
হঠাৎ পায়ের গিঁটে তীব্র ব্যথা, ফুলে ওঠা কিংবা জ্বালাপোড়া এই উপসর্গগুলো পরিচিত ‘গাউট’ নামে। এটি আর্থ্রাইটিসের এক ধরণ, যা শরীরে অতিরিক্ত ইউরিক অ্যাসিড জমে গিয়ে গিঁটে স্ফটিক আকারে বসে যাওয়ার ফল। কিন্তু আপনি জানেন কি, প্রতিদিনের কিছু খাবারই এই ইউরিক অ্যাসিড বাড়িয়ে তুলতে পারে? আবার কিছু খাবার নিয়মিত খেলে সেটি সহজেই নিয়ন্ত্রণেও রাখা সম্ভব।
কেন বাড়ে গাউট?
আপনার শরীরে একটি প্রাকৃতিক প্রক্রিয়ায় পিউরিন নামের একটি উপাদান থেকে তৈরি হয় ইউরিক অ্যাসিড। পিউরিন যেমন শরীরে তৈরি হয়, তেমনি কিছু খাবারে এর পরিমাণ থাকে অনেক বেশি। যখন এই ইউরিক অ্যাসিড শরীর থেকে ঠিকভাবে বের হতে পারে না, তখন তা গিঁটের মধ্যে জমে গিয়ে ব্যথা তৈরি করে। বিশেষ করে যারা কিডনি রোগে ভুগছেন, ডায়াবেটিস বা হাই প্রেশার রয়েছে, তাদের ক্ষেত্রে ঝুঁকি আরও বেশি।
চলুন জেনে নিই কোন খাবারগুলো গাউটের ঝুঁকি বাড়ায়, আর কোনগুলো ইউরিক অ্যাসিড কমিয়ে এনে দেয় স্বস্তি।
গাউট বাড়ায় এমন খাবার
গাউট থাকলে কিছু খাবার যতটা সম্ভব এড়িয়ে চলাই ভালো। যেমন:
লাল মাংস: গরু, খাসি, শুকর, এমনকি হরিণের মতো বনজ প্রাণীর মাংসে থাকে প্রচুর পিউরিন। এর সঙ্গে হট ডগ, সসেজ, বেকন বা প্রসেসড মাংসের খাবারও আছে।
সামুদ্রিক মাছ ও শেলফিশ: শিম্পি, সার্ডিন, অ্যানচোভিস, লবস্টার ও ঝিনুক জাতীয় সামুদ্রিক খাবারেও পিউরিন বেশি থাকে। তবে সব মাছ সমান ক্ষতিকর নয় ঝিনুক তুলনায় কম ক্ষতিকর।
অর্গান মিট বা ভুঁড়ির মাংস: লিভার, কিডনি, হার্ট, টাং, ভুঁড়ি ইত্যাদি যেকোনো অর্গান মাংস গাউটের জন্য ক্ষতিকর।
চিনিযুক্ত পানীয়: ফ্রুক্টোজ বা কর্ন সিরাপ দিয়ে তৈরি কোমল পানীয়গুলো শরীরে ইউরিক অ্যাসিডের মাত্রা বাড়িয়ে দেয়।
অ্যালকোহল: বিশেষ করে বিয়ার। এতে এমন একধরনের পিউরিন থাকে যা সরাসরি ইউরিক অ্যাসিড বাড়িয়ে দেয়। তবে মদ বা ওয়াইনের ক্ষতি তুলনায় কম, তাও অবশ্যই সীমায় থাকতে হবে।
মাঝারি পিউরিনযুক্ত খাবার, খাবেন মেপে
যেমন: ওটমিল, মাশরুম, পালং শাক, কিডনি বিনস, মটরশুঁটি, ডাল, ফুলকপি ইত্যাদি। এগুলো একেবারে বাদ দেওয়ার দরকার নেই, তবে সীমিত পরিমাণে রাখুন।
গাউট রোগীদের জন্য উপকারী খাবার
চাল, বার্লি, পাস্তা: এগুলো নিরাপদ।
সব ধরনের ফল: বিশেষ করে যেগুলোতে ভিটামিন ‘সি’ আছে, যেমন কমলা, স্ট্রবেরি।
সবজি: বাদে দেওয়া সবজিগুলো ছাড়া সবই ভালো।
ডিম, দুধ, দই: কম ফ্যাটযুক্ত হলে আরও ভালো।
সয়াবিনজাত পণ্য: তোফু, সয়া দুধ গাউট কমাতে সহায়ক।
ইউরিক অ্যাসিড কমাতে বাড়তি কিছু টিপস
সবজি-ভিত্তিক ডায়েট অনুসরণ করুন: বিশেষজ্ঞদের মতে, উদ্ভিজ্জ খাবারে গঠিত ডায়েট (যেমন DASH বা মেডিটেরেনিয়ান ডায়েট) শরীর থেকে ইউরিক অ্যাসিড বের করতে সাহায্য করে।
ভিটামিন ‘সি’ খেতে ভুলবেন না: লেবু, কমলা, বেল পিপার কিংবা ভিটামিন সাপ্লিমেন্ট ইউরিক অ্যাসিড কমাতে পারে।
লেবুর রস মেশানো পানি পান করুন: এক গবেষণায় দেখা গেছে, এটি রক্ত ও প্রস্রাবের পিএইচ বাড়িয়ে ইউরিক অ্যাসিড কমাতে সাহায্য করে।
ফাইবার খাওয়ার অভ্যাস গড়ুন: শাকসবজি, ফলমূল ও হোলগ্রেইনে থাকা ফাইবার শরীরে প্রদাহ কমায় ও ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণ করে।
নিয়মিত হাঁটুন বা হালকা ব্যায়াম করুন: সপ্তাহে অন্তত ১৫০ মিনিট ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুললে উপকার পাবেন।
কারা বেশি ঝুঁকিতে?
বয়স, জেনেটিক্স, শরীরের ওজন এবং কিডনির কার্যক্ষমতা সব মিলিয়ে কিছু মানুষ গাউটের ঝুঁকিতে থাকেন বেশি। পুরুষরা সাধারণত ৫০-এর নিচে বেশি আক্রান্ত হন, আর মেয়েদের ক্ষেত্রে মেনোপজ পরবর্তী সময়ে ঝুঁকি বাড়ে। যাদের ওজন বেশি বা যাদের পরিবারে গাউটের ইতিহাস রয়েছে, তাদের সাবধান হওয়া জরুরি।
গাউটের ব্যথা একবার শুরু হলে তা সহ্য করা কষ্টকর। তবে সচেতন জীবনযাপন, সঠিক খাদ্যাভ্যাস এবং নিয়মিত শারীরিক কার্যকলাপের মাধ্যমে আপনি এই ব্যথা কমাতে পারবেন অনেকটাই। তাই আজ থেকেই চেষ্টা শুরু করুন পিউরিন কমান, ইউরিক অ্যাসিড নিয়ন্ত্রণে রাখুন, আর সুস্থ থাকুন।
আপনার খাবারই হতে পারে আপনার ওষুধ।
সূত্র:https://tinyurl.com/fem82r8v
আফরোজা