ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১২ মে ২০২৫, ২৯ বৈশাখ ১৪৩২

সমানতালে শিক্ষকতা ও উপস্থাপনা 

সিফাত রাব্বানী

প্রকাশিত: ০১:০১, ৩ সেপ্টেম্বর ২০২৩

সমানতালে শিক্ষকতা ও উপস্থাপনা 

বাবা মা নাম রেখেছিলেন আকাক্সক্ষা

আমাদের স্কুল-কলেজে ইংরেজিকে ভাষা হিসেবে শেখানো হয় না। গৎবাঁধা নিয়মের বেড়াজালে ইংরেজি জানা ও শেখা সম্ভব নয়

বাবা মা নাম রেখেছিলেন আকাক্সক্ষা। এরপর যা হলো! জানার প্রতি আকাক্সক্ষা, শেখার প্রতি আকাক্সক্ষা বেড়েই চলেছে তার। বেশি আকাক্সক্ষা জেগেছিল ইংরেজিকে কব্জা করার আর সেটাই করে ফেলেছেন খুব কম বয়সেই। বলছি নর্থ সাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংলিশ অ্যান্ড মডার্ন লেংগুয়েজেস বিভাগের শিক্ষার্থী আকাক্সক্ষা শিকদারের কথা। ইংরেজি শিক্ষায় একজন প্রিয় মুখ তিনি। তার ইংরেজি শেখার ও শেখানোর বিষয়টি ভিন্ন। এসএসসি পরীক্ষার পর তার মা এক প্রকার জোর করে স্পিকিং কোর্সে ভর্তি করান তাকে। তিনি ইংরেজি ভালো জানতেন কিন্তু চুপচাপ থাকায় ঠিকমতো কারও সঙ্গে কথা বলতে পারতেন না।

তার এই ব্যাপারটি নিয়ে খুব কাছের লোকেরা তাকে সাহায্য না করে রীতিমতো ঠাট্টা বিদ্রুপই করতেন। দৃঢ় হলেন এই জড়তা কাটাতেই হবে। কিন্তু কম শিক্ষকই খুঁজে পাচ্ছিলেন যারা সহজ করে কথা বলার কৌশল শেখাবেন। একটা সময় নিজে নিজেই শিখে নিলেন কলাকৌশল। ইংরেজিকে বিষয় হিসেবে নয় মূলত ভাষা হিসেবে শিখে এতে দক্ষ হয়ে ওঠেন। এরপর পরিণত বয়সে সিদ্ধান্ত নেন ইংরেজি নিয়ে পড়বেন আর মেজর হবে ভাষা কিন্তু সাহিত্য নয়। ২০১৬ সালে যখন ফেসবুকে নতুন লাইভ ফিচার যুক্ত হয় তখন তিনি নিজে যা শিখতেন তাই লাইভে পড়াতেন। ক্রমান্বয়ে লাইভে শিক্ষার্থীর সংখ্যা বেড়েই চলে। হাজার হাজার মানুষ একটা বাচ্চা মেয়ের ক্লাস করছে, ইনবক্সে নক দিচ্ছে, আবার আলাদাভাবে ব্যাচেও পড়তে চাইছে বিষয়টা তার কাছেও ইতিবাচক মনে হয়েছিল।

এভাবেই আট বছর পার করে ফেললেন শিক্ষক হিসেবে, পড়িয়েছেন দেশের খ্যাতনামা কিছু প্রতিষ্ঠানে। পড়াতে গিয়ে মজার ঘটনার সাক্ষী হয়েছেন কয়েকবার। তাই জানালেন আলাপচারিতায়। তিনি তখনো ছোট কিন্তু ক্লাস নিচ্ছেন আইইএলটিএসএর। স্বাভাবিকভাবেই একটা ক্লাসে নানা বয়সের লোক থাকে। তিনি তাদের তুলনায় দেখতেও বয়সে ছোটই ছিলেন। যখন সামনে দাঁড়াতেন সবাই ভাবতো উনি কেন এখানে দাঁড়িয়ে আছেন, কেন আসন গ্রহণ করছেন না, কিন্তু যখন জানতেন আকাক্সক্ষাই তাদের প্রশিক্ষক তখন অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকতেন। ইংরেজিতে দক্ষ হওয়া কিংবা ইংরেজি নিয়ে পড়া সহজ ছিল না কারণ বিজ্ঞানের শিক্ষার্থী হিসেবে মেডিক্যাল বা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে যাওয়ার প্রবণতা ছিল।

বাবা মা সমর্থন করেছেন বলেই পেরেছেন এখানে আসতে। জানতে চাওয়া হলো বিজ্ঞান ছেড়ে ইংরেজি কেন? জানালেন এটায় দখল ভালো, তাহলে কেন আরও ভালো করার সুযোগ হাতছাড়া করবেন। তবে ইংরেজির বাইরে নৃবিজ্ঞান তার অন্যতম পছন্দের জায়গা। একজন প্রতিভাবান শিক্ষকের কাছে প্রশ্ন থাকতেই পারে কিভাবে ইংরেজিতে আত্ম উন্নয়ন করা যাবে। এই প্রশ্নের উত্তরে বললেন, বাংলা মাধ্যম থেকে যারা পড়াশোনা করে তাদের জানতে হবে যে উচ্চশিক্ষা থেকে শুরু করে প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা ও যোগাযোগের ক্ষেত্রে ইংরেজি জানাটা খুবই দরকারি। সেভাবে প্রথম থেকেই খুঁটিনাটি জানতে হবে। আমাদের স্কুল-কলেজে ইংরেজিকে ভাষা হিসেবে সেখানো হয় না।

গৎবাঁধা নিয়মের বেড়াজালে ইংরেজি জানা ও শেখা সম্ভব নয়। আমরা যেভাবে বাংলা ভাষা শিখেছি তা কিন্তু ব্যাকরণের মাধ্যমে নয়, ঠিক সেভাবেই ইংরেজিকে জানতে হবে শিখতে হবে। ব্যক্তি আকাক্সক্ষা নিয়ে কিছু না বললেই নয়। সমাজে যে আটদশটা কষ্ট ও সংগ্রামের গল্প প্রচলিত আছে সেগুলো থেকে তার জীবন ছিল ভিন্ন। অর্থসংকট কিংবা অভাব অনটনে পড়তে হয়নি তবুও চেয়েছেন নিজের পায়ে দাঁড়াতে।

×