ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ১৭ জুন ২০২৫, ৩ আষাঢ় ১৪৩২

মস্তিষ্কে টিউমার কী? জানুন লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসাসমূহ

প্রকাশিত: ১৩:৩৭, ১৭ জুন ২০২৫

মস্তিষ্কে টিউমার কী? জানুন লক্ষণ, কারণ ও চিকিৎসাসমূহ

মস্তিষ্কে টিউমার বলতে বোঝায় মস্তিষ্ক অথবা এর আশেপাশে অস্বাভাবিক কোষের সমষ্টি যা স্বাভাবিক কোষের মতো কাজ করে না। এসব কোষ নিয়ন্ত্রণহীনভাবে বৃদ্ধি পায় এবং ঘনির্ভরতা ছাড়িয়ে বড় হতে থাকে। মস্তিষ্কে যেসব টিউমার দেখা যায়, তা হয় প্রাথমিক (Brain-Originated) বা গিস্ট নার্বাস সিস্টেমে শুরু হয়ে অন্য অঙ্গ থেকে গিয়েও তৈরি হয় (Secondary বা মেটাস্ট্যাটিক)। তবে সব মস্তিষ্কের টিউমারই ক্যান্সার নয়।

বিনাইন (অ-ক্যান্সার) টিউমার ধীরে বাড়ে এবং সচরাচর বিপদের কারণ হয় না। কিন্তু ম্যালিগন্যান্ট বা ক্যান্সারযুক্ত টিউমার দ্রুত বেড়ে আশেপাশের গুরুত্বপূর্ণ টিস্যু দখল করে ফেলে। মস্তিষ্কে টিউমারের চিকিৎসায় প্রথম লক্ষ্য থাকে সাঞ্চাল্য রোধ ও রোগীর স্বাভাবিক চাল-চলাচল বজায় রাখা।

মস্তিষ্কে টিউমারের ধরন
১. বিনাইন টিউমার
মোট মস্তিষ্কের টিউমারের প্রায় ৭১ শতাংশই বিনাইন। অ-ক্যান্সার হলেও এই ধরনের টিউমার আকারে বড় হলে মাথায় চাপ তৈরি করার কারণে চিকিৎসা প্রয়োজন হয়ে যায়।

২. ম্যালিগন্যান্ট টিউমার
এই ধরনের ক্যান্সার সৃষ্টিকারী টিউমার দ্রুত বিস্তার লাভ করে। আশেপাশের টিস্যুকে ব্যাহত করে মস্তিষ্কের স্বাভাবিক কাজ বন্ধ করে দিতে পারে।

৩. প্রাইমারি ও সেকেন্ডারি টিউমার
প্রাইমারি টিউমার মস্তিষ্কেই শুরু হয় এবং তা হতে পারে গ্লিয়াল (গ্লিওমা) বা নন‑গ্লিয়াল।
সেকেন্ডারি টিউমার অন্য কোনো অঙ্গের ক্যান্সার থেকে মস্তিষ্কে ছড়িয়ে আসে, যেমন ফুসফুস, স্তন, কিডনি বা কোলন ক্যান্সার থেকে।

মস্তিষ্কে টিউমারের লক্ষণ
টিউমারের আকার, ধরন ও অবস্থানের ওপর বিভিন্ন লক্ষণ নির্ভর করে। তবে কিছু সাধারণ উপসর্গ হলো:

 মাথাব্যথা, যা সকালে বেড়ে যায় বা রাতে ঘুম ভেঙে দেয়
খিঁচুনি বা স্নায়বিক খিঁচুনি
বমি বমি ভাব বা বমি
কথা বলতে বা বুঝতে সমস্যা
চোখ দুর্বলতা, ডাবল দৃষ্টি
শ্রবণশক্তির পরিবর্তন
মুখ, হাত বা পায়ে ঝিনঝিনিতে যন্ত্রণা
ভারসাম্যহীনতা, হাঁটতে সমস্যা
আচরণগত পরিবর্তন, মন খারাপ বা বিভ্রান্তি
 হঠাৎ ক্লান্তি বা এক পাশে দুর্বলতা

তবে এসব উপসর্গ সব সময় টিউমার নির্দেশ করে না। দীর্ঘস্থায়ী সমস্যায় বিশেষজ্ঞ পরামর্শ জরুরি।

কী ধরনের অনুভূতি হতে পারে?
কিছু ব্যক্তির টিউমার শুরু হয় খিঁচুনি বা অচেনা অনুভূতির মাধ্যমে। ফোকাল সিজার বা আবেগে উথাল-পাথাল, হ্যালুসিনেশন বা মাথায় চাপের মতো অনুভূতি হতে পারে।

মস্তিষ্কে টিউমারের কারণ
সেকেন্ডারি টিউমারের উৎস ক্যান্সার শুরু হওয়া অঙ্গে খুঁজে পাওয়া যায়, কিন্তু প্রাইমারি টিউমার প্রধানত ক্রোমোজোম বা কোষ বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে সমস্যা থেকেই হয়েছে। ঝুঁকি বাড়ায়:

অতীতে রেডিয়েশন এক্সপোজার

দুর্বল ইমিউন সিস্টেম

জেনেটিক রোগ, যেমন নিউরোফাইব্রোমাটোসিস, টিউবারাস স্ক্লেরোসিস, লি‑ফ্রাউমেনি সিনড্রোম

কারা বেশি আক্রান্ত?
যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি লাখে ২৩-২৪ জন মানুষ মস্তিষ্কের প্রাথমিক টিউমারে আক্রান্ত হয়। শিশুরা (৩–১২ বছর) এবং প্রাপ্তবয়স্করা (৪০–৭০ বছর) বেশি জড়িত। নারীর সংক্রামণ হার পুরুষের তুলনায় কিছুটা বেশি।

কিভাবে নির্ণয় হয়?
১. নিউরোলজিক্যাল পরীক্ষা স্নায়ু, স্মৃতি ও সংবেদনশীলতা যাচাই
২. ইমেজিং টেস্ট—MRI, CT, PET স্ক্যানের মাধ্যমে টিউমারের অবস্থান ও বৈশিষ্ট্য নির্ধারণ
৩. বায়োপসি—টিউমার টিস্যু সংগ্রহ করে পরীক্ষা করানো

মস্তিষ্কে টিউমারের চিকিৎসা
চিকিৎসার পদ্ধতি নির্ভর করে টিউমারের অবস্থান ও ধরণে। প্রধানত তিন পদ্ধতি রয়েছে:

১. সার্জারি—টিউমার অপসারণ বা প্রশমন
২. রেডিয়েশন থেরাপি—উচ্চ শক্তির রশ্মি দিয়ে টিউমারের কোষ ধ্বংস
৩. কেমোথেরাপি—রক্তপ্রবাহের মাধ্যমে টিউমার কোষের বৃদ্ধি রোধ

বিশেষ পদ্ধতি:

লেজার অ্যাবলেশন বা লেজার ইন্টারস্টিশিয়াল থার্মাল থেরাপি (LITT)

নিউরোএন্ডোস্কোপি

চিকিৎসার পরিণতি
কোনো টিউমারই সুনির্দিষ্ট ভবিষ্যদ্বাণী দেয় না; তবে সাধারণত পর্যবেক্ষণ বা নির্দিষ্ট চিকিৎসার মাধ্যমে রোগ নিয়ন্ত্রণে রাখা যায়।
ম্যালিগন্যান্ট টিউমারের ক্ষেত্রে অগ্রগতি দ্রুত হলেও চিকিৎসা ও পুনর্বাসনে অনেকসময় সফলতা পাওয়া যায়।


মস্তিষ্কে টিউমার জীবন-ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে, তাই সঠিক সময় উপসর্গ চিনে পরীক্ষা ও চিকিৎসা করানো জরুরি। উপসর্গ উপেক্ষা না করে দ্রুত চিকিৎসকের পরামর্শ নেয়া মানুষের জীবনের জন্য বুদ্ধিমানের সিদ্ধান্ত।


সূত্র:https://tinyurl.com/yec4wex2

আফরোজা

×