
ছবি: সংগৃহীত
২০১৭ সালে দাবার কিংবদন্তি গ্যারি কাসপারভ বলেছিলেন, আধুনিক প্রচারণার উদ্দেশ্য শুধুই বিভ্রান্তি ছড়ানো নয়, বরং সমালোচনাশক্তিকে নিঃশেষ করে সত্যকে ধ্বংস করা। এ কথাটি ভারতের সাম্প্রতিক মিডিয়া আচরণের দিকে তাকালে যেন সত্য প্রমাণিত হয়।
২০২৫ সালের ৭ মে, ভারত যখন পাকিস্তানের আজাদ কাশ্মীরসহ বেসামরিক লক্ষ্যবস্তুতে হামলা চালায়, তখন থেকেই ভারতীয় টেলিভিশন চ্যানেলগুলোতে যুদ্ধ-উন্মাদনা শুরু হয়। তারা পাকিস্তানের ‘জবাবি হামলা’ নিয়ে যা বলেছিল, তার বেশিরভাগই ছিল ভিত্তিহীন এবং কল্পনাপ্রসূত। পাকিস্তান তখনও এমন কোনো হামলার কথা অস্বীকার করছিল।
পরদিন, ভারতীয় মিডিয়ার পক্ষ থেকে দাবি করা হয় যে পাকিস্তান আমৃতসর, লাহোর, এমনকি করাচি ও ইসলামাবাদে হামলা চালিয়েছে, ভারতীয় পতাকা নাকি উত্তোলন হয়েছে পাকিস্তানের রাজধানীতে! বাস্তবে, এসব ঘটনার কোনো প্রমাণ মেলেনি, বরং পাকিস্তানি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেখা যায় সবকিছু স্বাভাবিক রয়েছে।
সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় ছিল ভারতীয় মিডিয়ার মধ্যে প্রতিযোগিতার মাধ্যমে মিথ্যা ও উত্তেজনাকর খবর ছড়ানো। এসব ছিল একপ্রকার যুদ্ধ উস্কে দেওয়ার প্রচেষ্টা, যার কোনও ভিত্তি ছিল না। এরপর পাকিস্তান সত্যিকার জবাব দেয় ৯ মে রাতে এবং তা সরাসরি সম্প্রচারও করে।
এই গোটা ঘটনাপ্রবাহ স্পষ্ট করেছে যে, ভারতের মূলধারার মিডিয়া আজ বাস্তবতা থেকে বিচ্যুত হয়ে গিয়েছে। সরকারপ্রণোদিত প্রচার, ‘গোদি মিডিয়া’ কালচার, ভিন্নমত দমন, এবং জ্ঞানের বদলে আবেগে ভরপুর জাতীয়তাবাদী উন্মাদনা আজ ভারতের মিডিয়াকে গভীর সংকটে ফেলেছে।
মিডিয়ার স্বাধীনতা সীমিত হয়ে পড়েছে, সমালোচনামূলক কণ্ঠস্বর দমন করা হচ্ছে, এবং তথ্যের পরিবর্তে মিথ্যার আধিপত্য চলছে। প্রভীন সওহানির মতো সাবেক সেনা কর্মকর্তা বা রানা ব্যানার্জির মতো গোয়েন্দা কর্মকর্তাদের বাস্তবভিত্তিক বিশ্লেষণও দমন করা হয়েছে।
ভারতের বর্তমান মিডিয়া পরিবেশ শুধু মিথ্যা ছড়াচ্ছে না, বরং তা জনমনে যুদ্ধোন্মাদনা ছড়িয়ে বাস্তবতা বিচার করার ক্ষমতাকেই শেষ করে দিচ্ছে।
সূত্র: https://www.dawn.com/news/1911728/the-madness-of-modis-media
এএইচএ