
ছবি: সংগৃহীত
নারী অক্টোপাস আর চুপ করে সইছে না! নতুন এক গবেষণায় দেখা গেছে, পুরুষ অক্টোপাসদের অনাকাঙ্ক্ষিত প্রেম নিবেদনের বিরুদ্ধে নারী অক্টোপাসরা সরাসরি পদক্ষেপ নিচ্ছে। তারাপুরুষ অক্টোপাসদের লক্ষ্য করে ছুঁড়ে মারছে কাদা, ঝিনুক এমনকি পাথরও!
এই চমকপ্রদ ও বিরল আচরণ নিয়ে গবেষণা করেছেন অস্ট্রেলিয়া, কানাডা ও যুক্তরাষ্ট্রের একদল গবেষক। তাদের এই গবেষণার ফলাফল প্রকাশিত হয়েছে বায়োআর্কাইভ (bioRxiv) প্রি-প্রিন্ট সার্ভারে।
গবেষণার স্থান ছিল অস্ট্রেলিয়ার উপকূলীয় জারভিস বে। এখানেই রয়েছে অসংখ্য সিডনি অক্টোপাসের (Octopus tetricus) বসবাস। ২০১৫ সালেও একই দলে থাকা গবেষকরা প্রথমবার অক্টোপাসদের অন্য অক্টোপাসের দিকে কিছু ছুড়ে মারতে দেখেছিলেন। তবে তখন বোঝা যায়নি, এটি উদ্দেশ্যপ্রণোদিত কিনা। এবার বিস্তারিত পর্যবেক্ষণে তারা নিশ্চিত হয়েছেন—হ্যাঁ, এসব ছোঁড়া অনেক ক্ষেত্রেই ইচ্ছাকৃত, এবং লক্ষ্যবস্তু বেশিরভাগ সময়েই একজন ‘অনাকাঙ্ক্ষিত পুরুষ’।
গবেষকেরা জানিয়েছেন, নারী অক্টোপাসরা শরীরের নিচে থাকা বাহু দিয়ে কাদামাটি, ঝিনুক বা ছোট পাথর ধরে রাখে এবং তাদের সিফন নামক বিশেষ এক অঙ্গ দিয়ে জোরে পানি ছুড়ে সেই বস্তু দূরে পাঠায়। এই জেট পানির ধাক্কায় ছুঁড়ে দেওয়া বস্তু কখনো কখনো কয়েক শরীর দূর পর্যন্ত পৌঁছায়।
ভিডিও ফুটেজ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, নারী অক্টোপাসরা আশেপাশে থাকা পুরুষদের দিকে ইচ্ছাকৃতভাবে বস্তু ছুড়ছে, বিশেষ করে যখন পুরুষটি তার সঙ্গে মিলনে আগ্রহ দেখায়। এক ঘটনায় দেখা গেছে, একটি নারী অক্টোপাস একটি নির্দিষ্ট পুরুষের দিকে ১০ বার কাদা ছুড়ে মেরেছে।
বিস্ময়কর বিষয় হলো, এসব আক্রমণের বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই পুরুষ অক্টোপাসরা বস্তু এড়িয়ে যেতে চেষ্টা করে—এবং প্রায় অর্ধেক সময় তারা সফলও হয়।
গবেষকরা আরও দেখেছেন, অক্টোপাসরা যখন নেস্ট বানানোর জন্য বা আশপাশ পরিষ্কার করার জন্য বস্তু সরায়, তখন তারা বস্তু ছুঁড়ে দেয় সামনের দুই বাহুর মাঝখান দিয়ে। কিন্তু যখন তারা কারও দিকে উদ্দেশ্যমূলকভাবে ছুঁড়ে মারে, তখন সেটা হয় প্রথম ও দ্বিতীয় বাহুর মাঝখান দিয়ে। একটি ঘটনায় এক নারী অক্টোপাস এক বাহু দিয়ে ফ্রিসবির মতো করে ঝিনুক ছুঁড়ে দেয়!
গবেষণায় উল্লেখযোগ্যভাবে পুরুষদের কাউকেই পাল্টা বস্তু ছুঁড়তে দেখা যায়নি।
এই পর্যবেক্ষণ প্রাণীদের আচরণগত গবেষণায় একটি গুরুত্বপূর্ণ সংযোজন। এটি দেখায়, অক্টোপাসদের সামাজিক আচরণ অনেক বেশি জটিল এবং সচেতনভাবে পরিচালিত, বিশেষ করে যখন তা হয় নিজেকে রক্ষা করার প্রেক্ষিতে।
মুমু ২