
ছবি: সংগৃহীত
বর্তমান ব্যস্ত জীবনে অনিয়মিত খাদ্যাভ্যাস, শারীরিক পরিশ্রমের অভাব ও অতিরিক্ত ওজন আমাদের দেহে নানা ধরনের রোগ ডেকে আনছে। এরই মধ্যে অন্যতম একটি ভয়ংকর স্বাস্থ্য সমস্যা হলো লিভারে চর্বি জমা—যা ‘ফ্যাটি লিভার’ নামে পরিচিত। প্রথমে এটি তেমন কোনো উপসর্গ তৈরি না করলেও ধীরে ধীরে তা মারাত্মক জটিলতার দিকে ধাবিত করে। তাই সময় থাকতেই সচেতন হওয়া জরুরি।
ফ্যাটি লিভার কী?
যখন লিভারে স্বাভাবিকের চেয়ে বেশি চর্বি জমা হতে থাকে, তখন তাকে ‘ফ্যাটি লিভার’ বলা হয়। সাধারণত দুই ধরনের ফ্যাটি লিভার দেখা যায়:
* অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (AFLD) – মদ্যপানের কারণে হয়ে থাকে।
* নন-অ্যালকোহলিক ফ্যাটি লিভার ডিজিজ (NAFLD) – যারা মদ্যপান করেন না, তাদের মধ্যেও দেখা যায় এই রোগ।
চর্বি জমলে কী সমস্যা হতে পারে?
লিভার মানবদেহের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। এটি রক্ত পরিশোধন, হরমোন ভারসাম্য রক্ষা ও পুষ্টি সংরক্ষণের কাজ করে। কিন্তু চর্বি জমে গেলে লিভারের স্বাভাবিক কার্যক্ষমতা বাধাগ্রস্ত হয়।
বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক ডা. মো. আসিফ মাহমুদ, হেপাটোলজিস্ট, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএমএমইউ), বলেন—
“প্রথমদিকে ফ্যাটি লিভারে কোনো উপসর্গ দেখা না গেলেও সময়ের সাথে সাথে এটি লিভার ইনফ্লেমেশন, সিরোসিস এমনকি লিভার ক্যানসারের মতো জটিল রোগের দিকে নিয়ে যেতে পারে। রোগীরা ক্লান্তি, পেটের ডান পাশে ভার লাগা, অরুচি ও ওজন কমার সমস্যায় ভুগতে পারেন।”
কারা বেশি ঝুঁকিতে আছেন?
* যাদের ওজন বেশি বা স্থূলতা রয়েছে
* ডায়াবেটিস বা ইনসুলিন রেজিস্ট্যান্সে ভুগছেন
* উচ্চ রক্তচাপ ও কোলেস্টেরলের সমস্যা আছে
* অনিয়মিত খাবার খাওয়ার অভ্যাস
* শারীরিক পরিশ্রম একেবারে না করা
* অতিরিক্ত চিনি বা ফাস্টফুড গ্রহণ
ফ্যাটি লিভার প্রতিরোধে যা করণীয়
* স্বাস্থ্যকর ও সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তোলা
* প্রতিদিন অন্তত ৩০ মিনিট ব্যায়াম করা
* ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা
* অ্যালকোহল থেকে বিরত থাকা
* নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো
* ডাক্তারের পরামর্শ ছাড়া কোনো ওষুধ না খাওয়া
শেষ কথা
লিভার নীরবে কাজ করে যায়—যতক্ষণ না সে একেবারে বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। তাই উপসর্গ না থাকলেও নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষা, সচেতন জীবনযাপন এবং সময়মতো চিকিৎসা নেওয়ার মাধ্যমে এই নীরব ঘাতক ফ্যাটি লিভার থেকে নিজেকে রক্ষা করা সম্ভব।
আসিফ