ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

রক্তচাপ কমছেই না? ওষুধ কাজ না করলে সাবধান! হতে পারে ভয়ং/কর রেজিস্ট্যান্ট হাইপারটে/নশন!

প্রকাশিত: ১৩:৪৫, ১৭ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৩:৪৬, ১৭ জুন ২০২৫

রক্তচাপ কমছেই না? ওষুধ কাজ না করলে সাবধান! হতে পারে ভয়ং/কর রেজিস্ট্যান্ট হাইপারটে/নশন!

রক্তচাপ মাপা একটি রুটিন চেকআপ হলেও এই সংখ্যাগুলোর মধ্যেই লুকিয়ে থাকে আপনার হৃদ্‌যন্ত্রের সুস্থতা সম্পর্কে গুরুত্বপূর্ণ বার্তা। অনেকেই ওষুধ খাওয়ার পরও যখন রক্তচাপ স্বাভাবিক পর্যায়ে আসে না, তখন সেই অবস্থাকে বলা হয় রেজিস্ট্যান্ট হাইপারটেনশন বা প্রতিরোধী উচ্চ রক্তচাপ।

এটি সাধারণ উচ্চ রক্তচাপের চেয়ে অনেক বেশি জটিল। এটি ইঙ্গিত দেয় যে, প্রচলিত চিকিৎসা পদ্ধতিটি কার্যকর হচ্ছে না। তাই কেবলমাত্র ওষুধের মাত্রা বাড়ালেই সমাধান মিলবে না, বরং দরকার গভীরভাবে কারণ অন্বেষণ। এর মধ্যে রয়েছে গোপন রোগের সন্ধান, সঠিকভাবে ওষুধ গ্রহণের অভ্যাস গড়ে তোলা এবং প্রয়োজনে নতুন ধরনের চিকিৎসা পদ্ধতি বিবেচনায় আনা।

এখন সময় এসেছে আরও সচেতন হওয়ার, কারণ এই সমস্যা শুধু আপনার বর্তমান নয়, ভবিষ্যতের হৃদ্‌রোগ, স্ট্রোক বা কিডনি জটিলতার ঝুঁকিও বাড়িয়ে দেয়।

রক্তচাপের সংখ্যাগুলো কী বলে?
একটি আদর্শ রক্তচাপের মান হচ্ছে ১২০/৮০ mmHg এর নিচে। এই সংখ্যা দুটি—উপরেরটি সিস্টোলিক, অর্থাৎ হৃদ্‌যন্ত্র সংকোচনের সময় চাপ, এবং নিচেরটি ডায়াস্টোলিক, অর্থাৎ বিশ্রামের সময় চাপ।

বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার পরামর্শ অনুযায়ী, উচ্চ রক্তচাপ তিনটি পর্যায়ে ভাগ করা হয়:

গ্রেড ১ (মৃদু): ১৪০–১৫৯ / ৯০–৯৯ mmHg

গ্রেড ২ (মধ্যম): ১৬০–১৭৯ / ১০০–১০৯ mmHg

গ্রেড ৩ (গুরুতর): ১৮০/১১০ mmHg বা তার বেশি

যখন এই চাপ তিনটি ভিন্ন ধরনের উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণকারী ওষুধের (যার একটি অবশ্যই ডাইইউরেটিক) সঠিক মাত্রায় ব্যবহারের পরও নিয়ন্ত্রণে আসে না, তখনই তাকে রেজিস্ট্যান্ট হাইপারটেনশন বলা হয়। ডায়াবেটিস বা ক্রনিক কিডনি রোগের রোগীদের জন্য লক্ষ্য মাত্রা আরও কম, ১৩০/৮০ mmHg।

কেন রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে আসছে না?
এই প্রতিরোধী উচ্চ রক্তচাপের পেছনে একটি প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত সিমপ্যাথেটিক নার্ভ এক্টিভিটি। এটি শরীরকে ক্রমাগত এক ধরনের উত্তেজিত অবস্থায় রাখে, যার ফলে রক্তনালীগুলো সংকুচিত হয়ে যায় এবং রক্তচাপ বেড়ে যায়।

তবে শুধু এটিই নয় এর সঙ্গে যুক্ত হতে পারে আরও কিছু গোপন শারীরিক সমস্যা। যেমন:

ক্রনিক কিডনি ডিজিজ

হরমোনজনিত সমস্যা (যেমন প্রাইমারি অ্যালডোস্টেরোনিজম, থাইরয়েডের অস্বাভাবিকতা)

অবস্ট্রাকটিভ স্লিপ অ্যাপনিয়া

এছাড়াও যেসব ওষুধ উচ্চ রক্তচাপের সঙ্গে সংঘাত করে, যেমন—এনএসএআইডি, স্টেরয়েড, বা কিছু ডিপ্রেশনের ওষুধ—তাও সমস্যাকে বাড়িয়ে দিতে পারে। পাশাপাশি অতিরিক্ত লবণ খাওয়া, অ্যালকোহল সেবন, স্থূলতা, এবং চিরস্থায়ী মানসিক চাপ এই রোগকে আরও কঠিন করে তোলে।

শুধু ওষুধ নয়, দরকার একটি পূর্ণাঙ্গ পদ্ধতি
উচ্চ রক্তচাপকে বহু সময় আমরা গুরুত্ব দিই না, কারণ অনেক সময় এটি কোনও উপসর্গ ছাড়াই শরীরে বাসা বাঁধে। কিন্তু রেজিস্ট্যান্ট হাইপারটেনশন এমন এক শত্রু, যাকে কেবলমাত্র সাময়িকভাবে নয়, দীর্ঘমেয়াদে মোকাবিলা করতে হয়।

ওষুধ বদলানো, খাদ্যাভ্যাসে পরিবর্তন আনা, ওজন নিয়ন্ত্রণে রাখা, বা স্ট্রেস কমানো এসবই গুরুত্বপূর্ণ। তবে এর পাশাপাশি নতুন যুগের আধুনিক চিকিৎসাও ভাবনায় আনা উচিত। যেমন, রেনাল ডেনারভেশন (RDN) এটি একটি ইন্টারভেনশনাল থেরাপি, যেখানে অতিরিক্ত সক্রিয় স্নায়ু গুলোকে টার্গেট করে উচ্চ রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণ করা হয়।

এই পদ্ধতি হার্ট ফেইলিউর, স্ট্রোক বা কিডনি জটিলতার ঝুঁকি কমাতেও সক্ষম হতে পারে।

দীর্ঘমেয়াদে কীভাবে নিয়ন্ত্রণে রাখবেন?
রেজিস্ট্যান্ট হাইপারটেনশনের চিকিৎসা একটি দীর্ঘমেয়াদি যুদ্ধ। নিয়মিত রক্তচাপ পরীক্ষা করা ঘরে ও চিকিৎসকের কাছে উভয় জায়গাতেই এই লড়াইয়ের গুরুত্বপূর্ণ অংশ। লক্ষ্য হলো ১৪০/৯০ mmHg এর নিচে থাকা।

তবে শুধু পরীক্ষা নয়, আপনাকেই নিজেকে সক্রিয় রাখতে হবে। নিয়মিত ফলো-আপে যাওয়া, উপসর্গ নিয়ে কথা বলা, নিজের রোগ সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা এবং প্রয়োজন হলে রেনাল ডেনারভেশনের মতো আধুনিক চিকিৎসা বেছে নেওয়া এই সবই আপনাকে আরও একধাপ এগিয়ে রাখবে।

যদি আপনি দীর্ঘদিন ধরে উচ্চ রক্তচাপের ওষুধ খেয়ে যাচ্ছেন অথচ রিডিং কমছে না, তবে এখনই সময় প্রশ্ন তোলার কেন এমন হচ্ছে?

রেজিস্ট্যান্ট হাইপারটেনশন মানে এই নয় যে আপনি নিয়ন্ত্রণে আনতে পারবেন না। বরং এর মানে হলো, এখন দরকার আরও বুদ্ধিদীপ্ত, পরিকল্পিত ও ব্যক্তিকেন্দ্রিক পন্থা। সময়মতো সনাক্তকরণ, যথাযথ চিকিৎসা এবং আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করলে নিয়ন্ত্রণ পাওয়া সম্ভব এবং সেটি শুধু সম্ভবই নয়, আপনার নাগালের মধ্যেই রয়েছে।

 

 

সুত্র:https://tinyurl.com/575d49x7

আফরোজা

×