ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৯ সেপ্টেম্বর ২০২৪, ৪ আশ্বিন ১৪৩১

গাজায় ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত

ইয়াহিয়া সিনওয়ার হামাস প্রধান

আন্তর্জাতিক ডেস্ক

প্রকাশিত: ২১:০৫, ৭ আগস্ট ২০২৪

ইয়াহিয়া সিনওয়ার হামাস প্রধান

নতুন হামাস প্রধান ইয়াহিয়া সিনওয়ার

ফিলিস্তিনের স্বাধীনতাকামী সংগঠন হামাসের রাজনৈতিক শাখার নতুন প্রধান নিযুক্ত হয়েছেন ইয়াহিয়া সিনওয়ার। বুধবার সংগঠনটি এ ঘোষণা দিয়েছে। এক বিবৃতিতে হামাস জানায়, ইসলামি প্রতিরোধ আন্দোলন হামাস কমান্ডার ইয়াহিয়া সিনওয়ারকে রাজনৈতিক শাখার প্রধান নিযুক্ত করেছে। তিনি শহীদ কমান্ডার ইসমাইল হানিয়ার উত্তরসূরি হলেন।

এদিকে গাজায় ইসরাইলি হামলায় গত ২৪ ঘণ্টায় আরও ৩০ ফিলিস্তিনি নিহত এবং ৬৬ জন আহত হয়েছেন। এতে করে উপত্যকাটিতে নিহতের মোট সংখ্যা ৩৯ হাজার ৬৫০ ছাড়িয়ে গেছে। এ ছাড়া গত বছরের অক্টোবর থেকে চলা এই হামলায় আহত হয়েছেন আরও সাড়ে ৯১ হাজারেরও বেশি ফিলিস্তিনি। খবর বিবিসি ও আলজাজিরার।
গত ৩১ জুলাই ইরানের তেহরানে গুপ্তহত্যার শিকার হন ইসমাইল হানিয়া। ধারণা করা হয়, ইসরাইল তাকে হত্যা করেছে। যদিও এ বিষয়ে কোনো মন্তব্য করেনি দেশটি। নতুন দায়িত্ব নেওয়ার আগ পর্যন্ত যুদ্ধবিধ্বস্ত গাজা উপত্যকায় সিনওয়ার ছিলেন হামাসের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ নেতা। তিনি সংগঠনটির সশস্ত্র শাখার প্রধান ছিলেন। নতুন দায়িত্বের পাশাপাশি সিনওয়ার আগের দায়িত্বও পালন করবেন কি না, তা নিশ্চিত হওয়া যায়নি।

গাজায় ইসরাইলি হামলা শুরুর পর থেকে তাকে প্রকাশ্যে দেখা যায়নি। তবে ধারণা করা হয়, তিনি গাজাতেই আছেন। ৬১ বছর বয়সী সিনওয়ারকে গত ৭ অক্টোবর ইসরাইলের দক্ষিণাঞ্চলে নজিরবিহীন হামলার প্রধান পরিকল্পনাকারী হিসেবে ধরা হয়। ৭ অক্টোবর ইসরাইলের ওপর কয়েক দশকের মধ্যে সবচেয়ে বিধ্বংসী হামলা চালায় হামাস। এই হামলার মূল পরিকল্পনাকারী সিনওয়ার। গাজায় আত্মগোপনে ছিলেন তিনি।

যুদ্ধ শুরুর পর থেকেই তাকে হত্যা প্রচেষ্টা করে আসছে ইসরাইল। মিসর ও কাতারের মধ্যস্থতায় আলোচনার সঙ্গে পরিচিত এক আঞ্চলিক কূটনীতিক বলেন, এই নিয়োগের অর্থ গাজা যুদ্ধের সমাধানের জন্য ইসরাইলকে সিনওয়ারের মুখোমুখি হতে হবে। গাজায় যুদ্ধ বন্ধ করা এবং ১১৫ ইসরাইলি জিম্মিকে নিজ দেশে ফিরিয়ে আনার লক্ষ্যে মধ্যস্থতাকারীরা আলোচনা করছে।

যৌবনের অর্ধেক সময়ই ইসরাইলি কারাগারে কাটিয়েছেন সিনওয়ার। হানিয়াকে হত্যার পর জীবিত থাকা সবচেয়ে শক্তিশালী হামাস নেতা তিনি।  হানিয়া হত্যার পর কঠোর প্রতিশোধ নেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে ইরান। এতে এই অঞ্চলে একটি বৃহত্তর আঞ্চলিক সংঘাতের ঝুঁকি আরও তীব্র হয়ে উঠেছে। তবে এই হত্যার দায় স্বীকার করেনি ইসরাইল। তারা বলেছে, সেনারা বৈরুতে নিহত হামাসের ডেপুটি লিডার সালেহ আল-আরোরি এবং হামাসের সামরিক কমান্ডার মোহাম্মদ দেইফসহ অন্যান্য সিনিয়র নেতাদের হত্যা করেছে।
গাজায় অনেক মানুষ এখনো ধ্বংসস্তূপের নিচে এবং রাস্তায় আটকা পড়ে আছেন কারণ উদ্ধারকারীরা তাদের কাছে পৌঁছাতে পারছেন না। ফিলিস্তিনি স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ মনে করছে, গাজা উপত্যকাজুড়ে ধ্বংস হওয়া বাড়ির ধ্বংসস্তূপের নিচে এখনো ১০ হাজারেরও বেশি লোক নিখোঁজ রয়েছেন। মূলত গাজায় অবিলম্বে যুদ্ধবিরতির দাবি জানিয়ে জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদের প্রস্তাব সত্ত্বেও ইসরাইল অবরুদ্ধ এই ভূখ-ে তার নৃশংস আক্রমণ অব্যাহত রেখেছে। উল্লেখ্য, গত ৭ অক্টোবর হামাসের নজিরবিহীন আন্তঃসীমান্ত হামলার পর থেকে ইসরাইল গাজা উপত্যকায় অবিরাম বিমান ও স্থল হামলা চালিয়ে যাচ্ছে।
ইসরাইলি এই হামলায় হাসপাতাল, স্কুল, শরণার্থী শিবির, মসজিদ, গির্জাসহ হাজার হাজার ভবন ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। এছাড়া ইসরাইলি আগ্রাসনের কারণে প্রায় ২০ লাখেরও বেশি বাসিন্দা তাদের বাড়িঘর ছাড়তে বাধ্য হয়েছেন। মূলত ইসরাইলি আক্রমণ গাজাকে ধ্বংসস্তূপে পরিণত করেছে। জাতিসংঘের মতে, ইসরাইলের বর্বর হামলার কারণে গাজার প্রায় ৮৫ শতাংশ ফিলিস্তিনি বাস্তুচ্যুত হয়েছেন।

আর খাদ্য, বিশুদ্ধ পানি এবং ওষুধের তীব্র সংকটের মধ্যে গাজার সকলেই এখন খাদ্য নিরাপত্তাহীন অবস্থার মধ্যে রয়েছেন। এ ছাড়া অবরুদ্ধ এই ভূখ-ের ৬০ শতাংশ অবকাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত বা ধ্বংস হয়ে গেছে। ইসরাইল ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক বিচার আদালতে গণহত্যার অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছে।

×