ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

ক্যাম্পাসে ফুটবল উন্মাদনা

মো. মমিনুর রহমান

প্রকাশিত: ০১:০৩, ২৫ নভেম্বর ২০২২

ক্যাম্পাসে ফুটবল উন্মাদনা

.

আর্সেন ওয়েঙ্গার ফুটবলকে শিল্পের সঙ্গে তুলনা করেছেন এবং তিনি বলেছেন ফুটবল একটি শিল্প, যেমন নাচ একটি শিল্প ঠিক তেমনি। শিল্পীরা মাধুর্য মিশিয়ে তাদের গান কিংবা নাচ পরিবেশন করে। কাতার বিশ্বকাপ ফুটবলের শিল্পী যদি মেসি, রোনালদো কিংবা নেইমার হয় তাহলে? বিশ্বব্যাপী উন্মাদনার অন্ত থাকে না। অবাক করার বিষয় যে মেসির ইনস্টাগ্রামে অনুসারীর সংখ্যা লাতিন আমেরিকার জনসংখ্যার থেকে বেশি। মেসির থেকে আবার রোনালদোর কম নয়, বরং অনেক বেশি। বিশ্বকাপ শুরুর কয়েক মাস আগে থেকেই চলে কথার ফুলঝুরি। বাকবিতন্ডার মাধ্যমে নিজের দলকে চ্যাম্পিয়ন করতে ন্যানো সেকেন্ডও সময় নেয় না সমর্থকরা বিশ্বকাপের জোয়ারে গা ভাসিয়ে ফুটবলপ্রেমীদের মাঝে ইতোমধ্যে শুরু হয়ে গেছে উন্মাদনা ও উচ্ছ্বাস। বাদ পড়েনি বাংলাদেশও। দেশের আকাশে-বাতাসে, আনাচে-কানাচে ফুটবলের জয়জয়কারের ধ্বনি বইছে। মরুর উত্তাপে গা ভাসিয়ে দিয়েছে গোটা বাংলাদেশ। দেশের সকল শ্রেণির মানুষের মধ্যে বিশ্বকাপের নতুন আমেজ পরিলক্ষিত করা যাচ্ছে।

অনেকেই কিনেছেন প্রিয় দলের জার্সি। লাল সবুজের বাংলাদেশ যেন আকাশি-নীল ও হলুদে পরিণত হয়েছে । চাঁদা তুলে বানাচ্ছেন পতাকা এসব আয়োজন বিশেষ করে তারুণ্যের ক্যাম্পাসে, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে বেশি দেখা যায় এবং ক্যাম্পাসগুলোতে এসব প্রতিদিনের রুটিন হয়ে গেছে। পুরো বিশ্বের ন্যায় মরুর উত্তাপের আঁচ লেগেছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রত্যেকটি চায়ের আড্ডা যেন কাতারের এক একটি স্টেডিয়াম। হতাশার মোড় থেকে হতাশা যেন বিদায় নিয়েছে। বিশ্বকাপকে কেন্দ্র করে বন্ধ- বান্ধব, সিনিয়র জুনিয়রের মধ্যে চলছে কথার ফুলঝুরি। পদ্মরাগ, এসো বিদ্রোহ করি, বায়ান্ন ইত্যাদি যাত্রী ছাউনিগুলো কাতারকে নিয়ে অনেক ব্যস্ত জীবন পার করছে। সেন্ট্রাল লাইব্রেরি যে বাকবিতন্ডা থেকে দূরে আছে তা নয়, পড়াশোনার ফাঁকে ফাঁকে নিজ দলের গুণগান করছে সমর্থকরা।
রাত যায় দিন আসে এভাবে মাহেন্দ্রক্ষণের উপস্থিতি। গোটা দুনিয়াকে তাক লাগানো কাতার বিশ্বকাপকে স্বাগত জানাতে ব্যস্ত ছিল বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস। বিশ্ববিদ্যালয়ের আনাচে-কানাচে প্রিয় টিমের পতাকা টানানো, র‌্যালি করা নিত্যদিনের কাজ। বাংলাদেশে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সাপোর্টার বেশি হওয়ায় পাল্টা-পাল্টিভাবে আর্জেন্টিনা ও ব্রাজিলের সমর্থক গোষ্ঠীর কমিটি ঘোষণা করা হয়। চাপাবাজ নির্মূল, স্লোগান বিষয়ক, গোপন বৈঠক বিষয়ক, পাল্টিবাজ প্রতিরোধ, প্রতিপক্ষের কান্না থামানো ও টিস্যু বিতরণ বিষয়ক সম্পাদক নামে অনেকগুলো পদের নাম দেখা যায়। জার্মানি, জাপান, ফ্রান্স ইত্যাদি দেশের ভক্তদের সংখ্যাও কম নয়।
বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাফেটেরিয়া প্রাঙ্গণে ফার্স্ট সিকিউরিটি ইসলামী ব্যাংকের সৌজন্যে বসানো হয়েছে স্টার টেকনো ভিশনের জায়ান্ট এলইডি স্ক্রিন। প্রতিটি খেলা দেখানো হচ্ছে বড় স্ক্রিনে। সারা দিনের বিভিন্ন কাজে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা ফুটবলপ্রেমীরা বিকেল ৪টায় বেরোবি ক্যাম্পাসে আসতে একটু খানি দেরি করতে নারাজ। শত শত সমর্থকদের পদচারণায় মুখরিত হচ্ছে বেরোবির গোধূলি। দূর-দূরান্ত থেকে বন্ধু-বান্ধবীদের সঙ্গে খেলা দেখতে চলে আসতেছে ক্যাম্পাসে। নিজ দলের কিংবা খেলোয়াড়ের খেলা দেখতে বিকেল কিংবা রাত কোনো সময় মানছে না। বিশেষ করে গত ২২ তারিখের আর্জেন্টিনা ও সৌদি আরবের খেলা দেখতে আসা শিক্ষার্থীদের সংখ্যা ছিল চোখে পড়ার মতো। শুধু যে আর্জেন্টাইন সমর্থক ছিল তা নয়, নীল আকাশি জার্সিদের পচানি দিতে ব্রাজিলদের উপস্থিতি ছিল নজরকাড়ার মতো।

আর্জেন্টাইন দলের হিরো মেসি ও অন্যান্য খেলোয়াড়দের বল দেওয়া ও নেওয়া একটু ব্যতিক্রম হলেই ভুয়া ভুয়া স্লোগানে মুখরিত হয়েছিল ক্যাম্পাস। অন্যদিকে আর্জেন্টাইন সমর্থকদের মেসি মেসি স্লোগানে মুখরিত ক্যাফেটেরিয়া প্রাঙ্গণ। আক্রমণভাগে বল চলে আসলেই ভয়ে শরীর কাঁপুনি দিয়ে ওঠে সমর্থকদের। ফেসবুক-টুইটারসহ সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও প্রিয় দল আর খেলোয়াড়ের বন্দনামূলক পোস্ট দিচ্ছেন অনেকে। ফুটবলের সবচেয়ে বড় এ আসরে যদিও অনেক দেশই খেলছে। কিন্তু যুগ যুগ ধরে বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীরা মূলত লাতিন আমেরিকার দুই ফুটবল পরাশক্তি আর্জেন্টিনা-ব্রাজিলে বিভক্ত। ম্যারাডোনা থেকে মেসি। মাঝখানে এই টিমে এসেছেন আরও অনেকে। বিশ্বকাপ ফুটবল নিয়ে সব সময়ই আলাদা একটা উন্মাদনা কাজ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসগুলোতে। রাত জেগে খেলা, প্রিয় দলের পতাকা টানানো, প্রিয় খেলোয়াড়ের জার্সি গায়ে পরা কোনো কিছু বাদ যাচ্ছে না। ক্যাম্পাসগুলোতে বিশ্বকাপ যেন তারুণ্যের দুর্বার গতি আরও বাড়িয়ে দিয়েছে। হলের টিভি রুমগুলো যেন হয়ে উঠেছে কাতারের একেকটি ফুটবল স্টেডিয়াম। সেসব স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে প্রিয় দলের জার্সি পরে পতাকা হাতে খেলা উপভোগ করছেন শিক্ষার্থীরা।

 

×