ছবিঃ সংগৃহীত
এক মার্কিন যুবক যিনি একটানা ১১ দিন বা ২৬৪ ঘণ্টা না ঘুমিয়ে কাটিয়েছিলেন, সম্প্রতি জানিয়েছেন তার শরীর ও মানসিক স্বাস্থ্যের ওপর এই অভিজ্ঞতার ভয়াবহ প্রভাব।
১৯৬৩ সালে, মাত্র ১৭ বছর বয়সে র্যান্ডি গার্ডনার দুই বন্ধুর সঙ্গে শর্ত করে না-ঘুমিয়ে একটি রেকর্ড গড়ার সিদ্ধান্ত নেন। তখন পর্যন্ত রেকর্ডটি ছিল হনোলুলুর ডিজে টম রাউন্ডসের, যিনি ২৬০ ঘণ্টা জেগে ছিলেন। সেই রেকর্ড ভাঙতে তারা অংশ নেয় সান দিয়েগোর ১০ম বার্ষিক বিজ্ঞান মেলায়।
গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডসের ইউটিউব ভিডিওতে গার্ডনার বলেন, "বছরের পর বছর আমি চুপ করে ছিলাম। জানি না কেন আবার এই নিয়ে কথা বলতে রাজি হলাম।"
তার বন্ধু ব্রুস ম্যাকালিস্টার ও জো মার্সিয়ানো জুনিয়র তাকে জেগে রাখার দায়িত্ব নেন। প্রতি ছয় ঘণ্টা অন্তর তারা ২০টি পরীক্ষার মাধ্যমে গার্ডনারের মানসিক অবস্থা যাচাই করতেন।
তিন দিন না ঘুমানোর পর গার্ডনার মনোযোগের ঘাটতি ও অল্প মেয়াদি স্মৃতিভ্রংশের শিকার হন।
তিনি বলেন, "চতুর্থ বা পঞ্চম দিনে মনে হচ্ছিল – এ কি মজা করছি! খুব কঠিন লাগছিল। তখন সংবাদপত্রে খবর ছড়িয়ে পড়ে, পিছু হটার সুযোগ ছিল না।"
পরীক্ষার জনপ্রিয়তা বাড়লে, স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের ঘুম গবেষক উইলিয়াম ডিমেন্ট শেষ তিনদিন তাদের সঙ্গে যোগ দেন। তিনি গার্ডনারকে গাড়িতে ঘুরিয়ে, রেডিও চালিয়ে ও পিনবল খেলিয়ে জাগিয়ে রাখেন। আশ্চর্যের বিষয়, দশ দিন না ঘুমিয়েও গার্ডনার খেলায় জয় পান।
ফলাফল
পরীক্ষা শেষে গার্ডনারের মানসিক ক্ষমতা ভয়াবহভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়। তার মেজাজ খিটখিটে হয়ে পড়ে, মনোযোগ হারান, সাময়িক স্মৃতিভ্রংশ, বিভ্রম ও হ্যালুসিনেশনের শিকার হন।
রেকর্ড ভাঙার পর তিনি ১৪ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট ঘুমান। ডিমেন্ট ও তার দল সেই সময় তার মস্তিষ্কের তরঙ্গ, হার্টবিট, রক্তচাপসহ নানা শারীরিক সূচক পরীক্ষা করেন। যদিও তিনি প্রথমে স্বাভাবিক ঘুমে ফিরতে পেরেছিলেন, কিন্তু পরবর্তীতে বহু বছর ভোগেন তীব্র অনিদ্রায়। গার্ডনার এই সমস্যার জন্য সেই তরুণ বয়সের ঘুমহীনতাকেই দায়ী করেন।
এই রেকর্ড পরবর্তীতে একাধিকবার ভাঙা হয়েছে। তবে ১৯৯৭ সালে গিনেস ওয়ার্ল্ড রেকর্ডস নিরাপত্তাজনিত কারণে নতুন না-ঘুমানোর রেকর্ড গ্রহণ বন্ধ করে দেয়।
মুমু
