
ছবিঃ সংগৃহীত
কোভিড-পরবর্তী সময়ে যখন মানুষ ধীরে ধীরে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে, ঠিক তখনই নতুন করে উদ্বেগ তৈরি করেছে এক ভয়াবহ ছত্রাক—‘অ্যাসপারজিলাস’। যুক্তরাষ্ট্রজুড়ে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই ছত্রাককে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা (WHO) ইতোমধ্যেই ‘মারণ ছত্রাক’-এর তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করেছে।
মারণ ছত্রাক ‘অ্যাসপারজিলাস ফিউমিগেটাস’
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের নিউ ইয়র্ক, লস অ্যাঞ্জেলস, ফ্লোরিডা, টেক্সাস, জর্জিয়া এবং ক্যালিফোর্নিয়াসহ বিভিন্ন রাজ্যে ‘অ্যাসপারজিলাস ফিউমিগেটাস’ নামের ছত্রাকে আক্রান্ত হয়েছেন বহু মানুষ। শুধু আমেরিকা নয়, এই ছত্রাকের সংক্রমণ এর আগেও ভারতসহ দক্ষিণ এশিয়ার বিভিন্ন দেশে দেখা গেছে। বাংলাদেশেও ঝুঁকি উড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না।
এই ছত্রাকের কারণে যে রোগ ছড়ায় তার নাম ‘অ্যাসপারজিলোসিস’। এটি ফুসফুসে আঘাত হানে এবং রোগীদের মারাত্মক শ্বাসকষ্টে ভুগতে হয়। বিশেষ করে হাঁপানি, সিওপিডি বা দুর্বল রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতাসম্পন্ন ব্যক্তিরা এই রোগে বেশি আক্রান্ত হন।
কীভাবে ছড়ায় এই ছত্রাক?
উষ্ণ ও আর্দ্র পরিবেশে অ্যাসপারজিলাসের বিস্তার বেশি হয়। ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস বা তার ওপরে তাপমাত্রা এবং অতিরিক্ত আর্দ্রতা থাকলে এই ছত্রাকের বিস্তার অত্যন্ত দ্রুত ঘটে। ছত্রাকটি ‘কোনিডিয়া’ নামে ক্ষুদ্র রেণু ছড়িয়ে দেয়, যা বাতাসে ভেসে বেড়ায় এবং শ্বাসের মাধ্যমে সহজেই মানুষের শরীরে প্রবেশ করে। একবার ফুসফুসে প্রবেশ করলে এটি দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে এবং ভয়াবহ শ্বাসকষ্টের সৃষ্টি করে।
কোন অঙ্গে আঘাত করে?
ন্যাশনাল লাইব্রেরি অফ মেডিসিনের তথ্য অনুসারে, অ্যাসপারজিলাস শুধু ফুসফুস নয়, হার্ট, কিডনি এমনকি মস্তিষ্কেও সংক্রমণ ঘটাতে পারে। এর প্রভাবে রোগীর প্রাণহানিও ঘটতে পারে। হাঁপানি রোগীদের মধ্যে একটি বিশেষ ধরনের সংক্রমণ দেখা যায়, যার নাম ‘অ্যালার্জিক ব্রঙ্কোপালমোনারি অ্যাসপারজিলোসিস’। এতে প্রথমে ফুসফুস আক্রান্ত হয় এবং পরে তা ছড়িয়ে পড়ে শরীরের অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গে।
কীভাবে প্রতিরোধ সম্ভব?
চিকিৎসক ও গবেষকরা বলছেন, এই ছত্রাক প্রতিরোধে মাস্ক পরার অভ্যাস জরুরি। বিশেষ করে যেসব এলাকায় ধুলাবালি, ধোঁয়া বা গাছপালা বেশি, সেখানে মাস্ক ব্যবহার বাধ্যতামূলক করা উচিত। যারা বাগান করেন বা ভিজে মাটির সঙ্গে বেশি কাজ করেন, তাঁদের জন্য এটি আরও বেশি গুরুত্বপূর্ণ। মাটির ভেতরেও থাকে এই ছত্রাকের রেণু। তাই ঘরের আশপাশ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা, জীবাণুনাশক স্প্রে ব্যবহার করা এবং ঘরের বাতাস বিশুদ্ধ রাখা অত্যন্ত জরুরি।
বিশেষজ্ঞদের মতে, সচেতনতা ও ব্যক্তিগত সুরক্ষা ব্যবস্থা গ্রহণই এই ভয়ংকর ছত্রাক থেকে বাঁচার একমাত্র পথ।
ইমরান