ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৩ মার্চ ২০২৩, ৯ চৈত্র ১৪২৯

monarchmart
monarchmart

এলডেস্টেরন হরমোন ও উচ্চ রক্তচাপ 

লে. কর্নেল ডা. নাসির উদ্দিন আহমদ 

প্রকাশিত: ০০:৪০, ১৪ মার্চ ২০২৩

এলডেস্টেরন হরমোন ও উচ্চ রক্তচাপ 

বিশ্বে ১৩০ কোটির বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন

বিশ্বে ১৩০ কোটির বেশি মানুষ উচ্চ রক্তচাপে ভুগছেন। হৃদরোগ এবং স্ট্রোকের অন্যতম প্রধান ঝুঁকি হচ্ছে এই উচ্চ রক্তচাপ। সারা পৃথিবীতে মানুষের অকাল মৃত্যুর জন্য এটি একটি প্রধান কারণ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উচ্চ রক্তচাপের কারণ জানা যায়নি। আগে বলা হতো শতকরা ৯০ থেকে ৯৫ ভাগ উচ্চ রক্তচাপের কারণ অজানা। এখন ধারণা বদলে যাচ্ছে।

উচ্চ রক্তচাপের কারণ নির্ণয় করার অত্যাধুনিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা আবিষ্কৃত হওয়ায় বেরিয়ে আসছে অজানা কারণগুলো। এর মাঝে অন্যতম হলো হরমোনজনিত উচ্চ রক্তচাপ। হরমোন সমূহের মাঝে এলডেস্টেরন নামক হরমোন অনেক ক্ষেত্রেই উচ্চ রক্তচাপের পেছনে দায়ী। শতকরা ১০ ভাগ উচ্চ রক্তচাপের পেছনে এই হরমোনকে দায়ী করা হচ্ছে।
হরমোনের প্রভাব :
হরমোনটি নিঃসরণ হয় অ্যাড্রেনাল গ্রন্থি থেকে। দুই কিডনির উপরে অবস্থিত এই ক্ষুদ্র অঙ্গটির ওজন মোটে চার থেকে পাঁচ গ্রাম। এই হরমোনের নিঃসরণ বেড়ে গেলে রক্তে সোডিয়াম আয়ণ তথা লবণের পরিমাণ বেড়ে যায়। পাশাপাশি কিডনি দিয়ে নিঃসরণ হতে থাকে অতিরিক্ত পটাশিয়াম। সোডিয়াম বেড়ে গেলে রক্তের পরিমাণও বেড়ে যায়। এতে বেড়ে যায় রক্তচাপ। পটাশিয়াম কমে যাওয়ার কারণে মাংসপেশি দুর্বল হয়ে পড়ে।

ক্ষেত্রবিশেষে দুর্বলতা প্যারালাইসিসের পর্যায়ে পৌঁছে যায়। হঠাৎ করেই সমস্ত হাত পা অবশ হয়ে পড়ে। পটাশিয়াম কমে গেলে হৃদ-স্পন্দন এলোমেলো হয়ে যায়। সেজন্য বেড়ে যায় বুকের ধুকপুকানি। পটাশিয়াম এর ঘাটতিজনিত কারণে ঘন ঘন পেসাব হয়। রাতের বেলায় পেসাবের পরিমাণ বেড়ে যায়। এছাড়া এই হরমোনটির প্রভাবে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায়। ফলে দেখা দিতে পারে ডায়াবেটিস। এ হরমোনের প্রভাবে রক্তনালী ক্ষতিগ্রস্ত হয়। কখনো কখনো রক্তনালীর ভিতর গাত্রে ক্ষতি সাধিত হওয়ার কারণে কিছু কিছু অঙ্গ বিকল হয়ে পড়ে।

এই হরমোনের প্রভাবে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয় কিডনি, হৃদপি- এবং চোখ। এ কারণে এই হরমোনটি বেড়ে গেলে অল্প সময়ের মাঝেই উচ্চ রক্তচাপজনিত টার্গেট অঙ্গগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পড়ে খুব দ্রুত। 
কেন হরমোন বেড়ে যায় :
কোনো কারণে অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিতে যদি টিউমার দেখা দেয় অথবা অজানা কারণে এটি স্ফীত হয়ে যায় তাহলে সেখান থেকে অত্যধিক পরিমাণ অ্যালডেস্টেরন নিঃসরণ হতে থাকে। এমনকি এ গ্রন্থিটির ক্যান্সার ও হতে পারে হরমোন নিঃসরণের কারণ। এছাড়া হরমোন বৃদ্ধি পাওয়ার পেছনে আরও কিছু বিরল কারণ রয়েছে। 
কাদের এই হরমোন পরীক্ষা করা জরুরি :
উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত প্রায় সকলেরই এই হরমোনটির মাত্রা জেনে নেয়া জরুরি। তবে বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ হচ্ছেন—
* তরুণ বয়সে যারা উচ্চ রক্তচাপ আক্রান্ত।
* যাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য তিনটি ওষুধ যথেষ্ট নয়। 
* যাদের রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য চার-পাঁচটি ওষুধ প্রয়োজন পড়ে।
* যাদের রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা কম।
* যাদের পরিবারে ৪০ বছরের কম বয়সে স্ট্রোক কিংবা হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ার ইতিহাস রয়েছে।
* অন্য কোনো কারণে পরীক্ষা করতে গিয়ে যাদের অ্যাড্রেনাল গ্রন্থিতে টিউমার ধরা পড়েছে। 
কোনো পরীক্ষাটি দরকার :
অ্যাড্রেনাল গ্রন্থির নিঃসরণ বেশি কিনা এটা পরীক্ষা করার জন্য রক্তে এই হরমোনের মাত্রা জেনে নিতে হয়। পাশাপাশি রক্তে রেনীন নামক আরেকটি উপাদানের মাত্রা ও জেনে নিতে হয়। এ দুটির অনুপাত এর ওপর নির্ভর করে এলডেস্টেরন বেশি কিনা। এমনটি হলে এটি নিশ্চিত করার জন্য আরও কিছু পরীক্ষা-নিরীক্ষা করা প্রয়োজন পড়ে। তবে এ পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ খুবই কম সংখ্যক ডায়াগনস্টিক সেন্টারে সীমাবদ্ধ। কারণ নির্ণয় করে যথাযথ চিকিৎসা নিতে পারলে উচ্চ রক্তচাপের জন্য আলাদা ওষুধের প্রয়োজন পড়বে না। 
উচ্চ রক্তচাপের চিকিৎসা :
এড্রেনাল গ্রন্থির টিউমার কিংবা ক্যান্সার ধরা পড়লে শল্য চিকিৎসার আশ্রয় নিতে হয়। এছাড়া অন্য কারণে এলডেস্টেরন হরমোন বেড়ে গেলে 
রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য কার্যকরী নির্ধারিত কিছু ওষুধ সেবন করতে হয়। যেহেতু এই রোগে রক্তে পটাশিয়ামের মাত্রা কমে যায় সেজন্য এই মাত্রা ঠিক রাখার পাশাপাশি রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণের জন্য বিশেষ ধরনের ওষুধ সেবন করতে হয়। উচ্চ রক্তচাপ এবং ঝুঁকিপূর্ণ ব্যক্তি অবশ্যই এই হরমোনের মাত্রা পরীক্ষা করে নেবেন।
লেখক : মেডিসিন স্পেশালিস্ট ও 
এন্ডোক্রাইনোলজিস্ট, সিএমএইচ।
চেম্বার : আল রাজি হাসপাতাল (২ য় তলা) ফার্মগেট, ঢাকা।
মোবাইলঃ ০১৭৫৬১৭৩৭৬৫, ০১৭২৬০৫০৯১২

monarchmart
monarchmart