ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

শেখ পরিবারের নামে থাকা স্থাপনার নাম পরিবর্তন হলেও নামফলক রয়েছে আগের মতো

ইরফান উল্লাহ, কনট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ইবি

প্রকাশিত: ২০:৪৬, ৭ জুলাই ২০২৫; আপডেট: ২০:৪৭, ৭ জুলাই ২০২৫

শেখ পরিবারের নামে থাকা স্থাপনার নাম পরিবর্তন হলেও নামফলক রয়েছে আগের মতো

ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) শেখ হাসিনা ও তার পরিবারের নামে থাকা বিভিন্ন স্থাপনার নাম কাগজে-কলমে পরিবর্তন হলেও বাস্তবে তা এখনো আগের নামেই বহাল রয়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রজ্ঞাপন অনুযায়ী নাম পরিবর্তনের কথা বলা হলেও সেসব স্থাপনায় নাম পরিবর্তনের কোনো বাস্তব প্রতিফলন ঘটেনি।

গত ২৬৭তম সিন্ডিকেট সভায় সিদ্ধান্ত হয়, শেখ হাসিনা হলের নাম হবে “জুলাই–৩৬ হল”, শেখ রাসেল হল হবে “শহীদ আনাছ হল”, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল হবে “শাহ আজিজুর রহমান হল”, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা হল হবে “উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দিকা হল” এবং ওয়াজেদ মিয়া বিজ্ঞান ভবন হবে “ইবনে সিনা বিজ্ঞান ভবন”। পরে ৫ মার্চ একটি প্রজ্ঞাপন জারির মাধ্যমে তা আনুষ্ঠানিকভাবে জানানো হয়।সরেজমিনে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাস ঘুরে দেখা যায়, প্রজ্ঞাপন জারির পর সংশ্লিষ্ট হল ও ভবনগুলোর মূল ফটকে নতুন নামযুক্ত অস্থায়ী ব্যানার লাগানো হয়। এগুলোর অনেকগুলোর অস্তিত্ব হারিয়ে গেছে ফলে এখনো আগের নাম'ই বিদ্যমান। অনেকক্ষেত্রে প্রশাসনিক কার্যক্রমেও পূর্ববর্তী নামগুলোই ব্যবহৃত হচ্ছে।

এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে মিশ্র প্রতিক্রিয়া দেখা গেছে। কেউ কেউ প্রশাসনের সমালোচনা করে বলেন, ‘ফ্যাসিস্ট পরিবারের নামে থাকা স্থাপনাগুলো শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে পরিবর্তন করলেও এখনো নামফলক যুক্ত করা হয়নি। এটা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের স্পষ্ট ব্যর্থতা। প্রশাসনের উচিত দ্রুত নামফলক যুক্ত করা।এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের বৈষম্য বিরোধী ছাত্র আন্দোলনের সমন্বয়ক এস এস সুইট বলেন, জুলাই অভ্যুত্থানের এক বছর পার হয়ে গেলেও শেখ পরিবারের নামে থাকা স্থাপনার নাম এখনো দৃশ্যমান। এটা অত্যন্ত দুঃখজনক বিষয়। অভ্যুত্থান পরবর্তী সময়ে যে যে ভবনগুলোর নাম পরিবর্তন হয়েছে দ্রুত সময়ের ভিতরে এই নামগুলো পরিবর্তন করতে হবে। আমরা এই ছোট কাজগুলো যদি করতে না পারি তাহলে বড় কাজগুলো কীভাবে করবো। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এবং সংশ্লিষ্টদের কাছে আমার আহ্বান, এগুলো দ্রুত সংশোধন করবেন।

বিশ্ববিদ্যালয় উম্মুল মু’মিনীন আয়েশা সিদ্দিকা হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. একেএম রাশেদুজ্জামান বলেন, নাম পরিবর্তনের বিষয়ে হল টিউটরদের নিয়ে মিটিং হয়েছে এবং দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে একজনকে। মিস্ত্রির সাথেও অলরেডি কথা বলেছি। অতিশীঘ্রই এটি বাস্তবায়ন করা হবে। আর যাবতীয় নথিপত্রের নাম ও হলের অ্যাকাউন্টের নাম পরিবর্তন করা হয়েছে। 

শহীদ আনাছ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. মো. আব্দুল কাদের বলেন, আমাদের হলের নাম ফলক যেহেতু টাইলসের তাই প্রথমে এটি ভাঙতে হবে তারপরে নতুন করে টাইলসের বরাদ্দ দিতে হবে। আমাদের সামনের মিটিংয়ে এই বিষয়টি প্রশাসনের নিকট উত্থাপন করবো। এছাড়াও হলের পূর্বের নামযুক্ত কিছু নথিপত্র ছিল সেগুলো শেষ হলে আমরা নতুনগুলো ব্যবহার করবো। 

জুলাই-৩৬ হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. একেএম শামসুল হক বলেন, আমরা নামের বিষয়ে একটু দ্বিধাদ্বন্দ্বে ছিলাম। সমাধান হওয়ার পর আমরা নামের অর্ডার দিয়েছি। আগামী সোমবারের মধ্যে কাজটি কমপ্লিট হবে। এছাড়া হলের নথিপত্রে পূর্বের নাম অনেক আগেই আমরা পরিবর্তন করেছি।

শাহ আজিজুর রহমান হলের প্রভোস্ট অধ্যাপক ড. এটিএম মিজানুর রহমান বলেন, প্রশাসনের ফান্ডে টাকা কম ছিল তাই আমাদেরকে আপাতত ব্যানার লাগানোর কথা বলেছেন। আশা করছি বিশ্ববিদ্যালয় নতুন অর্থ বছরে নাম পরিবর্তনের বিলটিও পাশ হবে। এছাড়া হলের যাবতীয় নথিপত্রে আমরা নতুন নামে কার্যক্রম চালাচ্ছি। 

প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতির বক্তব্য তাকে জানালে তিনি বলেন, স্যার নতুন দায়িত্ব পেয়েছেন তাই হয়ত বিষয়টা সম্পর্কে অবগত নন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভোস্ট কাউন্সিলের সভাপতি অধ্যাপক ড. গফুর গাজি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন যেহেতু স্থাপনাগুলোর নাম পরিবর্তন করে দিয়েছেন এখন এটা বাস্তবায়নের দায়িত্ব হল প্রভোস্টদের উপর বর্তায়। শুধু হলের নাম না, হলের ভিতরে নিষিদ্ধ সংগঠনের বিভিন্ন লেখা এখনো দেখা যাচ্ছে এগুলোর প্রতিও নজর দিতে হবে। 
পরবর্তী প্রভোস্ট কাউন্সিলের মিটিংয়ে আমি বিষয়টি উত্থাপন করবো এবং সকল প্রবস্তুদের এ বিষয়ে অনুরোধ করবো। 

রাজু

×