ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

লোহিত সাগরে হুথিদের কাছে পরাজিত আমেরিকা, ইসরায়েলের জন্য অশনিসংকেত

প্রকাশিত: ১৮:৫৭, ১২ মে ২০২৫

লোহিত সাগরে হুথিদের কাছে পরাজিত আমেরিকা, ইসরায়েলের জন্য অশনিসংকেত

ছ‌বি: সংগৃহীত

লোহিত সাগরের উত্তাল ঢেউয়ে আজ প্রতিধ্বনিত হচ্ছে হুথি বিদ্রোহীদের শক্তি ও প্রভাব। ২০২৩ সালের অক্টোবরে গাজায় ইসরায়েলি হামলার পর থেকেই রণমঞ্চে পরিণত হয় এই গুরুত্বপূর্ণ জলপথ। ফিলিস্তিনিদের ওপর বর্বরতার প্রতিবাদে ইয়েমেনের হুথি যোদ্ধারা গর্জে ওঠে, আর তাদের সেই প্রতিরোধ আজ বিশ্ব বাণিজ্যপথে এক অদম্য শক্তির নাম।

ইসরায়েলি ও মার্কিন সামরিক এবং বাণিজ্যিক জাহাজ লক্ষ্য করে চালানো ধারাবাহিক হামলায় রীতিমতো অচল হয়ে পড়ে সুয়েজ খালের প্রচলিত রুট। হুথিদের হামলার ভয়ে শত শত জাহাজ দিক পরিবর্তন করে আফ্রিকার দক্ষিণ প্রান্ত ঘুরে দীর্ঘ ও ব্যয়বহুল পথ বেছে নিতে বাধ্য হয়। দুই বছরের মধ্যে এইডেন উপসাগর হয়ে যাতায়াতকারী জাহাজের সংখ্যা কমেছে প্রায় ৭০ শতাংশ।

এই অভূতপূর্ব কৌশলগত সাফল্য হুথিদের এনে দেয় আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ও আতঙ্কমিশ্রিত প্রভাব। ১৮ মাসে তারা ২৫০টিরও বেশি মার্কিন ও ইসরায়েলি জাহাজকে লক্ষ্যবস্তু বানায়। বিশ্ব বাণিজ্যের এই ব্যাঘাত যুক্তরাষ্ট্রকে চাপে ফেলে। শেষ পর্যন্ত হুথিদের সঙ্গে যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় ট্রাম্প প্রশাসন। বিমান হামলা বন্ধের বিনিময়ে হুথিরা বাণিজ্যিক জাহাজে আক্রমণ বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিলেও, ইসরায়েলি জাহাজ ও ভূখণ্ড তাদের আক্রমণের তালিকায় থাকছেই।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই সংঘাত শুধু সামরিক নয়, বরং এটি এক কৌশলগত প্রভাব বিস্তারের অংশ। ইতালির ইন্সটিটিউট ফর ইন্টারন্যাশনাল পলিটিক্যাল স্টাডিজ-এর সিনিয়র গবেষক লিওনোরা আল দেমাগনি মনে করেন, ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রবিরোধী এই হামলাগুলো হুথিদের অভ্যন্তরীণ জনপ্রিয়তা ও সেনা নিয়োগে সহায়ক হয়েছে।

ইয়েমেনের সানাভিত্তিক ধর্মীয় বক্তা আব্দুল করিমের মতে, হুথিদের পথ ছিল সঠিক, এবং এই প্রতিরোধ তাদের জাতীয় মর্যাদা পুনঃপ্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রেখেছে। গাজায় ইসরায়েলি হামলার পাল্টা প্রতিক্রিয়ায় হুথিদের ড্রোন ও ক্ষেপণাস্ত্র হামলা বিশ্বকে দেখিয়ে দিয়েছে তাদের প্রযুক্তি ও কৌশলগত সক্ষমতা।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সালে হুথিদের যোদ্ধার সংখ্যা ছিল ২ লাখ ২০ হাজার, যা ২০২৪ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ লাখ ৫০০-এ। এই বৃদ্ধিই প্রমাণ করে যে, হুথিরা শুধু সামরিকভাবে নয়, সাংগঠনিকভাবেও নিজেদের অবস্থান মজবুত করেছে।

ভিডিও দেখুন: https://www.youtube.com/watch?v=d6eCwHofrLc

এম.কে.

×