
.
ছেলেদের পেশাবের রাস্তা বললেই প্রাসঙ্গিকভাবে আলোচনায় আসে শিশ্ন। শিশু চিকিৎসকের কাছে এই দুটি সমস্যা নিয়েই ছেলে শিশুর উদ্বিগ্ন অভিভাবক এসে থাকেন। কিছু গুরুত্বপূর্ণ সমস্যা এখানে উল্লেখ করছি।
১। পেশাবের ছিদ্রের অবস্থানের ত্রুটি : স্বাভাবিকভাবে মূত্রনালী শিশ্নের মাঝামাঝি বরাবর ছিদ্রে শেষ হয়। ত্রুটিযুক্ত হলে এই ছিদ্র শিশ্নের নিচের দিকে (হাইপোস্পেডিয়াস) বা উপরের দিকে (এপিস্পেডিয়াস) এসে প্রকাশ পেতে পারে। প্রায়ই এদের সঙ্গে অন্যান্য সমস্যা দেখা যায়। শিশ্নের আকার ছোট আর বাঁকা হয়ে নিচের দিকে টানটান সূতার (কর্ডি) মতো অংশ দেখা যায়। অনেকেরই লিঙ্গ নির্ধারণে সমস্যা, মলদ্বারের সমস্যাও থাকতে পারে। দুর্লভ কিছু শিশুদের পেটের মাংসপেশী দুর্বল থেকে পেশাবের থলি বা অন্যান্য অভ্যন্তরের অঙ্গ বাইরে বের হয়ে থাকতে পারে। অন্ডকোষ থলিতে না থেকে পেটে রয়ে গেছে কিনা সেটা দেখতে হয় ভালো করে।
শল্যচিকিৎসা করে এই ত্রুটি সারানো হয়। মনে রাখতে হবে, এসবক্ষেত্রে খৎনা করা যাবে না। শরীরের অন্য কোথাও সমস্যা রয়ে গেছে কিনা সেটা বের করা চিকিৎসকের জন্য চ্যালেঞ্জ হয়ে দেখা দেয়।
২। কর্ডিঃ হাইপোস্পেডিয়াস ছাড়াও কর্ডি হতে পারে। এসব শিশ্নের মাথার আলগা চামড়া ‘হুড’হয়ে ফুলে থাকে। অনেকসময় মূত্রনালি শল্য চিকিৎসা করে সঠিক আকারে আনতে হয়।
৩। ফাইমোসিস এবং প্যরাফাইমোসিসঃ শিশ্নের আগার চামড়া অনেক সময় এমনভাবে থেকে যায় যে পেশাবের সময় ছিদ্র ঠিকমতো ফুটে না। ছিদ্র প্রায় বন্ধ বা চামড়া পিছনে টানা না গেলে ফাইমোসিস বলা হয়। জন্মের সময় স্বাভাবিক ভাবেই ফাইমোসিস থাকতে পারে। খৎনা না করলেও ৮০ ভাগ বাচ্চার এই সমস্যা ৩ বছরের মধ্যে ঠিক হতে পারে। হাইড্রোকরটিসোন জাতীয় মলম (যেমন টপিকরট) চামড়া আলগা করে থাকে। তবে এরপরেও খৎনা করে ফেলা উত্তম।
প্যরাফাইমোসিস হচ্ছে ঠিক উল্টো সমস্যা। অর্থাৎ আলগা চামড়া এমনিতেই পিছনে এসে আটকে ফুলে থাকে। একে টেনে সামনে আনা যায় না। অনেকসময় রক্ত জমে তীব্র ব্যথা হলে পূর্ণ অজ্ঞান করে খৎনা করাও লাগতে পারে।
৪। প্যাঁচ লাগা শিশ্ন : অনেক সময় খৎনা করার সময় এটি ধরা পড়ে। সঙ্গে হাইপোস্পেডিয়াস না থাকলে এটি তেমন সমস্যা করে না।
৫। অতিক্ষুদ্র শিশ্ন বয়সের সঙ্গে শিশ্নের আকারের একটি বিশেষ গ্রোথ চার্ট আছে। সেই চার্টের সঙ্গে মিলিয়ে (২.৫ এসডি’র নিচে) মন্তব্য করতে হয় শিশ্ন অতিক্ষুদ্র কিনা। এছাড়া অনেকসময় অন্ডথলির চামড়ার নিচে শিশ্ন ঢাকা পড়ে যায়। আবার অনেকের তলপেটের অতিরিক্ত চর্বি কিংবা খৎনার পরে শিশ্ন খুব ছোট দেখায়। চিকিৎসককে কয়েকটি বিষয় নিয়ে ভাবতে হয়। এটি হরমোনজনিত কোন রোগের জন্য কিনা, লিঙ্গ নির্ধারণে কোন সন্দেহের কারণ আছে কিনা আর পরবর্তীতে সন্তান উৎপাদনে কোন সমস্যা করবে কিনা। স্থূল শিশুদের অভিভাবককে তাই শিশুর ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখতে বলা খুব জরুরী।
৬। শিশ্ন দাঁড়িয়ে থাকা (প্রায়াপিজম): যৌন উত্তেজনা ছাড়াই দীর্ঘসময় (৪ ঘণ্টা বা এর অধিক) শিশ্ন দাঁড়িয়ে থাকলে বেশ কিছু অসুখের নির্দেশ করে। এদের মধ্যে সিকল সেল ডিজিজ নামে একটি রক্তরোগ খুব গুরুত্বপূর্ণ।
৭। মিয়েটাল স্টেনোসিস: নবজাতক শিশুর কিংবা অনভিজ্ঞ হাতে খৎনার পরে অনেক সময় ছিদ্র খুব ছোট হয়ে বিন্দুর মতো সরু হয়ে যেতে পারে। খুব কষ্ট করে অতিসরু নালি দিয়ে পেশাব বের হয়। এর চিকিৎসায় শল্য ব্যবস্থা নিতে হয়। পেশাবের রাস্তা আর শিশ্নের এসব সমস্যার আরেকটি দিক হচ্ছে এদের সঙ্গে কিডনির সম্পর্ক খুব ঘনিষ্ঠ। অনেক সময় অবহেলায়, সংক্রমণে কিডনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। আবার এদের কিছু সমস্যায় কিডনি আদৌ জন্মগতভাবে সঠিকভাবে কাজ করছে কিনা সেটাও বের করতে হয়। চিকিৎসককেও এক্ষেত্রে হতে হয় সতর্ক এবং চৌকস।
মাতুয়াইল, ঢাকা
০১৯১২২৪২১৬৮
প্যানেল