কন্যা শিশুকে।
ফুলছড়ি উপজেলার কোচখালি চরের মোমেনা বেগম বলেন, আমার চার বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান আছে , পাশের চরে অবস্থিত একটি বেসরকারি এনজিওর স্কুলে পড়াশোনা করছে সে , জানি না কতদূর পর্যন্ত লেখাপড়া শেখাতে পারব ! আমাদের চরে পড়াশোনার কোন ব্যবস্থা নেই। তাই গায়ে (শরীরে) একটু শক্তি হলে বাবা মায়ের সাথে কাজে লেগে যায় শিশুরা ।
একই চরের রফিকুল ইসলাম বলেন, আমারা এখানে প্রকৃতির সাথে যুদ্ধ করে বেঁচে আছি বছরের বেশিরভাগ সময় আমরা যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন থাকি । শহর থেকে চরে যাতায়াত ব্যবস্থা খুব একটা ভালো না । ছেলে মেয়ে হঠাৎ অসুস্থ হয়ে পড়লে ডাক্তার দেখানোর সুবিধাও নেই ।
ফুলছড়ি উপজেলার এড়েন্ডাবাড়ী ইউনিয়নের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক , আবদুস সোবহান বলেন , চরে টিকে থাকতে প্রতিনিয়ত লড়াই করতে হয় । এখানকার অর্থনীতি পুরোপুরি কৃষি নির্ভর হওয়ায় আমাদের প্রকৃতির উপর নির্ভর করতে হয় । চরাঞ্চলের অধিকাংশ অভিভাবক এখন তাদের সন্তানদের শহরমুখী করার চেষ্টা করে শিক্ষা অর্জনের জন্য। তারা আর কেউই চরে থাকতে চায় না ।
সদর উপজেলার কামারজানি ইউনিয়ের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুস সালাম জাকির জানান, নদীভঙানে গত বছর এই চরে ৮০ পরিবার স্থানান্তরিত হয়ে আশ্রয় নিয়েছে। এখানে প্রায় দেড় শতাধিক বিদ্যালয়গামী শিশু আছে কিন্তু কোন শিক্ষা প্রতিষ্ঠান গড়ে ওঠেনি। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা, গণ উন্নয়ন কেন্দ্রের প্রজেক্ট অফিসার (শিক্ষা) আক্কাস আলী আকন্দ জানান, গাইবান্ধার নদী ও চরাঞ্চলের আশপাশের অভিভাবকেরা শিশুদের নিয়ে কাজের সন্ধানে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে যায়-এতে করে বন্ধ হয়ে যায় সন্তানের পড়ালেখা। এজন্য শিক্ষাধারা চলমান রাখতে উপানুষ্ঠানিক বা ব্রীজ স্কুল চালু রাখা প্রয়োজন বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন।
মুমু