![মুক্তচিন্তা প্রকাশে ‘মাংকি ট্রায়াল’ মঞ্চস্থ মুক্তচিন্তা প্রকাশে ‘মাংকি ট্রায়াল’ মঞ্চস্থ](https://www.dailyjanakantha.com/media/imgAll/2023May/b2-2312051847.jpg)
শিল্পকলায় বাতিঘরের ‘মাংকি ট্রায়াল’ মঞ্চস্থ হয় মঙ্গলবার সন্ধ্যায়
যুক্তির জবাবে পাল্টা যুক্তির পরিবর্তে কখনো বা নেমে আসে প্রতিবন্ধকতা। যুক্তিকে পাশ কাটিয়ে দাঁড়িয়ে যায় অযৌক্তিক বিশ্বাস। থমকে যায় মত প্রকাশের স্বাধীনতা। খর্ব হয় মুক্তচিন্তার প্রকাশ। মৌলিক অধিকারের দ্বার হয় রুদ্ধ। মুক্তচিন্তা প্রকাশের সেই প্রতিবন্ধকতার চিত্র মেলে ধরা নাটক ‘মাংকি ট্রায়াল’। নাট্য সংগঠন বাতিঘরের ১৫তম এ প্রযোজনার ১৯তম মঞ্চায়ন হয় রাজধানীর শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালার প্রধান মিলনায়তনে মঙ্গলবার সন্ধ্যায়। জেরম লরেন্স ও রবার্ট এডউইন লি’র ‘ইনহেরিট দ্য উইন্ড’ অবলম্বনে ‘মাংকি ট্রায়াল’র রূপান্তর ও নির্দেশনা দিয়েছেন মুক্তনীল।
প্রায় শত বছর আগের একটি সত্য ঘটনাকে ভিত্তি করে নির্মিত হয়েছে নাটকটি। ১৯২৫ সালে আমেরিকার বহুল আলোচিত মামলা ‘স্কোপস মাংকি ট্রায়াল’। আমেরিকার একটি রাজ্য হিলসবোরো শহরের একটি পাবলিক স্কুলের বিজ্ঞান শিক্ষক বার্ট্রাম কেইটস। যিনি তৎকালীন বাটলার আইন উপেক্ষা করে ছাত্রদের সৃষ্টিবাদ ও বিবর্তনবাদ সম্পর্কিত ডারউইনের থিওরি শেখানোর জন্য দোষী সাব্যস্ত হন এবং তৎকালীন প্রতিক্রিয়াশীল ও ধর্মান্ধ মৌলবাদীরা ক্রোধে ফেটে পড়ে। রাষ্ট্রীয় আইন লঙ্ঘন করার দায়ে জেলখানায় বন্দি করা হয় বিতর্কিত সেই বিজ্ঞান শিক্ষককে। বাটলার আইন এমন এক রাষ্ট্রীয় আইন যা পাবলিক স্কুলের শিক্ষকদের স্কুলের ক্লাসে সৃষ্টিবাদের পরিবর্তে বিবর্তনবাদ শেখানো নিষিদ্ধ করে।
বিষয়টি আদালত পর্যন্ত গড়ায়। রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী হিসেবে ম্যাথিউ হ্যারিসন ব্র্যাডি এবং আসামিপক্ষের আইনজীবী হেনরি ড্রামন্ডের বিবিধ যুক্তিতর্কের উত্থান-পতনের মধ্য দিয়ে মামলাটি এক যুগান্তকারী সিদ্ধান্তে পৌঁছায়, যা ইতিহাসে এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করে। বিচার প্রক্রিয়াটি বিবর্তনের সত্যতা নিয়ে একটি জাতীয় বিতর্কের সৃষ্টি করে, বৈজ্ঞানিক প্রমাণকে জনসাধারণের সামনে আনতে সাহায্য করেছিল। মামলাটি মিডিয়াতে তীব্রভাবে আলোচিত হয় ও পুরো বিশ্বের নজর কাড়ে এবং আলোচিত হয়। এভাবেই এগিয়ে যায় ‘মাংকি ট্রায়াল’ এর কাহিনী।
প্রযোজনাটি প্রসঙ্গে নির্দেশক মুক্তনীল বলেন, যুক্তির জবাব যারা যুক্তি দিতে জানে না তাদের মাথাভর্তি অন্ধকার এবং হাতে থাকে চাপাতি। ভিন্ন চিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা একটি মৌলিক অধিকার। এটি কখনোই একটি ধর্মের, একটি বিশ্বাসের, একটি বর্ণের, একটি গোত্রের হতে পারে না। আপনার মতের সঙ্গে আমি একমত নাও হতে পারি কিন্তু আপনার মত প্রকাশের স্বাধীনতা রক্ষায় আমি আমার জীবন পর্যন্ত উৎসর্গ করতে পারি। আমার যেমন বিশ্বাস করার অধিকার আছে তেমনি অন্যেরও অবিশ্বাস করার অধিকার আছে। স্বভাবতই আমি চাইব সবাই আমার বিশ্বাস লালন করুক; কিন্তু ভিন্নমতকে যুক্তি দিয়ে ভালবেসে জয় করতে হবে, হুমকি-ধমকি বা অস্ত্র দিয়ে নয়।
আমাদের স্বাধীনতার ৫০ বছরের ইতিহাসেও বারংবার রুদ্ধ হয়েছে মুক্তচিন্তা ও মত প্রকাশের স্বাধীনতা। শত শত গ্রন্থ বাজেয়াপ্ত থেকে শুরু করে সংবাদপত্র, রেডিও টেলিভিশনসহ বিবিধ প্রচার মাধ্যম ও জনসাধারণের কণ্ঠরোধ করতে ব্যবহৃত হয়েছে বিবিধ কালো আইন। যা কিনা আমাদের প্রগতিকে টেনে-হিঁচড়ে পেছনের দিকে নিয়ে গেছে। মানুষের মুক্তচিন্তা প্রকাশের সেই প্রতিবন্ধকতার চিত্র মেলে ধরা হয়েছে এই নাটকে। নাটকটির বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয় করেছেন রাজীব দে, খালিদ হাসান রুমি, তারানা তাবাসসুম চেরী, সঞ্জয় গোস্বামী, সাদ্দাম রহমান, স্মরণ বিশ্বাস, মৃধা অয়োমী, সঞ্জয় হালদার, ইয়াসির আরাফাত, জর্জ দীপ্ত, মুহাইমিন অঞ্জন, সাবরিনা সারমিন, রাজু আহমেদ, নাসির প্রিন্স, রাজা আকন ও সাহিবা তাসনিমা মাসুমা।