ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ কি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে?

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ১৪:০৩, ১৭ জুন ২০২৫

ইরান-ইসরায়েল যুদ্ধ কি বিশ্ব অর্থনীতির জন্য বিপর্যয় ডেকে আনবে?

ছবি: সংগৃহীত

**ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ ও বিশ্ব অর্থনীতির উপর সম্ভাব্য ধাক্কা**
*রিপোর্ট: আলেক্স কোজুল-রাইট (আল জাজিরা) | বাংলা উপস্থাপনা: চ্যাটজিপিটি*

ইসরায়েল ও ইরানের মধ্যে চতুর্থ দিনের মতো ভয়াবহ হামলা চালানো হচ্ছে। এতে আশঙ্কা দেখা দিয়েছে—এই সংঘাত ছড়িয়ে পড়লে তা পুরো মধ্যপ্রাচ্যের তেল ও গ্যাস সরবরাহে বড় ধাক্কা দিতে পারে। যুদ্ধের কারণে শেয়ারবাজার কেঁপে উঠেছে, বিমান চলাচল ব্যাহত হচ্ছে এবং বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীরা নিরাপদ আশ্রয়ের খোঁজে ছুটছে।

ইসরায়েলের প্রথম হামলার পর বিশ্ববাজারে দ্রুত তেলের দাম বেড়ে গেছে। সোমবার ব্রেন্ট ক্রুড তেলের দাম পৌঁছে যায় ৭৪.৬০ ডলারে, যা বৃহস্পতিবারের তুলনায় প্রায় ৭ শতাংশ বেশি। কারণ হরমুজ প্রণালী—যেখান দিয়ে বিশ্বের প্রায় এক-তৃতীয়াংশ তেল পরিবাহিত হয়—সংঘাতের কারণে হুমকির মুখে। ইরান ইতোমধ্যে ইঙ্গিত দিয়েছে, যুদ্ধ বাড়লে তারা এই প্রণালী বন্ধ করে দেবে। তবে বিশ্লেষকরা বলছেন, এতে ইরান নিজেও ক্ষতিগ্রস্ত হবে, কারণ দেশটির চীনে রপ্তানিকৃত তেলের বড় অংশ এই পথেই যায়।

এই যুদ্ধের প্রভাবে যুক্তরাষ্ট্র, ইউরোপ ও মধ্যপ্রাচ্যের শেয়ারবাজারগুলোতে ধস দেখা গেছে। যুক্তরাষ্ট্রের S\&P 500 ও Nasdaq সূচক ১.১% ও ১.৩% হ্রাস পেয়েছে। মিশরের EGX 30 সূচক ৭.৭% কমেছে, আর তেলআবিব স্টক এক্সচেঞ্জে পতন হয়েছে ১.৫%। ইউরোপের জার্মানি ও ফ্রান্সের বাজারেও একই চিত্র দেখা গেছে। তবে এই সময়ে কিছু প্রতিরক্ষা ও তেল কোম্পানির শেয়ারে উল্টো লাভ হয়েছে। যেমন যুক্তরাজ্যের BAE Systems এবং যুক্তরাষ্ট্রের Lockheed Martin, Northrop Grumman ও RTX-এর শেয়ারের দাম বেড়েছে। তেলের দাম বাড়ায় BP ও Shell-এর শেয়ারের দামও বেড়েছে।

বিশ্বব্যাপী বিনিয়োগকারীরা এখন স্বর্ণে ঝুঁকছেন। শুক্রবার স্বর্ণের দাম বেড়ে দাঁড়ায় প্রতি আউন্সে ৩,৪২৬ ডলার, যা এপ্রিলের রেকর্ড ৩,৫০০ ডলারের কাছাকাছি। অর্থনৈতিক অনিশ্চয়তায় স্বর্ণকে নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে দেখা হচ্ছে।

যুদ্ধের কারণে আকাশপথেও বিপর্যয় দেখা দিয়েছে। ইরান, ইরাক, জর্ডান ও লেবানন তাদের আকাশসীমা বন্ধ করেছে। Emirates, Etihad ও Qatar Airways অনেক রুট বন্ধ বা পরিবর্তন করেছে। এতে মধ্যপ্রাচ্য থেকে ইউরোপ বা এশিয়ার ফ্লাইটে বড় ধরনের বাধা সৃষ্টি হয়েছে। যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পর্যটনে এই প্রভাব সাময়িক এবং কয়েক সপ্তাহের মধ্যে কাটিয়ে ওঠা সম্ভব।

তেলের দাম বাড়লে মূল্যস্ফীতির আশঙ্কাও বেড়ে যায়। বিশেষত তেল আমদানিকারক দেশগুলোতে খাদ্য ও উৎপাদনের খরচ বাড়ে। ফলে সাধারণ জনগণের খরচও বেড়ে যেতে পারে। বিশ্বব্যাপী কেন্দ্রীয় ব্যাংকগুলো যেখানে সুদের হার কমানোর চিন্তায় ছিল, সেখানে এখন নতুন করে জ্বালানি শক তাদের সেই পরিকল্পনায় বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে।

সব মিলিয়ে ইসরায়েল-ইরান যুদ্ধ শুধু মধ্যপ্রাচ্যের বিষয় নয়, এটি এখন এক বৈশ্বিক অর্থনৈতিক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যতক্ষণ না যুক্তরাষ্ট্র বা অন্য বড় শক্তিগুলো সরাসরি জড়িয়ে পড়ে, ততক্ষণ পর্যন্ত এই সংঘাত সীমিত থাকবে বলেই বাজার ভাবছে। কিন্তু যদি তা নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়, তাহলে সামনে বিশ্ব অর্থনীতির জন্য আরও বড় ধাক্কার আশঙ্কা রয়েছে।

মুমু ২

×