
ছবিঃ সংগৃহীত
ভারত-পাকিস্তান যুদ্ধে স্পষ্টভাবে দুটি প্রভাবশালী রাষ্ট্রের ভিন্ন ভিন্ন অবস্থান চোখে পড়েছে। মুসলিম বিশ্বের অন্যতম প্রভাবশালী দেশ তুরস্ক প্রকাশ্যে পাকিস্তানের পক্ষে অবস্থান নিয়েছে, অন্যদিকে, আমেরিকার মদদপুষ্ট ইসরাইল ভারতের পক্ষে দাঁড়িয়েছে। এই সংঘাত শুরুর পর, পাকিস্তানে তুর্কি বিমান বাহিনীর একটি সিটি জেট অবতরণ করে এবং করাচি বন্দরে তুরস্কের একটি যুদ্ধজাহাজ নোঙ্গর করে। তুর্কি কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এটি বন্ধুত্বের নিদর্শন হিসেবে পাঠানো হয়েছে। তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রিসেপ তায়েপ এরদোয়ান স্পষ্টভাবে বলেছেন, পাকিস্তানের জনগণ তার ভাইয়ের মতো, এবং তাদের জন্য আল্লাহর কাছে দোয়া করেন।
তুরস্ক পাকিস্তানকে কৌশলগত মিত্র হিসেবে দেখে এবং মুসলিম বিশ্বে পাকিস্তান একমাত্র পারমাণবিক শক্তিধর দেশ হওয়ায় পাকিস্তানের বিশেষ গুরুত্ব রয়েছে। এরদোয়ান পাকিস্তানকে ইসলামী বিশ্বের নেতা হিসেবে প্রতিষ্ঠা করতে চান এবং কাশ্মীর ইস্যুকে ইসলামী ইস্যু হিসেবে তুলে ধরেন। ভারতীয় বিশ্লেষকরা মনে করেন, এ কারণেই তিনি পাকিস্তানের পক্ষে প্রকাশ্যে অবস্থান নিয়েছেন।
এছাড়া, তুরস্কের সামরিক বাজারে আধিপত্য বিস্তারের লক্ষ্যও রয়েছে। ভারত অভিযোগ করেছে, সংঘাতের সময় পাকিস্তান তুরস্কের তৈরি ৩০০ থেকে ৪০০ ড্রোন ব্যবহার করে ভারতের বিভিন্ন শহরে হামলা চালিয়েছে। অন্যদিকে, পাকিস্তান অভিযোগ করেছে যে, ভারত ইসরাইলি ড্রোন দিয়ে পাকিস্তানে হামলা চালিয়েছে এবং তারা ২৫টি ভারতীয় ড্রোন ভূপাতিত করার দাবি করেছে।
ইসরাইলি কৌশলগত বিশ্লেষকরা মনে করেন, হিন্দু এবং ইহুদি ধর্ম একসঙ্গে ইসলাম নির্মূল করার প্রচেষ্টায় কাজ করছে, এমন একটি ন্যারেটিভ আন্তর্জাতিক মহলে ছড়িয়ে পড়েছে। ভারতের প্রাক্তন কূটনীতিক তালমিজ আহমেদ মনে করেন, ভারতের বর্তমান হিন্দুত্ববাদী সরকারের সঙ্গে ইসরাইলের ইহুদি আদর্শের মিল রয়েছে। এর ফলে, দুই দেশের মধ্যে নৈতিক ও কৌশলগত সম্পর্ক ক্রমশ জোরদার হচ্ছে।
ইসরাইল দীর্ঘদিন ধরেই ভারতের প্রধান প্রতিরক্ষা সহযোগী। বিশেষ করে পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার সময়ে ইসরাইলের সহযোগিতা ভারতের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে ওঠে। ইসরাইলি এরোস্পেস ইন্ডাস্ট্রি থেকে ভারত উন্নত ড্রোন, ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং নজরদারী প্রযুক্তি কিনে সেগুলো ব্যবহার করে নিজেদের নজরদারী ও আক্রমণ সক্ষমতা বাড়িয়েছে। এটি ইসরাইলের অর্থনীতির জন্যও লাভজনক। ভারতের বিশাল সামরিক বাজারও ইসরাইলি কোম্পানিগুলোর জন্য আকর্ষণীয় হয়ে উঠেছে।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, ভারত ইসরাইলের মাধ্যমে মধ্যপ্রাচ্যে প্রভাব বিস্তারের সুযোগ পাচ্ছে। তুরস্ক-পাকিস্তান এবং ভারত-ইসরাইলের এই প্রকাশ্য মেলবন্ধন বৈশ্বিক পর্যায়ে প্রভাব ফেলতে পারে এবং এই পরিস্থিতি ভারত ও পাকিস্তানকে কতটা শক্তিশালী করে তুলবে তা নিয়ে এখনই সঠিক সিদ্ধান্তে আসা কঠিন। তবে, প্রকৃত যুদ্ধ শুরুর আগেই যুদ্ধবিরতিতে যেতে হয়েছে চিরশত্রু দেশ দুটিকে। সেই সঙ্গে, এই সংঘাতে কিভাবে কতটা ক্ষতি হয়েছে বা কে কতটা এগিয়ে রয়েছে, সে বিষয়ে কোন পক্ষই এখনও নিশ্চিত নয়।
মারিয়া