
ছবিঃ সংগৃহীত
ইরানের ড্রোন হামলার জবাবে ইসরায়েলি নৌবাহিনী প্রথমবারের মতো সফলভাবে মোতায়েন করেছে তাদের অত্যাধুনিক ‘বারাক ম্যাগেন’ বিমান প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা। ইসরায়েলি জলসীমায় টহলরত এসএ'এআর-৬ শ্রেণির যুদ্ধজাহাজগুলো এই ব্যবস্থা ব্যবহার করে আটটি ইরানি ড্রোন ধ্বংস করেছে।
ইসরায়েল ডিফেন্স ফোর্সেস (আইডিএফ)-এর তথ্যমতে, এই ঘটনায় বারাক ম্যাগেনের সঙ্গে ব্যবহৃত লং রেঞ্জ অ্যাকটিভ ডিফেন্স (এলআরএডি) ইন্টারসেপটর মিসাইল প্রথমবারের মতো যুদ্ধ পরিস্থিতিতে কার্যকরভাবে ব্যবহার করা হয়েছে। আইডিএফ জানিয়েছে, “নৌবাহিনীর ক্ষেপণাস্ত্রবাহী যুদ্ধজাহাজ থেকে আটটি ড্রোন সফলভাবে ধ্বংস করা হয়েছে। এটি ‘বারাক ম্যাগেন’ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এবং এর দীর্ঘ-পাল্লার ইন্টারসেপটর ‘এলআরএডি’-এর প্রথম যুদ্ধ-ব্যবহার।”
এই সফল প্রতিরোধ ঘটে ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে চলমান উত্তেজনাকর সংঘর্ষের সময়, যেখানে এখন পর্যন্ত অন্তত ২৫টি ড্রোন আটকানোর দাবি করেছে আইডিএফ। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরানের এই ধরনের ড্রোন হামলা মূলত একটি কৌশলগত পরিবর্তনের ইঙ্গিত দেয়, যেখানে কম খরচে, সহজে প্রতিস্থাপনযোগ্য ড্রোনের মাধ্যমে ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা চ্যালেঞ্জ করা হচ্ছে।
কী এই বারাক ম্যাগেন?
বারাক ম্যাগেন হলো ইসরায়েল এয়ারস্পেস ইন্ডাস্ট্রিজ (IAI) কর্তৃক নির্মিত একটি উন্নত নৌবাহিনী প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা, যা সমুদ্রভিত্তিক জাহাজগুলোকে বিভিন্ন ধরনের আকাশপথের হুমকি থেকে সুরক্ষা দিতে সক্ষম।
মূল বৈশিষ্ট্য:
বহুস্তরীয় প্রতিরক্ষা: ড্রোন, ক্রুজ মিসাইল, সমুদ্র-পৃষ্ঠ ঘেঁষে উড়ে আসা ক্ষেপণাস্ত্র, ব্যালিস্টিক হামলা এবং শত্রুপক্ষের বিমানকে প্রতিহত করতে সক্ষম।
দীর্ঘ পাল্লার ইন্টারসেপশন: এলআরএডি ইন্টারসেপটর ১৫০ কিলোমিটারেরও বেশি দূর থেকে টার্গেট ধ্বংস করতে সক্ষম।
উন্নত শনাক্তকরণ ব্যবস্থা: EL/M-2248 MF-STAR রাডারের মাধ্যমে ৩৬০ ডিগ্রি কোণে হুমকি শনাক্ত ও ট্র্যাকিং করে; সাথে রয়েছে ইলেকট্রো-অপটিক্যাল সেন্সর।
মডুলার ডিজাইন: বিভিন্ন জাহাজে ব্যবহারযোগ্য, বর্তমানে এটি সাআর-৬ শ্রেণির যুদ্ধজাহাজে স্থাপন করা হয়েছে, যা ইসরায়েলের অর্থনৈতিক জলসীমা ও গ্যাস অনুসন্ধান ক্ষেত্র রক্ষা করে।
এই প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা এমন এক সময়ে আত্মপ্রকাশ করল, যখন সমুদ্রপথে ইসরায়েলের কৌশলগত স্বার্থ—বিশেষত গ্যাস অনুসন্ধান ক্ষেত্রগুলো—বিপদের মুখে পড়েছে। এই পরিস্থিতিতে, বারাক ম্যাগেন ইসরায়েলকে একটি গুরুত্বপূর্ণ নৌভিত্তিক নিরাপত্তা চাদর প্রদান করেছে।
ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা নীতিতে এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ মোড় পরিবর্তনের সূচনা করে—যেখানে সমুদ্রপথে আধিপত্য প্রতিষ্ঠার মাধ্যমে কৌশলগত স্থিতিশীলতা নিশ্চিত করা হচ্ছে। ক্ষুদ্র ও বহুমুখী ক্ষমতাসম্পন্ন সাআর-৬ যুদ্ধজাহাজে অত্যাধুনিক এই প্রতিরক্ষা প্রযুক্তির সমন্বয়ে ইসরায়েল এখন আরো সজাগ এবং প্রতিক্রিয়াশীল এক নৌশক্তি হয়ে উঠেছে।
সূত্রঃ টাইমস অফ ইন্ডিয়া
নোভা