
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের স্বপ্ন দেখা শিক্ষার্থীদের জন্য F-1 ভিসা একটি অপরিহার্য ধাপ। এই নন-ইমিগ্র্যান্ট ভিসা আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থীদের যুক্তরাষ্ট্রের স্বীকৃত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পূর্ণকালীন পড়াশোনার সুযোগ করে দেয়। সঠিক প্রক্রিয়া অনুসরণ করে এবং প্রয়োজনীয় কাগজপত্র প্রস্তুত রেখে এই ভিসার জন্য আবেদন করা সম্ভব। নিচে F-1 ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া, প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, ফি এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ তথ্য বিস্তারিতভাবে তুলে ধরা হলো।
F-1 ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া (ধাপসমূহ):
১. শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ভর্তি এবং I-20 ফর্ম সংগ্রহ:
যুক্তরাষ্ট্রের Student and Exchange Visitor Program (SEVP) দ্বারা অনুমোদিত কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে (বিশ্ববিদ্যালয়, কলেজ বা ভাষা স্কুল) ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর, আপনাকে সেই প্রতিষ্ঠান থেকে Form I-20 (Certificate of Eligibility for Nonimmigrant Student Status) সংগ্রহ করতে হবে। এটি আপনার F-1 ভিসার যোগ্যতার প্রাথমিক প্রমাণ। এই ফর্মে আপনার SEVIS আইডি, কোর্সের সময়কাল এবং আনুমানিক খরচ উল্লেখ থাকে।
২. SEVIS ফি (I-901) পরিশোধ:
I-20 ফর্ম পাওয়ার পর আপনাকে Student and Exchange Visitor Information System (SEVIS) ফি পরিশোধ করতে হবে। বর্তমানে এই ফি $350 (পরিবর্তন সাপেক্ষ)। এই ফি পরিশোধের রসিদ সংরক্ষণ করা অত্যন্ত জরুরি।
৩. DS-160 ফর্ম পূরণ ও সাবমিট:
অনলাইনে Nonimmigrant Visa Application, Form DS-160 পূরণ করতে হবে। এটি মার্কিন স্টেট ডিপার্টমেন্টের কনস্যুলার ইলেকট্রনিক অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারের ওয়েবসাইটে পাওয়া যায়। ফর্মটি নির্ভুলভাবে পূরণ করে একটি পাসপোর্ট আকারের ছবি আপলোড করতে হবে। ফর্ম সাবমিট করার পর একটি নিশ্চিতকরণ পৃষ্ঠার বারকোডসহ প্রিন্ট নিয়ে রাখতে হবে।
৪. ভিসা আবেদন ফি (MRV ফি) পরিশোধ:
DS-160 ফর্ম পূরণের পর ভিসা আবেদন ফি (MRV Fee) পরিশোধ করতে হবে। বর্তমানে এই ফি $185 (পরিবর্তন সাপেক্ষ)। এই ফি পরিশোধের রসিদ সংরক্ষণ করুন।
৫. ভিসা সাক্ষাৎকারের সময় নির্ধারণ:
ফি পরিশোধের পর আপনাকে যুক্তরাষ্ট্রের দূতাবাস বা কনস্যুলেটের ওয়েবসাইটে গিয়ে আপনার ভিসা সাক্ষাৎকারের সময় নির্ধারণ করতে হবে। বাংলাদেশে সাধারণত দুটি অ্যাপয়েন্টমেন্ট প্রয়োজন হয়: একটি ভিসা অ্যাপ্লিকেশন সেন্টারে (VAC) বায়োমেট্রিক তথ্য (আঙুলের ছাপ ও ছবি) সংগ্রহের জন্য, এবং আরেকটি মার্কিন দূতাবাসে মূল সাক্ষাৎকারের জন্য।
৬. সাক্ষাৎকারে অংশগ্রহণ:
নির্ধারিত তারিখে সমস্ত প্রয়োজনীয় কাগজপত্র সহ সাক্ষাৎকারে উপস্থিত হন। কনস্যুলার অফিসার আপনার পড়াশোনার উদ্দেশ্য, আর্থিক সংগতি এবং পড়াশোনা শেষে দেশে ফেরার উদ্দেশ্য যাচাই করবেন।
F-1 ভিসার জন্য প্রয়োজনীয় কাগজপত্র:
সাক্ষাৎকারের সময় নিম্নলিখিত মূল কাগজপত্রগুলো অবশ্যই সাথে রাখতে হবে:
- বৈধ পাসপোর্ট (যুক্তরাষ্ট্রে আপনার প্রত্যাশিত অবস্থানের তারিখের পর অন্তত ৬ মাস মেয়াদ থাকতে হবে)।
- Form I-20 (মূল কপি)।
- DS-160 নিশ্চিতকরণ পৃষ্ঠার প্রিন্ট (বারকোড সহ)।
- SEVIS ফি পরিশোধের রসিদ।
- ভিসা আবেদন ফি (MRV ফি) পরিশোধের রসিদ।
- সাম্প্রতিক পাসপোর্ট আকারের ছবি (মার্কিন ভিসা ছবির নিয়মাবলী অনুযায়ী)।
- সাক্ষাৎকারের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিশ্চিতকরণ চিঠি।
এছাড়াও, নিম্নলিখিত সাপোর্টিং ডকুমেন্টস প্রয়োজন হতে পারে:
- শিক্ষাগত যোগ্যতার প্রমাণপত্র: সকল শিক্ষাগত সনদের মূল কপি এবং ট্রান্সক্রিপ্ট (যেমন: এসএসসি, এইচএসসি, স্নাতক/স্নাতকোত্তর)।
- ইংরেজি ভাষার দক্ষতার প্রমাণপত্র: TOEFL, IELTS, Duolingo বা অন্য কোনো স্বীকৃত পরীক্ষার স্কোর।
- আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণ:
- ব্যাংক স্টেটমেন্ট (সাধারণত এক বছরের টিউশন ফি এবং জীবনযাত্রার খরচ বহন করার মতো পর্যাপ্ত তহবিল থাকতে হবে)।
- স্কলারশিপ বা আর্থিক অনুদানের চিঠি (যদি থাকে)।
- পৃষ্ঠপোষকের (Sponsor) আর্থিক সচ্ছলতার প্রমাণপত্র (ব্যাংক স্টেটমেন্ট, আয়ের উৎস, অ্যাফিডেভিট অব সাপোর্ট)।
- দেশে ফেরার উদ্দেশ্যর প্রমাণ:
- বাংলাদেশে স্থায়ী বসবাসের প্রমাণ (যেমন: সম্পত্তির দলিল, পারিবারিক বন্ধন, কর্মজীবনের প্রমাণ)।
- পড়াশোনা শেষে দেশে ফিরে আসার সুস্পষ্ট পরিকল্পনা।
F-1 ভিসার ফি:
- SEVIS I-901 ফি: $350 USD
- MRV (ভিসা আবেদন) ফি (DS-160): $185 USD
- সর্বমোট আনুমানিক ফি: $535 USD (অন্যান্য ফি বা সেবামূল্য যোগ হতে পারে)।
গুরুত্বপূর্ণ তথ্য ও পরামর্শ:
- সময়মত আবেদন: কোর্স শুরুর তারিখের ১২০ দিন আগে F-1 ভিসার জন্য আবেদন করা যায়। তবে, যুক্তরাষ্ট্র প্রবেশের অনুমতি সাধারণত কোর্সের ৩০ দিন আগে থেকে দেওয়া হয়। ভিসা প্রক্রিয়াকরণের সময় লাগতে পারে, তাই দ্রুত আবেদন করা উচিত।
- সাক্ষাৎকারের প্রস্তুতি: সাক্ষাৎকারে প্রশ্নগুলোর উত্তর আত্মবিশ্বাসের সাথে ও সততার সাথে দিন। আপনার পড়াশোনার পরিকল্পনা, কেন এই নির্দিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয় বেছে নিয়েছেন, পড়াশোনা শেষে আপনার কর্মপরিকল্পনা এবং দেশে ফেরার উদ্দেশ্য সম্পর্কে স্পষ্ট ধারণা রাখুন।
- আর্থিক সংগতি: ভিসার জন্য আর্থিক সচ্ছলতা একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। আপনার টিউশন ফি এবং জীবনযাত্রার খরচ নির্বাহ করার জন্য পর্যাপ্ত তহবিল আছে তা প্রমাণ করতে হবে।
- ফেরত আসার উদ্দেশ্য: কনস্যুলার অফিসার আপনার দেশে ফিরে আসার উদ্দেশ্য সম্পর্কে নিশ্চিত হতে চাইবেন। আপনার পরিবার, সম্পত্তি বা কর্মজীবনের সাথে আপনার দেশের দৃঢ় সম্পর্ক রয়েছে, এমন প্রমাণ দেখাতে পারলে তা সহায়ক হবে।
যুক্তরাষ্ট্রে উচ্চশিক্ষা অর্জনের জন্য F-1 ভিসা একটি জটিল প্রক্রিয়া হলেও, সঠিক প্রস্তুতি এবং তথ্য সহকারে আবেদন করলে তা সফল হওয়া সম্ভব। যেকোনো তথ্যের জন্য সরাসরি মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইট অথবা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের আন্তর্জাতিক ছাত্র বিষয়ক অফিসে যোগাযোগ করা উচিত।
Jahan