ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ প্রকল্পে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ

সিনিয়র রিপোর্টার

প্রকাশিত: ১৪:২৪, ৩১ মে ২০২৫

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের ভবন নির্মাণ প্রকল্পে নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনতলা বিশিষ্ট বিএনসিসি ভবন নির্মাণ প্রকল্পে পরামর্শক সেবা নির্বাচন প্রক্রিয়ায় নিয়ম লঙ্ঘনের অভিযোগ উঠেছে। স্বাধীন জুরি প্যানেলের মাধ্যমে কারিগরি এবং আর্থিক উভয় ক্ষেত্রেই সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে প্রথম স্থান অর্জনের পরও দেশের শীর্ষস্থানীয় একটি পরামর্শক প্রতিষ্ঠানকে না জানিয়েই অন্য একটি প্রতিষ্ঠানকে পরামর্শক হিসেবে চূড়ান্ত করতে যাচ্ছে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়—যা সম্পূর্ণরূপে নিয়ম ও বিধির লঙ্ঘন বলে অভিযোগ উঠেছে।

গত ২৮ মে ২০২৫ তারিখে অনুষ্ঠিত আর্থিক প্রস্তাব খোলার সভায় ‘ইনোভেট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট’ (আইইডি)-কে সর্বোচ্চ নম্বরপ্রাপ্ত এবং সর্বনিম্ন অর্থনৈতিক প্রস্তাবদাতা হিসেবে ঘোষণা করা হয়। যা RFP Section 01, ITC Clause 39.1 অনুযায়ী সর্বোচ্চ সম্মিলিত স্কোরধারী প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচিত হয় এবং প্রথম স্থান অধিকার করে।

তবে, Public Procurement Act (PPA) ২০০৬ এর ধারা ৫৯(৩)(ক), ৬০(২) এবং Public Procurement Rules (PPR) ২০০৮ এর বিধি ১২১(৩), ১২২ অনুযায়ী সুস্পষ্ট নিয়ম থাকা সত্ত্বেও প্রকল্প কর্তৃপক্ষ প্রথম স্থানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কোনো আলোচনা ছাড়াই দ্বিতীয় স্থানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে চুক্তি আলোচনার প্রক্রিয়া শুরু করেছে। অথচ দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানটি সম্মিলিত স্কোরে ১০.১৫ পয়েন্টে পিছিয়ে ছিল।

প্রথম স্থানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠানের পক্ষ থেকে জানানো হয়, বিধি অনুযায়ী প্রথম স্থানে থাকা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজের সার্বিক বিষয়ে আলোচনা (নেগোশিয়েশন) করতে হবে। যদি তারা প্রস্তাবে অসম্মত হয় বা অপারগতা প্রকাশ করে, তাহলে আনুষ্ঠানিকভাবে তাদের জানিয়ে দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করা যেতে পারে। কিন্তু এ ক্ষেত্রে তার কিছুই অনুসরণ করা হয়নি। প্রথম স্থানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আইইডি-কে না জানিয়েই সরাসরি দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রতিষ্ঠানকে মৌখিকভাবে কাজ প্রদান করা হয়েছে, যা নিয়ম লঙ্ঘন এবং অসৎ উদ্দেশ্যপ্রণোদিত। আইইডি কর্তৃপক্ষ প্রধান প্রকৌশলীকে লিখিতভাবে অভিযোগ প্রদান করলেও এখনো কোনো উত্তর পায়নি।

এ বিষয়ে ইনোভেট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর চট্টগ্রাম অঞ্চলের ব্যবস্থাপক এবং প্রতিষ্ঠানের প্রতিনিধিত্বকারী মো. মনতাসির আহমেদ বলেন, “নিয়ম অনুসরণ না করে দ্বিতীয় স্থানে থাকা প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে আলোচনা শুরু করায় আমরা গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করছি। এটি স্বচ্ছতা ও ন্যায্য প্রতিযোগিতার পরিপন্থী এবং সম্পূর্ণ অনিয়ম।”

এ বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল কার্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী সৈয়দ জাহাঙ্গীর ফজল বলেন, “আমাদের বিরুদ্ধে এই অভিযোগ মিথ্যা। তারা আমাদের সঙ্গে আলোচনা করেছেন এবং বাজেটের মধ্যে কাজ করতে অপারগতা প্রকাশ করেছেন। তবে আমাদের ভুল হয়েছে যে বিষয়টি তাদের কাছ থেকে লিখিতভাবে নিইনি। আমি তাদের অভিযোগের চিঠি পেয়েছি, এর উত্তর দেব।”

এ প্রসঙ্গে ইনোভেট ইঞ্জিনিয়ারিং অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট-এর প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা প্রকৌশলী রানা মাসুদ বলেন, “পিপিআর অনুযায়ী একাধিক প্রতিষ্ঠানকে একযোগে আলোচনার জন্য ডাকা যায় না। প্রথম স্থানপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান আনুষ্ঠানিকভাবে অপারগতা প্রকাশ করলে তবেই দ্বিতীয় প্রতিষ্ঠানকে আলোচনার জন্য আহ্বান করা যেতে পারে। প্রস্তাবিত বাজেট নির্ধারিত বাজেটের চেয়ে বেশি হলে তা নেগোশিয়েশন সভায় প্রথম প্রতিষ্ঠানের সামনে উন্মোচন করতে হয়। কিন্তু আমাদের প্রতিনিধির সঙ্গে কারিগরি ও আর্থিক আলোচনা অসম্পূর্ণ রেখে বাজেট না জানিয়ে তড়িঘড়ি করে স্থান ত্যাগ করতে বলা হয়। পুরো প্রক্রিয়াটিই পিপিআর নিয়ম লঙ্ঘন করে পরিচালিত হয়েছে এবং আমরা মনে করি এর পেছনে অসৎ উদ্দেশ্য রয়েছে। আমরা কর্তৃপক্ষকে যথাযথ নিয়ম অনুসরণ করে আলোচনা প্রক্রিয়া সম্পন্ন করার আহ্বান জানাচ্ছি।”

সজিব

×