খুদে বিজ্ঞানীদের মিলনমেলা
কেউ এসেছেন হোমনা থেকে, কেউ চৌদ্দগ্রাম আবার কারও বাসা কুমিল্লা শহরেই। সবার গায়ে নীল, সাদা অথবা বেগুনি ইউনিফর্মের ওপর বিজ্ঞান উৎসবের সাদা টি-শার্ট। যেন বসন্তের ক্যাম্পাসে শরতের শুভ্রতার অনুপ্রবেশ। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটক থেকে শহিদ মিনার পর্যন্ত সবটা জুড়ে ছিল স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মানের ভবিষ্যৎ এই যোদ্ধারা। এখান থেকেই হয়তো একদিন তৈরী হবে বিজ্ঞানী, চিকিৎসক, ইঞ্জিনিয়ার, উদ্যোক্তা ও জাতি গড়ার কারিগর শিক্ষক।
বলছিলাম, সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুষ্ঠিত হওয়া বিজ্ঞান উৎসবের কথা। যেখানে কুমিল্লা জেলার পঞ্চাশটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের প্রায় আড়াই হাজার শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানভিত্তিক সংগঠন সায়েন্স ক্লাবের উদ্যোগে আয়োজন করা হয় এই বিজ্ঞান উৎসবের।
দিনব্যাপী আয়োজিত এই উৎসবের উদ্বোধন করেন কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. এ এফ এম আবদুল মঈন। এছাড়াও শিক্ষার্থী ও অভিভাবকদের সহযোগিতায় ছিলেন সায়েন্স ক্লাবের সদস্য ও বিজ্ঞান অনুষদের শিক্ষার্থীরা।
যেসব আয়োজন ছিল
বিজ্ঞান উৎসবে সাইন্স অলিম্পিয়াড, রুবিক্স কিউব প্রতিযোগিতা, সকার বট বা রোবটের লড়াই, প্রজেক্ট শো ও এক্সিবিশনসহ মোট সাতটি সেগমেন্টে শিক্ষার্থীরা আলাদাভাবে অংশগ্রহণ করেন। এরমধ্যে শিক্ষার্থীদের মূল আকর্ষণ ছিল ব্যাডমিন্টন কোর্টে অনুষ্ঠিত হওয়া রোবটের লড়াই ও কেন্দ্রীয় মাঠের বিজ্ঞান প্রদর্শনী। এবারে প্রদর্শনীতে ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা অংশগ্রহণ করেন। খুদে বিজ্ঞানীদের এই মিলনমেলায় ৮০টি ভিন্ন ভিন্ন বিষয় তুলে ধরা হয়।
এই আয়োজনে বিচারক হিসেবে ছিলেন বিজ্ঞান অনুষদের ত্রিশজন শিক্ষক। আয়োজকবৃন্দরা জানিয়েছেন, খুব শীঘ্রই ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য ও কুবির সিন্ডিকেট সদস্য অধ্যাপক এ এস এম মাকসুদ কামালের উপস্থিতিতে বিভিন্ন সেগমেন্টে বিজয়ী শিক্ষার্থীদের পুরস্কৃত করা হবে।
বিজ্ঞান প্রদর্শনীতে যা যা ছিল
প্রদর্শনী ঘুরে দেখা যায়, প্রজেক্টগুলোতে রোবোটিক্সের বহুমাত্রিক ব্যবহার, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তরুণরা কিভাবে নিজেদের দক্ষ করে গড়ে তুলবে, গ্রিন হাউস গ্যাসের ব্যবহার, জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং ব্যবহার, বর্জ্য পদার্থের পরিবেশবান্ধব বহুমুখী ব্যবহার, জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব থেকে পৃথিবীর রক্ষা করা, জনসাধারণের সোলার এনার্জি ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ করা ও বিভিন্ন প্রতিকূলতা থেকে পৃথিবী রক্ষার কৌশল।
এ ছাড়াও ছিল স্মার্ট বাংলাদেশ বিনির্মাণের অংশ হিসেবে স্মার্ট সিটি, স্মার্ট রেল গেট, স্মার্ট ভয়েস কন্ট্রোলার গাড়ি, স্মার্ট ব্রিজ, জেনেটিক ইন্জিনিয়ারিং, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব শিল্পনগরী ও গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী বায়োস্কোপ।
আরও যেসব আয়োজন ছিল
শিক্ষার্থীদের তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তবিকতায় রূপ দিতে ছিল জাতীয় বিজ্ঞান জাদুঘরের সায়েন্টিফিক বাস এক্সিবিশন ও টেলিস্কোপে মহাকাশ পর্যবেক্ষণ ব্যবস্থা।
এছাড়াও বিকেল বেলা শিক্ষার্থীদের অজানা বিষয় জানার জন্য ছিল প্রশ্নোত্তর পর্ব। এ জন্য উপস্থিত ছিলেন বুয়েটের কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের সাবেক অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ম্যাথ অলিম্পিয়াড কমিটির প্রেসিডেন্ট ড. মোহাম্মদ কায়কোবাদ।
বিজ্ঞান উৎসবে আসা শিক্ষার্থীরা যা বলেন
নওয়াব ফয়জুন্নেছা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী আয়েশা সিদ্দিকা বলেন, এত বড় একটি আয়োজনের অংশ হতে পেরে আমরা আনন্দিত। আমাদের প্রজেক্ট হচ্ছে ‘বর্জ্য পদার্থের মাধ্যমে বিদ্যুৎ তৈরি করা’। এর মাধ্যমে বিদ্যুৎ সংকট কমানো এবং বর্জ্য ব্যবস্থাপনার একটি বিজ্ঞানভিত্তিক সমাধান হবে আশাকরি।
ইস্পাহানি পাবলিক স্কুলের সামাদ ও রিমন বলেন, এবারতো আধুনিক বায়ুবিদ্যুৎ ও জলবিদ্যুৎ উৎপাদন প্রক্রিয়া প্রদর্শনী করতে এসেছি। ভবিষ্যতে এধরনের বিদ্যুৎ কেন্দ্রে কাজ করতে চাই। দাউদ থেকে আসা রুমানা বলেন, অনেক ইচ্ছে ছিল বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘুরতে আসার। বিজ্ঞান উৎসবে এসে বিশ্ববিদ্যালয়ও দেখা হল পাশাপাশি অনেক শিক্ষার্থীর সাথে পরিচিত হতে পেরেছি; দারুণ লাগছে।
আয়োজকবৃন্দরা যা বলেন, গণিত উৎসবের বিষয়ে সায়েন্স ক্লাবের সভাপতি আমান উল্লাহ বলেন, স্কুল কলেজের শিক্ষার্থীরা অনেক চমৎকার প্রজেক্ট উপস্থাপন করেছে। এবারের প্রদর্শনীতে বেশি গুরুত্ব পেয়েছে রোবটিক্স। যদি ভবিষ্যতে এগুলো বাস্তবায়ন করা যায় তাহলে অনেক প্রতিবন্ধকতা সমাধানের পাশাপাশি তথ্যপ্রযুক্তিতে ভালো কিছু করা সম্ভব।
সাধারণ সম্পাদক জাহিদ হোসেন ইভান বলেন, এখানে অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা যথেষ্ট পটেনশিয়াল। এরা যদি কোনো সাপোর্টিভ প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে কাজ করতে পারে, আর একটু দিকনির্দেশনা পায়। এখান থেকে যুগান্তকারী আবিষ্কার সম্ভব।