ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৮ মে ২০২৪, ১৩ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

স্ট্রোকের চিকিৎসা ও করণীয়

ডাঃ হারাধন দেবনাথ

প্রকাশিত: ০০:৩৩, ৭ মে ২০২৪

স্ট্রোকের চিকিৎসা ও করণীয়

অনেকেই স্ট্রোক বলতে হার্ট এ্যাটাককে মনে করেন

অনেকেই স্ট্রোক বলতে হার্ট এ্যাটাককে মনে করেন। আসলে স্ট্রোক হলো ব্রেনের অসুখ। মানুষের মৃত্যুর প্রথম কারণ ক্যান্সার, দ্বিতীয় কারণ হলো হার্ট এ্যাটাক তৃতীয় কারণ হলো স্ট্রোক। প্রতি বছর ১ লাখ মানুষের মধ্যে ১৮০ থেকে ৩০০ জন মানুষ স্ট্রোকে আক্রান্ত হয়। স্ট্রোক সাধারণত তিন ধরনের। ১. টিআই এ ২. প্রগ্রেসিভ স্ট্রোক ৩. কমপ্লেটেট স্ট্রোক। টিআই এ স্ট্রোক হলে আক্রান্ত রোগী ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই সুস্থ হয়ে যায়।

প্রগ্রেসিভ স্ট্রোক হলে রোগীর অবস্থা আস্তে আস্তে আরও খারাপ হতে থাকে। আবার কমপ্লেটেট স্টোক রোগীর অবস্থা আগের মতো থাকে বা অবনতি হয় না। সাধারণত স্ট্রোককে নানাভাবে বিশেষায়িত করা যায়। একটি হলো রক্তনালি ব্লক হয়ে স্ট্রোক বা ইনস্ট্রাসেরিব্রাল ইনফ্রাকশন। অন্যটা হলো ব্রেনের রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে ব্রেনে রক্তক্ষরণ হওয়া। শতকরা ৮৫ ভাগ স্ট্রোক হয় রক্তনালি ব্লক হওয়ার কারণে এবং মাত্র শতকরা ১৫ ভাগ স্ট্রোক হয় রক্তনালি ছিঁড়ে গিয়ে ব্রেনে রক্তক্ষরণের কারণে।
স্ট্রোকের কারণ 
ইসকেমিক স্ট্রোকের কারণ রক্তে কোলেস্টেরল বা খারাপ চর্বির আধিক্যের কারণে। ডায়াবেটিকস, সেডেনটারি ওয়ার্কার এবং স্ট্রেসফুল কাজ, হার্টের অসুখ থেকেও স্ট্রোক হতে পারে। হেমোরেজিক স্ট্রোক বা ব্রেন রক্তক্ষরণ হয় উচ্চরক্তচাপের জন্য। 
চিকিৎসা :
ইসকেমিক স্ট্রোক প্রতিরোধ করতে হলে রক্তের চর্বি কমাতে হবে। সেজন্য ভাত কম খেতে হবে, শাক-সবজি সালাদ বেশি খেতে হবে। বয়স্ক মানুষের গরু বা খাসির মাংস বর্জন করাই বাঞ্ছনীয়। প্রতিদিন ৩০ থেকে ৪০ মিনিট ঘাম ঝরে এ রকম করে হাঁটতে হবে। তাছাড়া ধূমপান ও এ্যালকোলের অভ্যাস থাকলে তা বাদ দিতে হবে।

আর হেমোরেজিক স্ট্রোক প্রতিরোধ করার জন্য প্রয়োজন হলে নিয়মিত উচ্চরক্তচাপের ওষুধ খেতে হবে। কোনো বেলার ওষুধ যেন বাদ না যায়। প্রয়োজনে উচ্চরক্তচাপের ওষুধ পকেটে বা ব্যক্তিগত ব্যাগে বা অফিসের কর্মস্থলে রাখতে হবে। কথায় আছে, এক বেলা ভাত না খেলে অসুবিধা নেই। কিন্তু এক বেলা ওষুধ না খেলে চলবে না। স্ট্রোকের ধরন অনুযায়ী চিকিৎসা ক্ষেত্রে ভিন্নতা রয়েছে। সাধারণত টিআইএ এর জন্য জরুরি ভিত্তিতে তেমন কোনো চিকিৎসার প্রয়োজন পড়ে না। তবে রোগী তখনই সুস্থ না হলে হাসপাতালে নিয়ে চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে হবে।

এক্ষেত্রে মস্তিষ্কের রক্তনালিতে জমাট বেঁধে যাওয়া রক্তের জমাট ভেঙ্গে পুনরায় রক্ত প্রবাহ চালু করার জন্য কিছু ওষুধ নির্দেশিত রোগীকে দিতে হবে। মেকানিক্যাল থ্রম্বেক্টমি পদ্ধতিতে মস্তিষ্কের একটি বড় রক্তনালিতে ক্যাথেটার প্রবেশের মাধ্যমে বিশেষভাবে জমাট বেঁধে যাওয়া রক্ত বাইরে বের করে আনা হয়। স্ট্রোক পরবর্তী ৬ থেকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে এই পদ্ধতির চিকিৎসা গ্রহণের মাধ্যমে সবচেয়ে বেশি সুফল পাওয়া যায়। স্ট্রোকের ফলে মস্তিষ্কের রক্তনালিতে জমাট বেঁধে যাওয়া রক্ত বের করার জন্য সার্জারিরও প্রয়োজন হতে পারে।

হেমোরেজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে চিকিৎসা ভিন্নতর। এক্ষত্রে রক্তনালি ছিঁড়ে যাওয়ার ফলে রক্তপ্রবাহ বেড়ে গিয়ে মস্তিষ্কের কোষ ক্ষতিগ্রস্ত করে। তখন চিকিৎসার মাধ্যমে রক্তনালি মেরামত ও রক্তপ্রবাহ কমানোর চেষ্টা করা হয়। হেমোরেজিক স্ট্রোকের ক্ষেত্রে রক্ত জমাট বাঁধতে সহাযতা করে এবং রক্তপ্রবাহ কমিয়ে দিতে পারে এমন ওষুধও রোগীকে দেয়া হয়।

ওষুধ ছাড়াও অন্যান্য চিকিৎসা ব্যবস্থা হিসেবে রয়েছে সার্জারি, সহ নানাবিধ চিকিৎসা পদ্ধতি যা একজন নিউরোসার্জন রোগীর অবস্থা অনুযায়ী গ্রহণ করে থাকেন। উচ্চরক্তচাপ হয়ে গেলে কোন নিউরোসার্জন বা নিউরোলজিস্টের শরণাপন্ন হওয়া অথবা বিশেষায়িত হাসপাতালে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নেয়া উচিত।

লেখক : অধ্যাপক, নিউরোসার্জারি বিভাগ, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয়, শাহবাগ ঢাকা 
চেম্বার : ধানম-ি ল্যাবএইড হসপিটাল, (দ্বিতীয় তলা) ঢাকা 
ফোন : ০১৭১১৩৫৪১২০।

×