ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ২৬ মে ২০২৫, ১২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

মিডিয়ার ভুলে বিপাকে: সন্ত্রাসী অপবাদে ভেঙে পড়ল কাশ্মীরি পরিবার

প্রকাশিত: ০৭:৫৬, ২৬ মে ২০২৫

মিডিয়ার ভুলে বিপাকে: সন্ত্রাসী অপবাদে ভেঙে পড়ল কাশ্মীরি পরিবার

ছবিঃ মোহাম্মদ ইকবাল ৭ মে ভারত প্রশাসিত কাশ্মীরে সীমান্ত পার গুলিবর্ষণে নিহত হন।

কাশ্মীরের পুনছ শহরের বাসিন্দা মোহাম্মদ ইকবাল ৭ মে ভারত-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে সীমান্তবর্তী গোলাবর্ষণে নিহত হন। তার ভাই ফারুক আহমেদ আজও ক্ষোভে ফেটে পড়েন ইকবালের মৃত্যু এবং এরপর ঘটে যাওয়া ঘটনাগুলি নিয়ে।

ভারতের পাহেলগাঁও শহরে ২৬ জন নিহত হওয়ার ঘটনার প্রতিক্রিয়ায় ভারত পাকিস্তান ও পাকিস্তান-নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরে বিমান হামলা চালায়। তার ঠিক পরদিন সকালে ইকবাল সীমান্তে গোলার আঘাতে নিহত হন। পাকিস্তান এই হামলায় জড়িত থাকার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।

ইকবাল দীর্ঘ দুই দশক ধরে পুনছ শহরের একটি মাদ্রাসা — জিয়া-উল-উলুম — এ শিক্ষকতা করতেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পরই পরিবারের দুর্ভোগ আরও বেড়ে যায়। একাধিক সংবাদমাধ্যম ভুলভাবে দাবি করে বসে যে ইকবাল একজন সন্ত্রাসী। পরে পুলিশ সেই দাবি খারিজ করে দেয়।

“আমার ভাই ছিলেন একজন শিক্ষক, কিন্তু তার দাড়ি ও টুপি দেখে তাকে সন্ত্রাসী বলে অপবাদ দিল মিডিয়া,” বললেন ভাই ফারুক আহমেদ।
“আমরা একদিকে ভাইকে হারালাম, আর অন্যদিকে মিডিয়া আমাদের ক্ষতে নুনের ছিটা দিল।”

ভারতীয় কর্মকর্তাদের মতে, ভারত ও পাকিস্তানের চার দিনের সংঘর্ষে মোট ১৬ জন মারা গেছেন, যাদের মধ্যে একজন ছিলেন ইকবাল। পাকিস্তান দাবি করেছে, এ হামলায় তাদের ৪০ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছে, যদিও প্রকৃত সংখ্যা এখনো স্পষ্ট নয়।

ভারত ও পাকিস্তান উভয় দেশই কাশ্মীর অঞ্চল সম্পূর্ণরূপে নিজেদের দাবি করে। স্বাধীনতার পর ১৯৪৭ সাল থেকে দু’দেশ তিনটি যুদ্ধ করেছে, এবং চলতি মাসেই ফের যুদ্ধের মুখোমুখি হওয়ার উপক্রম হয়েছিল।

যুদ্ধের মধ্যেই সোশ্যাল মিডিয়া ও কিছু টিভি চ্যানেলে শুরু হয়েছিল ভুল তথ্যের প্রচার। ইকবালকে ঘিরে ছড়ানো ভুয়ো খবর ছাড়াও কিছু মিডিয়াতে এমন দাবিও উঠে আসে যে ভারত পাকিস্তানের করাচি বন্দর ধ্বংস করেছে — যা ভারত সরকারই পরে মিথ্যা বলে জানায়। এমনকি একটি এআই জেনারেট করা ভিডিওতেও একটি পাকিস্তানি সেনা জেনারেলকে বলতে দেখা যায় যে দুটি পাকিস্তানি বিমান ধ্বংস হয়েছে।

ইকবালের ভাই বলেন, “আমি জানি না তারা কোথা থেকে এই তথ্য পেল যে আমার ভাই সন্ত্রাসী। কে বলল এসব? তাদের কী প্রমাণ ছিল?”

একটি জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলের ভিডিওতে দেখানো হয় যে ভারতীয় সেনা একটি সন্ত্রাসী ক্যাম্পে আঘাত হানে এবং সেখানে নিহত হয় ইকবাল, যিনি নাকি পাকিস্তানভিত্তিক সন্ত্রাসী সংগঠন লস্কর-ই-তৈবার সদস্য।


৮ মে পুনছ পুলিশ বিবৃতি দিয়ে জানায়, “মাওলানা মোহাম্মদ ইকবাল ছিলেন একজন সম্মানিত ধর্মীয় শিক্ষক, এবং তার কোনো সন্ত্রাসবাদী সংগঠনের সঙ্গে সম্পৃক্ততা ছিল না।” তারা আরও জানায়, যারা ভুয়ো খবর ছড়িয়েছে তাদের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

তবে ফারুক বলেন, “ততক্ষণে তো কোটি কোটি মানুষ মিথ্যা খবর দেখে ফেলেছে।”

আইনি পদক্ষেপ নিতে চান ফারুক, কিন্তু পরিবারের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির কারণে সেটি আপাতত স্থগিত। ইকবাল রেখে গেছেন দুই স্ত্রী ও আট সন্তানকে। তিনিই ছিলেন পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। সরকার থেকে যে ক্ষতিপূরণ মিলেছে, তা এক-দু’বছরের বেশি চলবে না বলেও জানান ফারুক।

সূত্রঃ বিবিসি 

নোভা

×