ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ জুন ২০২৫, ২৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

নড়াইলে অনুষ্ঠিত হলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ঈদ পুনর্মিলনী

নিজস্বসংবাদদাতা,নড়াইল

প্রকাশিত: ১৪:৪৫, ৮ জুন ২০২৫; আপডেট: ১৪:৪৬, ৮ জুন ২০২৫

নড়াইলে অনুষ্ঠিত হলো ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের ঈদ পুনর্মিলনী

ছবিঃ জনকণ্ঠ

ঈদের আনন্দকে ভাগাভাগি করে নেয়ার এক অনবদ্য উদ্যোগ হিসেবে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান অনুষ্ঠিত হয়েছে নড়াইল শহরে। ইসলামিক ইউনিভার্সিটি স্টুডেন্ট ফোরাম, নড়াইলের আয়োজনে এই জমজমাট ও আবেগঘন অনুষ্ঠান রবিবার, ০৮ জুন, শহরের শেখ রিজেন্সি গেস্ট হাউজে অনুষ্ঠিত হয়।


সকাল ১১টায় শেখ রিজেন্সি গেস্ট হাউজ থেকে একটি বর্ণাঢ্য র‌্যালি বের হয়ে নড়াইল শহরের প্রধান প্রধান সড়ক প্রদক্ষিণ করে পুনরায় একই স্থানে এসে শেষ হয়। প্রাক্তন ছাত্র-ছাত্রীদের হাতে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের পতাকা ও ব্যানার, মুখে চেনা হাসি ও হৃদয়ে পুরোনো দিনের স্মৃতি এই আয়োজন যেন হয়ে ওঠে এক ঐতিহাসিক মুহূর্ত।


অনুষ্ঠানের সঞ্চালনার দায়িত্বে ছিলেন ৯৭-৯৮ ব্যাচের ইংরেজি বিভাগের ছাত্র মোঃ হাসান হাবিব। তিনি বলেন, “আজ আমরা এখানে কেবল আনন্দ করতে আসিনি, আমরা এসেছি নিজেদের বন্ধনকে নতুন করে দৃঢ় করতে।”
২০০০-২০০১ ব্যাচের হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের প্রাক্তন ছাত্র এস এম মহব্বত হোসেন অনুষ্ঠানটির স্বাগত বক্তব্য প্রদান করেন। তিনি বলেন, "ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা দেশের বিভিন্ন স্থানে ছড়িয়ে পড়লেও হৃদয়ের টান কখনও কমে না। এই পুনর্মিলনী আমাদের সেই টানকেই দৃঢ় করেছে।"


৯৩-৯৪ ব্যাচের হাদীস ও জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ার মোঃ মাকসুদুর রহমান শুভেচ্ছা বক্তব্য প্রদানকালে বলেন, “ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় শুধু একটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান নয়, এটি একটি পরিবার। আজ সেই পরিবারের সদস্যরা একত্রিত হয়ে নিজেদের অতীত, বর্তমান ও ভবিষ্যতের গল্প বলছে।”


অনুষ্ঠানের মূল পর্বে উপস্থিত প্রাক্তন শিক্ষার্থীরা একে একে তাদের অনুভূতি ও অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন। অনেকেই বলেন, “আমরা চাকরি, পরিবার বা ব্যস্ত জীবনের মধ্যে একে অন্যকে ভুলে গিয়েছিলাম। কিন্তু আজকের দিন আমাদের নতুন করে এক করে দিয়েছে।” কারও চোখে পানি, কারও মুখে হাসি কিন্তু সবার অনুভূতির কেন্দ্রবিন্দু ছিল ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় ও তার স্বর্ণালী দিনগুলো।


অনুষ্ঠানের সমাপনী বক্তব্য প্রদান করেন ৯১-৯২ ব্যাচের আইন বিভাগের ছাত্র মোঃ তারিকুজ্জামান লিটু। তিনি বলেন, “আমরা যেন প্রতিবছর এমন আয়োজন করতে পারি। আমাদের এই বন্ধন চিরস্থায়ী হোক।”
এই আয়োজনকে সম্মানিত করতে উপস্থিত ছিলেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের হিসাব বিজ্ঞানের অধ্যাপক ড. মোঃ আবু সিনা। তিনি বলেন, “শিক্ষা জীবনের স্মৃতি মানুষকে জীবনে চলার শক্তি দেয়। এই পুনর্মিলনী প্রমাণ করলো, ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীরা নিজেদের শিকড় ভুলে যায়নি।”


আয়োজক ফোরামের সদস্যরা জানান, আগামী বছর থেকে এই পুনর্মিলনী আয়োজনকে আরও বড় পরিসরে, আরও বেশি সংখ্যক প্রাক্তন ছাত্রছাত্রীদের নিয়ে আয়োজন করার পরিকল্পনা নেয়া হয়েছে। সেই সাথে থাকবে বিভিন্ন কর্মশালা, সেমিনার ও নেটওয়ার্কিং কার্যক্রম, যাতে করে ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থীরা পেশাগত এবং ব্যক্তিগতভাবে একে অপরের পাশে দাঁড়াতে পারেন।


অনুষ্ঠানে ছিল পুরোনো ছবি নিয়ে চিত্র প্রদর্শনী, যেখানে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসরুম, হোস্টেল, ক্যান্টিন ও ক্যাম্পাস জীবনের নানা মুহূর্ত তুলে ধরা হয়। অনেকেই ছবি নিয়ে সেলফি তোলেন এবং সামাজিক মাধ্যমে পোস্ট করেন।


এই অনুষ্ঠান কেবল একটি পুনর্মিলনী ছিল না, এটি ছিল ভ্রাতৃত্ববোধ, বন্ধুত্ব এবং ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসার বহিঃপ্রকাশ। 
নড়াইল শহরে অনুষ্ঠিত এই ঈদ পুনর্মিলনী অনুষ্ঠান শুধুমাত্র এক দিনের আয়োজন ছিল না; এটি ছিল প্রাক্তনদের জীবনে স্মরণীয় একটি অধ্যায়। ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক শিক্ষার্থীদের মিলনমেলা সকলকে স্মরণ করিয়ে দিল যেখানেই থাকি না কেন, আমরা একত্রিত হতে পারি ভালোবাসা ও শ্রদ্ধার বন্ধনে। 

সাব্বির

×