ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ০৫ অক্টোবর ২০২৪, ১৯ আশ্বিন ১৪৩১

ঘরের কাছে কলেজ খুঁজছেন অনেকে

শিক্ষা প্রশাসনে সপ্তাহের শেষ দিকে ব্যাপক রদবদল

আসিফ হাসান কাজল

প্রকাশিত: ২৩:০২, ১৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪

শিক্ষা প্রশাসনে সপ্তাহের শেষ দিকে ব্যাপক রদবদল

শিক্ষা প্রশাসনে ব্যাপক রদবদল

শিক্ষা প্রশাসনে সপ্তাহের শেষ কর্মদিবসে বিসিএস সাধারণ শিক্ষা ক্যাডারদের বদলি-পদায়ন বেশি হচ্ছে। বদলি পদায়নে কারও কপাল খুলছে, প্রশাসনে বসে থাকা অনেক ক্যাডারের কপাল পুড়ছে। শেখ হাসিনা সরকার পতনের পর শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব থেকে শুরু করে মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তর মহাপরিচালক, জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) চেয়ারম্যান, শিক্ষা প্রকৌশল অধিদপ্তরের প্রধান প্রকৌশলী, পরিদপ্তরের পরিচালক, যুগ্ম পরিচালক, একাধিক সরকারি কলেজের অধ্যক্ষকে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। নতুন করে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে এসব পদে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, শিক্ষার প্রশাসনের মাথাগুলো সরিয়ে দেওয়ার পর এখন মধ্যম ও নিচের সারির কর্মকর্তাদের সরিয়ে দেওয়ার প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। আর বেশিরভাগ অর্ডার সপ্তাহের শেষ দিকে বুধ-বৃহস্পতিবার মন্ত্রণালয় থেকে প্রকাশ করা হচ্ছে। এর ফলে শিক্ষা প্রশাসনের সব জায়গায় এই দুই দিন বদলি আতঙ্ক দেখা যাচ্ছে। অন্যদিনেও বদলির আদেশ প্রকাশ করা হলে সেই হার কম।
সরেজমিন শিক্ষা ভবন ঘুরে দেখা যায়, দীর্ঘদিন এনসিটিবি, শিক্ষা বোর্ড ও ঢাকার কলেজগুলোতে যেসব ক্যাডার ঘুরে ফিরে পদায়ন পেয়েছেন তারা ঢাকার অদূরে ভাল কলেজ খুজছেন। এসব শিক্ষা কর্মকর্তার ভাষ্য, সরকারি চাকরিতে বদলি প্রক্রিয়া মেনে নিতেই হবে। তবে রাজনৈতিক কারণে বিভিন্ন দ্বীপ এলাকা ও দুর্গম অঞ্চলে তাদের বদলি করা হচ্ছে।

রাজনৈতিক কারণে তাদের সহকর্মীরাই বদলি প্রক্রিয়ায় প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। সেকারণে এসব কর্মকর্তা নিজ এলাকার আশেপাশের কলেজে পদ ফাঁকা থাকলে বা ঢাকার অদূরের কলেজগুলোতে বদলির চেষ্টা করছেন।
মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক পদে কর্মরত ছিলেন এক কর্মকর্তা। সম্প্রতি তাকে মানিকগঞ্জের ঘিওর এলাকার একটি কলেজে পোস্টিং করা হয়েছে। ঢাকা থেকে কিভাবে কলেজে যাবেন এ নিয়ে তিনি শিক্ষা ভবনের একটি কক্ষে সহকর্মীদের সঙ্গে আলোচনা করছেন।

এই কর্মকর্তা জানান, শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে এখন শিক্ষা ক্যাডারদের আনাগোনা অনেক বেশি। বদলির জন্য কেউ ধরণা দিচ্ছেন। কেউ আবার কারও বদলি আটকাতে তদবির করছেন। অনেকে দেখা যাচ্ছে আওয়ামী লীগ সরকারের সময় শিক্ষা প্রশাসনে কর্মরত ছিলেন। নানা অভিযোগ ও দুর্নীতির কারণে তাদেরকে তৎকালীন শিক্ষা মন্ত্রী ডা. দীপু মনি ও মহিবুল হাসান চৌধুরী নওফেলের সময় সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।

কিন্তু দেখা যাচ্ছে এখন তারাই আওয়ামী লীগ সরকারের হাতে নির্যাতিত  ও  বৈষম্যের শিকার দাবি করে ভালো পদায়ন চাইছেন। বর্তমান মন্ত্রণালয়ে এ বিষয়ে যাচাই-বাছাইয়ের সুযোগ ও সময় কম হওয়ায় তারা আবারও ঢাকার ভাল জায়গায় ফেরত আসছেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে এনসিটিবির এক কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষা প্রশাসনের সব স্তরে দ্রুত বদলি-পদায়নের কারণে এক ধরনের বিশৃঙ্খলা তৈরি হচ্ছে। অনেক গ্রামের কলেজ থেকে একাধিক ক্যাডারকে বিশেষায়িত জায়গায় নিয়ে আসা হচ্ছে। কিন্তু দেখা যাচ্ছে তাদের কাজের অভিজ্ঞতা নেই। সরকারের এ বিষয়ে ধীরে চলা নীতি শিক্ষা কর্মকর্তা ও প্রশাসনিকভাবে সুস্থ পরিবেশ বিরাজ করতে ভালো ভূমিকা রাখবে।

সর্বশেষ বুধবার শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে দেখা যায়, শিক্ষা ক্যাডারের সাত কর্মকর্তাকে বদলি করা হয়েছে। এদের মধ্যে অনেকেই দীর্ঘদিন ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে মাউশিতে ছিলেন। তবে ওয়েবসাইটের বাইরেও অনেক পদস্থ কর্মকর্তাকে সরিয়ে দেওয়া হচ্ছে। যা শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হচ্ছে না।

গত সপ্তাহের বুধবার ১২ কর্মকর্তাকে  ও গত বৃহস্পতিবার আরও ১২ কর্মকর্তাকে দেশের বিভিন্ন কলেজে পদায়ন করা হয়েছে। তবে এর প্রকৃত সংখ্যা আরও কয়েক গুণ। ধারণা করা হচ্ছে আজ বৃহস্পতিবার শিক্ষা ক্যাডারের অনেক কর্মকর্তাকেও বদলি করা হবে।
গত ১১ সেপ্টম্বর বুধবার ওয়েবসাইটে দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, সহকারী অধ্যাপক আলী ইব্রাহীমকে ভোলা সরকারি কলেজে বদলি করা হয়েছে। তিনি মাউশিতে ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা হিসেবে নিযুক্ত ছিলেন। মো. ইমামুল মোত্তাকিনকে নাটোরের একটি কলেজে, মনির হোসেনকে লক্ষ্মীপুর সরকারি কলেজে ও কহিনুর বেগমকে পটুয়াখালী সরকারি কলেজে বদলি করা হয়েছে। এর আগে গত ১২ সেপ্টেম্বর এছাড়াও এদিন বদলি হয়েছেন আরও ৮ জন। তবে প্রকৃত সংখ্যা আরও বেশি বলে সূত্র জানিয়েছে।

গত ১২ সেপ্টম্বর বৃহস্পতিবার আসমা হোসেনকে তিতুমীর সরকারি কলেজ, সাইদুর রহমানকে ঢাকা উদ্যান সরকারি মহাবিদ্যালয়, আজিমপুর গভর্নমেন্ট গার্লস স্কুল এন্ড কলেজ থেকে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানিতে সরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এদিন অন্তত এক ডজন কর্মকর্তাকে নতুন কলেজে পদায়ন করা হয়।
এ বিষয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব ড. শেখ আব্দুর রশিদকে একাধিকবার যোগাযোগের জন্য কল দেওয়া হলেও কোন সাড়া পাওয়া যায়নি।

×