
ফিলিস্তিনিদের ওপর ইসরাইলের বর্বরোচিত হামলা ও গণহত্যার প্রতিবাদে বুধবার টিএসসি রাজু ভাস্কর্যের সামনে ঢাবি শিক্ষার্থীরা বিক্ষোভ করে
ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা উপত্যকায় সশস্ত্র হামাস ও ইসরাইলের মধ্যকার যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও বাড়তে পারে বলে আশা করা হচ্ছে। বুধবার ইসরাইলি সরকারের এক মুখপাত্র যুদ্ধবিরতি বাড়ার ইঙ্গিত দিয়ে বলেছেন, চলমান জিম্মি ও বন্দি বিনিময় চুক্তির আওতায় যুদ্ধবিরতি আরও পাঁচদিন বাড়ানোর সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। এদিকে অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিচ্ছিন্নতা বা পৃথকীকরণ প্রত্যাখ্যান করেছে জর্দান। একইসঙ্গে এই দুটি অঞ্চলই ‘একক ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্প্রসারণ’ বলেও জানিয়ে দিয়েছে দেশটি। যুদ্ধবিরতি কার্যকর থাকলেও হত্যা বন্ধ করেনি ইসরাইলি বাহিনী। বুধবারও পশ্চিম তীরে তারা দুই ফিলিস্তিনি শিশুকে হত্যা করেছে। খবর বিবিসি, এএফপি ও আলজাজিরার।
গত ৭ অক্টোবর গাজায় সংঘাত শুরুর ৪৮ দিন পর যুদ্ধবিরতিতে সম্মত হয় হামাস ও ইসরাইল। চুক্তি অনুযায়ী, গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া যুদ্ধবিরতির চারদিনে ৫০ ইসরাইলি জিম্মিকে মুক্তি দেবে হামাস। বিনিময়ে ১৫০ ফিলিস্তিনি কারাবন্দিকে ছাড়বে দখলদার ইসরাইল। একইসঙ্গে যুদ্ধবিরতির দিনগুলোয় গাজায় হামলা বন্ধ রাখা হবে। সেখানে ত্রাণ প্রবেশেও কোনো বাধা দেওয়া হবে না। চারদিনের শেষ দিন আরও দুই দিনের জন্য যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে আগ্রহী হয় দুই দেশ। বুধবার বাড়ানো দুই দিনের শেষদিন চলে। বৃহস্পতিবার নতুন করে আবার দেশ দুটি যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়াতে রাজি হতে পারে। গাজার মানুষ তাদের প্রিয়জনের সন্ধানের জন্য এ যুদ্ধবিরতির সুযোগকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করছে।
হামাস কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, প্রায় দেড় হাজার মানুষ গাজায় এখনো নিখোঁজ আছে এবং ইসরাইলের সামরিক অভিযানে মারা গেছেন ১৫ হাজারের বেশি মানুষ। চুক্তি মোতাবেক হামাস যদি প্রতিদিন ১০ জন করে জিম্মি মুক্তি দেয় তাহলে ইসরাইল যুদ্ধবিরতির মেয়াদ বাড়তে পারে। হামাসের হাতে এখন বন্দি থাকা নারী ও শিশুর সংখ্যা কম বলে পুরুষদের মুক্তির জন্য যুদ্ধবিরতির মেয়াদ আরও বাড়ানো হতে পারে।
ফিলিস্তিনের স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, অধিকৃত পশ্চিম তীরের জেনিনে ইসরাইলি বাহিনীর গুলিতে নিহত দুই শিশুর মধ্যে একজনের বয়স ৯ বছর। তাকে মাথায় গুলি করেছে ইসরাইলি বাহিনী। এছাড়া ১৫ বছরের এক শিশুর বুকে গুলি করা হয়। এ ছাড়াও আদ-দামজ পাড়ায় হামলা চালায় সেনারা। সেখানকার বাসিন্দাদের বন্দুকের মুখে তারা বাড়ি ছাড়া করেছে। আশপাশের রাস্তাগুলোও ধ্বংস করে দিয়েছে ইসাইলি সেনারা।
এদিকে জর্ডানের বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ গাজা উপত্যকা থেকে পশ্চিম তীরকে আলাদা করার যে কোনো প্রচেষ্টাকে তার দেশের প্রত্যাখ্যানের কথা পুনর্ব্যক্ত করেছেন। ফিলিস্তিনের অবরুদ্ধ গাজা ভূখণ্ড থেকে অধিকৃত পশ্চিম তীরের বিচ্ছিন্নতা বা পৃথকীকরণ প্রত্যাখ্যান করেছে জর্ডান। কমিটি অন দ্য এক্সারসাইজ অব দ্য ইনঅ্যালাইনেবল রাইটস অব দ্য প্যালেস্টানিয়ান পিপল (সিইআইআরপিপি)-এর প্রধানের কাছে পাঠানো এক বার্তায় পশ্চিম তীর এবং গাজা উভয়ই ‘ফিলিস্তিনি রাষ্ট্রের সম্প্রসারণ’ বলেও নিশ্চিত করেছেন বাদশাহ দ্বিতীয় আবদুল্লাহ।
এই কমিটির কাছে পাঠানো বার্তায় তিনি আরও বলেন, ‘সকল ঐশ্বরিক ধর্মের মূল্যবোধের পাশাপাশি আমাদের সাধারণ মানবিক মূল্যবোধও বেসামরিক লোকদের হত্যা করাকে স্বীকৃতি দেয় না।’ তিনি উল্লেখ করেন, ‘পশ্চিম তীর এবং গাজা উপত্যকায় ইসরাইলের আগ্রাসন আন্তর্জাতিক মানবিক আইনকে লঙ্ঘন করেছে এবং এটি এই অঞ্চল ও বিশ্বে আরও সহিংসতা ও ধ্বংসের সূচনা করবে।’
হামাস ও ইসরাইলের সম্মতিতে যুদ্ধবিরতির প্রথম চারদিনে ইসরাইল ১৫০ ফিলিস্তিনি বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। এই সময়ের মধ্যেই নতুন করে ১৩৩ ফিলিস্তিনিকে গ্রেপ্তার করেছে ইসরাইল। গত শুক্রবার থেকে শুরু হওয়া ইসরাইল ও হামাসের মধ্যে চলমান যুদ্ধবিরতির প্রথম চারদিনে ইসরাইল মুক্তি দিয়েছে ১১৭ শিশু এবং ৩৩ জন নারী। এছাড়া হামাস ৬৯ বন্দিকে মুক্তি দিয়েছে। এর মধ্যে ৫১ জন ইসরাইলি এবং ১৮ জন অন্যান্য দেশের। অবরুদ্ধ গাজায় ৫১ দিনের নিরলস হামলা চালিয়েছে ইসরাইল। হাজার হাজার ভবন ধ্বংস করেছে। হাজার হাজার শিশু ও নারীকে হত্যা করা হয়েছে। এরপর কাতারের মধ্যস্থতায় শুক্রবার থেকে শুরুতে চারদিনের যুদ্ধবিরতি শুরু হয়।