
ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ
সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে সব ধরনের মাছ শিকার নিষিদ্ধ করেছে সরকার। এ নিষেধাজ্ঞার ২৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনও উপকূলীয় উপজেলা আমতলী-তালতলীর নিবন্ধিত ১৫ হাজার ৭’শ ৯৯ জেলে সরকারি সহায়তা পায়নি। এতে তারা মানবেতর জীবন যাপন করছে। দ্রুত তাদের জন্য বরাদ্দকৃত সহায়তার চাল বিতরণের দাবি জানিয়েছেন তারা।
জানা গেছে, সামুদ্রিক জলসীমায় মাছের সুষ্ঠু প্রজনন, উৎপাদন, সামুদ্রিক মৎস্য সম্পদ সংরক্ষণ ও টেকসই মৎস্য আহরণের জন্য সমুদ্রে ১৫ এপ্রিল থেকে ১১ জুন পর্যন্ত ৫৮ দিন সকল প্রকার মৎস্য নৌযান কর্তৃক যে কোন প্রজাতির মৎস্য আহরণ নিষিদ্ধ করেছে সরকার। গত বছর এ নিষেধাজ্ঞা ছিল ২০ মে থেকে ২৩ জুলাই পর্যন্ত ৬৫ দিন। কিন্তু জেলেদের দাবির প্রেক্ষিতে এ বছর ভারতের সঙ্গে মিল রেখে ৫৮ দিনের নিষেধাজ্ঞা দিয়েছেন সরকার। এই সময় জেলেদের জন্য সরকার বিশেষ সহায়তার চাল বরাদ্দ দিয়ে থাকেন। কিন্তু নিষেধাজ্ঞার ২৫ দিন পেরিয়ে গেলেও উপকলীয় অঞ্চল আমতলী-তালতলীর ১৫ হাজার ৭’শ ৯৯ নিবন্ধিত জেলে সহায়তা পায়নি। এতে জেলেরা মানবেতর জীবন যাপন করছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ বছর জেলেদের ৪২ দিনের জন্য ৫৬ কেজি চাল বরাদ্দ করেছেন সরকার। কিন্তু এখন পর্যন্ত ওই বরাদ্দের চাল উপজেলা পর্যায় পৌঁছেনি। এতে জেলেদের চাল পেতে অরো সপ্তাহখানেক বিলম্ব হবে বলে উপজেলা মৎস্য অফিস সূত্রে জানা গেছে। অবশিষ্ট ১৬ দিনের চালের বরাদ্দের চিঠি এখনো আসেনি।
জেলেদের অভিযোগ, বছরজুড়ে নিষেধাজ্ঞা চলাকালে সরকার নামমাত্র চাল সহায়তা দিলেও তা অধিকাংশ জেলে পান না। অনেকে জেলে নন, কিন্তু রাজনৈতিক বিবেচনায় তাঁরাও এ সহায়তার চাল পেয়ে থাকেন। এতে প্রকৃত জেলেরা বঞ্চিত হন। এ বছর নিষেধাজ্ঞার ২৫ দিন পার হলে এখনো চাল পায়নি তারা।
শনিবার সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, নিষেধাজ্ঞার আগে ফিশিং বোট নিয়ে উপজেলার ফকিরহাট উপ-মৎস্য অবতরণ কেন্দ্রের ঘাটে এসেছেন জেলেরা। ঘাটে নোঙর করে রাখা হয়েছে শত শত নৌকা-ট্রলার। ঘাটে নেই হাঁকডাক-কোলাহল। জেলেদের মধ্যে কেউ জাল বুনছেন আবার কেউ ঘাটে অলস সময় পার করছেন। কেউ আবার ট্রলার মেরামতে ব্যস্ত সময় পার করছেন।
উপজেলার তেঁতুলবাড়িয়া এলাকায় অসহায় জেলে মো. আলমগীর হাওলাদার ও সবুজ মিয়া বলেন, এ বছর ভারতের সঙ্গে মিল রেখে অবরোধ দেওয়ায় আমরা খুশি হলেও চাল পাইনি। প্রতি বছর অবরোধের পর পরই চাল দেয় কিন্তু এ বছর দীর্ঘদিন পার হলেও চাল পায়নি। অবরোধের সময় আমাদের বিকল্প কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা নেই। তাই এখন অভাব-অনটনের মধ্যে দিয়ে আমাদের পরিবার নিয়ে দিন কাটছে।
আমতলী উপজেলার লোচা গ্রামের জেলে শহীদ মিয়া বলেন, ‘অবরোধের ২৫ দিন পেরিয়ে গেলেও এখনো চাল পায়নি। এতে পরিবার পরিজন নিয়ে বেশ কষ্টে দিন কাটছে।’
তালতরীর ফকিরহাট অবতরণ কেন্দ্রের আড়তদার ও এফবি বিসমিল্লাহ ট্রলার মালিক মো. টুকু সিকদার বলেন, ‘আমার ট্রলারে ১০ জন স্টাফ আছে, তারা অনেকেই ব্যাংকের ঋণে জর্জড়িত। মাছ ধরে তারপর ঋণ পরিশোধ করে। এখন সাগরে অবরোধ থাকায় তারা ঋণের টাকা পরিশোধ করতে না পেরে দিশাহারা হয়ে পড়েছে। সরকারি বরাদ্দের চাল না পাওয়ায় তাদের কষ্ট আরো বেশী হচ্ছে। দ্রুত চাল দিলে তাদের কষ্ট কিছুটা লাঘব হতো।’
তালতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা ভিক্টর বাইন বলেন, ‘নিষেধাজ্ঞা সফলভাবে বাস্তবায়নে আমরা মাঠপর্যায়ে কাজ করছি। এ বছরের বরাদ্দ এখনো আমরা পাইনি।’
আমতলী উপজেলা সিনিয়র মৎস্য কর্মকর্তা তন্ময় কুমার দাশ বলেন, ‘জেলেদের বিশেষ বরাদ্দের চালের চিঠি পেয়েছি। তাতে ৪২ দিনের জন্য ৫৬ কেজি চাল জেলে প্রতি বরাদ্দ হয়েছে। তবে ওই চাল পেতে আরো সপ্তাহ খানের সময় লাগবে।’
তালতলী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) উম্মে সালমা বলেন, ‘বরাদ্দের চাল আসা মাত্রই জেলেদের মাঝে বিতরণ করা হবে।’ বরগুনা জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ সফিউল আলম বলেন, ‘গত বৃহস্পতিবার জেলেদের চাল বরাদ্দের চিঠি পেয়েছি। আগামী সপ্তাহে চাল বিতরণ করতে পারবো।’
মিরাজ খান