ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ০৩ জুন ২০২৫, ২০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

পাবিপ্রবির ছাত্র হল-১, সিট বরাদ্দের আগেই দখল

আহসান হাবীব আতিক, ‎পাবিপ্রবি

প্রকাশিত: ২০:১৬, ১ জুন ২০২৫

পাবিপ্রবির ছাত্র হল-১, সিট বরাদ্দের আগেই দখল

ছবি: দৈনিক জনকন্ঠ।

‎পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (পাবিপ্রবি) ছাত্র হল-১ এ সিট বরাদ্দের আগেই দখল করে নেওয়া হচ্ছে সিট। ফাঁকা হওয়া সিটগুলোতে শিক্ষার্থীরা প্রশাসনিক বরাদ্দের আগেই রাজনৈতিক বড় ভাই, বিভাগের বড় ভাই কিংবা কোন সিনিয়র বড় ভাইয়ের মাধ্যমে উঠে পড়ছেন। এ বিষয়টি প্রশাসনের নজরে আসলেও কার্যকর কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ না করায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

‎খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত বছরের ৫ আগস্ট স্বৈরাচারী হাসিনা সরকারের পতনের পর হলে মেধার ভিত্তিতে সিট প্রদানের দাবি ওঠে। শিক্ষার্থীদের দাবির প্রেক্ষিতে ছাত্র হলের তৎকালীন প্রশাসন গত বছরের ২৩ সেপ্টেম্বর ৫১৩টি সিটের মধ্যে ৩৬৬টি সিট মেধার ভিত্তিতে শিক্ষার্থীদের বরাদ্দ দেন। বাকী ১৪৭টি সিট পূর্বে বরাদ্দ থাকায় নতুন করে সেগুলো বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। মেধার ভিত্তিতে হলে সিট বরাদ্দের পর থেকে প্রশাসনের ওপর শিক্ষার্থীদের আস্থা ফিরতে থাকে। তবে কয়েক মাস পর পড়াশোনা শেষ হয়ে যাওয়া শিক্ষার্থীরা হলের সিট ছাড়তে শুরু করলে ছাত্রলীগের সময়কার মত হলের সিট দখল হতে শুরু করে। এ বিষয়গুলো হল প্রশাসনের নজরে আসলেও নামে মাত্র বিজ্ঞপ্তি দিয়ে হল প্রশাসন দায় সারছেন বলে শিক্ষার্থীদের অভিযোগ।

হল প্রশাসন সূত্রে জানা যায়, চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি ছাত্রত্ব শেষ হওয়া শিক্ষার্থীদের ফেব্রুয়ারি ১০ তারিখের মধ্যে হল ছাড়ার নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি দেন হল প্রশাসন। শিক্ষার্থীরা এ নির্দেশ না মানলে হল হল প্রশাসন রুমে রুমে গিয়ে হলে থাকা অবৈধ শিক্ষার্থীদের খুঁজে বের করেন। ৩ মার্চ ২৭ জন শিক্ষার্থীর একটি তালিকা প্রকাশ করে ৮ মার্চের মধ্যে তাদেরকে হলের সিট ছাড়ার নির্দেশ দেন হল প্রশাসন। এ তালিকার কয়েকজন হল ছাড়লেও বাকিরা হলের সিট ছাড়েননি।

‎হলে থাকা শিক্ষার্থীরা জানান, ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষ এবং ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের যে শিক্ষার্থীরা হলে ছিলেন তাদের অধিকাংশই হলের সিট ছেড়েছেন। কিন্তু হলের এই সিটগুলো বর্তমান ফাঁকা নেই। এই সিটগুলোতে যারা রাজনীতি করতেন তারা তাদের রাজনৈতিক ছেলেদের তুলেছেন, যারা রাজনীতি করতেন না তাদের বিভাগের ছোট ভাই কিংবা কাছের কোন জুনিয়রকে তুলে দিয়ে চলে গেছেন। ফলে ফাঁকা হওয়া সবগুলো সিটই বর্তমানে দখলে আছে। ফাঁকা সিটগুলোতে উঠেছেন তাদের কাউকে প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিট বরাদ্দ দেওয়া হয়নি ফলে মাসের পর মাস তারা হলে অবৈধভাবে আছেন।  

‎শিক্ষার্থীরা বলছেন, প্রশাসনের পক্ষ থেকে সিট বরাদ্দের আগেই সিট যেভাবে দখল হচ্ছে সেটা ছাত্রলীগের সময়কার সংস্কৃতিকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। ছাত্রলীগের সময়ে যেমন হলের সিট খালির বিজ্ঞপ্তির আগেই ছাত্রলীগ যেভাবে তাদের নেতা-কর্মীদের হলে তুলে দিয়ে দিনের পর দিন অবৈধভাবে থাকতো, সরকার পতনের বছর না যেতেই হলে পুরোনো সেই সংস্কৃতি চালু হচ্ছে।  

‎ইনফরমেশন অ্যান্ড কমিউনিকেশন ইঞ্জিনিয়ারিং (আইসিই) বিভাগের শিক্ষার্থী আল আমিন হোসেন বলেন, ‘৫ তারিখের পরে আমাদের প্রত্যাশা ছিল হলে মেধার ভিত্তিতে সিট দেওয়া হবে। সেটার একবার দেওয়াও হয়েছে। কিন্তু এরপর থেকে হলের সিট নিয়ে যা শুরু হয়েছে সেটা আমাদের ছাত্রলীগের সময়কালকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে। যে শিক্ষার্থীর রাজনৈতিক বড় ভাই আছে কিংবা ক্ষমতাধর বড় ভাই আছে সেই হলে উঠতে পারছে। আর যার রাজনৈতিক কিংবা ক্ষমতাধর বড় ভাই নাই সে মেধাবী হলেও হলে উঠতে পারছেনা। প্রশাসন নতুন ভাবে ডিপার্টমেন্ট গুলোকে সমতার ভিত্তিতে সিট এলোটমেন্ট না দেওয়া পর্যন্ত এই সংকট কাটবে না।’

‎ফার্মেসি বিভাগের শিক্ষার্থী ওয়াহিদুর রহমান বলেন, ‘মেধার ভিত্তিতে হলে সিট প্রদান করা হচ্ছে এবং সামনে হবে এমন কথা সরকার পতনের পর থেকে শুনে আসছি। কিন্তু সরকার পতনের এখনো বছরও শেষ হয়নি তার আগেই হলের সিট দখলের যে রাজনীতি শুরু হয়েছে আর কিছুদিন গেলে হলের সিটের যে কী অবস্থা হবে সেটা এমনিতে বুঝা যাচ্ছে। সিট বরাদ্দের আগেই সিট দখল করার যে সংস্কৃতি তৈরি হয়েছে তার মাধ্যমে হল প্রশাসনের ব্যর্থতা একেবারে স্পষ্ট। আমরা আর সিট দখলের সংস্কৃতি দেখতে চাইনা, আমরা চাই হলে সিট বণ্টন হোক মেধার ভিত্তিতে এবং হলে কেউ অবৈধভাবে যেন হলে কেউ না থাকতে পারে সে ব্যাপারে হল প্রশাসনের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।’

‎এ বিষয়ে হল প্রভোস্ট (চলতি দ্বায়িত্ব) ড. মো: শাহজাহান আলী বলেন, ‘আমি নতুন যোগদান করেছি। এরপরও বলতে চাই এখন আর সিট বরাদ্দ ছাড়া সিট দখল এবং অবৈধভাবে হলে থাকার কোনো সুযোগ নেই। আমরা ইতোমধ্যে হলের সবগুলো রুমে অভিযান চালিয়েছি। যেসব শিক্ষার্থী এতোদিন অবৈধভাবে অবস্থান করছিলো আমরা তাদের শনাক্ত করেছি। খুব শীঘ্রই নতুন করে হলে উঠার বিজ্ঞপ্তি দেওয়া হবে। আমরা আশা করছি সামনের দিনগুলোতে হলের পরিবেশ আরও সুন্দর ও সুশৃঙ্খল হবে।’

মিরাজ খান

×