ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফলাফলের আশায় এক যুগের অপেক্ষা ঢাবি শিক্ষার্থীর

মুনতাসির জিহাদ 

প্রকাশিত: ১৯:৩৩, ৯ নভেম্বর ২০২২; আপডেট: ১৮:১০, ১০ নভেম্বর ২০২২

ফলাফলের আশায় এক যুগের অপেক্ষা ঢাবি শিক্ষার্থীর

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী মিজানুর রহমান এম. ফিল প্রথম পর্ব পরীক্ষা দিয়েছিলেন ২০১০ সালের ২১ জুলাই। কিন্তু এক যুগ পেরিয়ে গেলেও বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সেই পরীক্ষার ফলাফল প্রকাশ করা হয় নি। মিজানুর রহমানের অভিযোগ, বিভাগীয় এক শিক্ষকের ষড়যন্ত্রে অযৌক্তিকভাবে তার ফলাফল আটকে রেখেছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস। 

জানা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উর্দু বিভাগের অধ্যাপক ড. জাফর আহমেদ ভূঁইয়া ও অধ্যাপক ড. কানিজ-ই-বাতুলের তত্ত্বাবধানে ‘ড. আবু সাঈদ নুরুদ্দীন এর জীবন ও সাহিত্য সাধনা’ বিষয়ে ২০০৯ সালে তিনি এম. ফিল প্রোগ্রাম শুরু করেন। এর আগে একই বিভাগের স্নাতক ও স্নাতকোত্তর উভয় পরীক্ষায় প্রথম বিভাগে দ্বিতীয় স্থান অর্জন করেছিলেন তিনি।

উর্দু বিভাগের বর্তমান অধ্যাপক ড. গোলাম রাব্বানীর বিরুদ্ধে অভিযোগ করে মিজানুর রহমান বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ে তিনি এক ব্যাচ সিনিয়র ছিলেন। ২০০৯ সালে বিভাগের প্রভাষক নিয়োগে দুই জনেই আবেদন করেছিলেন। তবে ওই নিয়োগে প্রভাষক হিসেবে নিয়োগ পেয়েছিলেন ড. গোলাম রাব্বানী। এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ না পেলেও উচ্চশিক্ষার উদ্দেশ্যে এম. ফিল প্রোগ্রামে ভর্তি হয়েছিলেন মিজানুর রহমান।

মিজানুর রহমান বলেন, তার এম. ফিল প্রথম পর্বের পরীক্ষার সঙ্গে ড. গোলাম রাব্বানীর কোনো সংশ্লিষ্টতা না থাকলেও তিনি পরীক্ষার হলে প্রবেশ করেন। পরীক্ষা চলাকালীন দেড় ঘণ্টা পর তিনি আমার প্রবেশপত্র নিয়ে পরীক্ষার হল থেকে চলে যান। পরীক্ষা শেষে খোঁজ নিয়ে জানতে পারি তিনি আমার প্রবেশপত্র নিয়ে তার অফিস কক্ষে চলে গেছেন। সেদিন তার কাছ থেকে প্রবেশপত্রটি নিয়ে চলে আসি। কিন্তু এ সময়ে তার সঙ্গে কোনো তর্কাতর্কি বা ধাক্কাধাক্কি হয় নি। 

তিনি বলেন, বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নিয়োগ পরীক্ষায় প্রতিযোগী হওয়ায় গোলাম রাব্বানী অযৌক্তিক উপায়ে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছেন।

অভিযোগের বিষয়ে ড. গোলাম রাব্বানী জনকণ্ঠকে বলেন, মিজানুর রহমান পরীক্ষার প্রবেশপত্রে পেন্সিল দিয়ে অনেক তথ্য লিখে নিয়ে এসেছিলেন। এটা আমার নজরে এসেছে। পরবর্তীতে আমি কর্তৃপক্ষকে জানিয়েছি। এই কারণে তার এক বা দুই বছর শাস্তি হতে পারে। কিন্তু তার ফলাফল এতদিন আটকে রাখার প্রশ্ন উঠে না। মিজানুর রহমানের এম. ফিল প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক বা পরীক্ষা পরিচালনায় দায়িত্ব না থাকা সত্বেও কেন্দ্রে প্রবেশ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, কোনো শিক্ষার্থী অন্যায় করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের যেকোনো শিক্ষক ব্যবস্থা নিতে পারে। 

এদিকে মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে কোনো শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিয়েছেন কিনা তা তাকে অথবা তার কোর্স তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ড. জাফর আহমেদ ভূঁইয়াকে জানায় নি পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস। সর্বশেষ ২০২১ সালের ২৭ অক্টোবর মিজানুর রহমান পরীক্ষার ফলাফলের জন্য ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীর কাছে আবেদন করেন। 

পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে জানানো হয় যে, তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। কিন্তু কী ধরনের শাস্তি আরোপ করা হয়েছে এবং কবে থেকে কার্যকর হয়েছে এসব বিষয়ে কিছুই জানানো হয় নি।

ভুক্তভোগী এই শিক্ষার্থীর এম. ফিল তত্ত্বাবধায়ক অধ্যাপক ড. জাফর আহমেদ ভূঁইয়া জনকণ্ঠকে বলেন, মিজানুর রহমানের নাম্বার, ট্যাবুলেশন শিট, ভাইবার নাম্বার সবকিছু আমার কাছে আছে। কিন্তু পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস থেকে আনুষ্ঠানিক বা অনানুষ্ঠানিকভাবে কোনো ফিডব্যাক আমি কখনো পাই নি। কেন তার ফলাফল স্থগিত হয়ে আছে সে বিষয়ে এ পর্যন্ত আমাকে কিছুই জানানো হয় নি। আমি যেহেতু এই প্রোগ্রামের তত্ত্বাবধায়ক ও পরীক্ষা পরিচালনার দায়িত্বে ছিলাম, তাই আমাকে জানানো উচিত।

নিরুপায় হয়ে মিজানুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য, উপ-উপাচার্যের কাছে আবেদন করলেও তার সুফল মেলেনি। সর্বশেষ তথ্য অধিকার আইনে ফলাফল আটকে থাকার কারণ জানতে চেয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্টারের কাছে আবেদন করেন তিনি। তবে এখনো পর্যন্ত কোনো তথ্য তাকে জানানো হয় নি। 

জানতে চাইলে এসব বিষয় পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অফিস ও এম. ফিল তত্ত্বাবধায়কের আওতাধীন বলে জানান ঢাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামান। তবে পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক বাহালুল হক চৌধুরীকে একাধিকবার ফোন দেয়া হলেও যোগাযোগ করা সম্ভব হয় নি।

এসআর

সম্পর্কিত বিষয়:

×