দ্বিতীয় অধ্যায়: জীবকোষ ও টিস্যু
সুপ্রিয় শিক্ষার্থীবৃন্দ, প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল। ইতোপূর্বে তোমরা উদ্ভিদ টিস্যু (চষধহঃ ঞরংংঁব)র মধ্যে ভাজক টিস্যু ও স্থায়ী টিস্যু (সরল টিস্যূ)র মধ্যে সরল টিস্যু সম্পর্কে জেনেছো।
আজকের আলোচনা : জটিল টিস্যু (Complex Tissue) র মধ্যে জাইলেম
জটিল টিস্যু (Complex Tissue):
বিভিন্ন প্রকারের কোষ সমন্বয়ে যে স্থায়ী টিস্যু দৃঢ় গঠিত হয় তাকে জটিল টিস্যু বলে।
এরা উদ্ভিদে পরিবহনের কাজ করে, তাই এদের পরিবহন টিস্যুও বলা হয়।
এ টিস্যু দুই ধরনের, যথা- জাইলেম ও ফ্লোয়েম।
জাইলেম ও ফ্লোয়েম একত্রে উদ্ভিদের পরিবহন টিস্যুগুচ্ছ (ঠধংপঁষধৎ নঁহফষব) গঠন করে।
১) জাইলেম (ঢুষবস) :
জাইলেম দুই ধরনের- প্রাথমিক ও গৌণ জাইলেম।
প্রোক্যাম্বিয়াম থেকে সৃষ্ট জাইলেমকে প্রাথমিক জাইলেম বলে।
প্রাথমিক বৃদ্ধি শেষে যেসব ক্ষেত্রে গৌণ বৃদ্ধি ঘটে সেখানে গৌণ জাইলেম সৃষ্টি হয়।
প্রাথমিক জাইলেম দুই ধরনের।
প্রাথমিক অবস্থায় একে প্রোটোজাইলেম এবং পরিণত অবস্থায় মোটাজাইলেম বলে। মোটাজাইলেমের অভ্যন্তরীণ ফাঁকা গহ্বরটি বড় থাকে।
জাইলেমে কয়েক ধরনের কোষ থাকে, যেমন- ট্রাকিড, ভেসেল, জাইলেম প্যারেনকাইমা ও জাইলেম ফাইবার ।
ক) ট্রাকিড (ঞৎধপযবরফং) : ট্রাকিড কোষ লম্বা। এর প্রান্তদ্বয় সরু ও সূচালো। প্রাচীরে লিগনিন জমে পুরু হয়ে অভ্যন্তরীণ গহবর বন্ধ হয়ে যায়। ফলে পানির চলাচল পার্শ্বীয় জোড়া কূপ (ঢ়ধরৎবফ ঢ়রঃং) এর মাধ্যমে হয়ে থাকে। প্রাচীরের পুরুত্ব কয়েক ধরনের হয়, যেমন- কলয়াকার, সর্পিলাকার, সৌপানাকার, জালিকাকার ও কুপাঙ্কিত।
অবস্থান: ফার্নবর্গ, নগ্নবীজী ও আবৃতবীজী উদ্ভিদের প্রাথমিক ও গৌণ জাইলেম কলায় ট্রাকিড দেখা যায়।
কাজ: কোষরসের পরিবহন অঙ্গকে দৃঢ়তা প্রদান প্রধান কাজ।
তবে কখনও খাদ্য সঞ্চয়ের কাজও এ টিস্যু করে থাকে।
খ) ভেসেল (ঠবংংবষং) :
ভেসেল কোষগুলো খাটো চোঙের ন্যায়। কোষগুলো একটির মাথায় একটি সজ্জিত হয়ে এবং প্রান্তীয় প্রাচীর গলে একটি দীর্ঘ নলের ন্যায় অঙ্গের সৃষ্টি করে। এর ফলে কোষরসের উর্ধ্বারোহণের জন্য একটি সরু পথ সৃষ্টি হয়ে যায়। প্রাথমিক অবস্থায় এ কোষগুলো প্রোটোপ্লাজমপূর্ণ থাকলেও পরিণত বয়সে এরা মৃত ও প্রোটোপ্লাজমবিহীন। ভেসেলের প্রাচীর ট্রাকিডের মতো বিভিন্নরূপে পুরু হয়, যেমন- সোপানাকার, সর্পিলাকার, বলয়াকার, কুপাঙ্কিত ইত্যাদি। ভেসেল সাধারণত কয়েক সেন্টিমিটার লম্বা হয়। তবে বৃক্ষ বা আরোহী উদ্ভিদে আরও অধিক লম্বা হতে পারে।
অবস্থান: এদের প্রধানত গুপ্তবীজী উদ্ভিদের সব অঙ্গে দেখা যায়। নগ্নবীজী উদ্ভিদের মধ্যে উন্নত উদ্ভিদ, যেমন-নিটামে (এহবঃঁস) প্রাথমিক পর্যায়ের ভেসেল থাকে।
কাজ: পানি ও খনিজ লবণ পরিবহনে এবং অঙ্গকে দৃঢ়তা প্রদান করা এর প্রধান কাজ।
গ) জাইলেম প্যারেনকাইমা (ঢুষবস ঢ়ধৎবহপযুসধ):
জাইলেমে অবস্থিত প্যারেনকাইমা কোষকে জাইলেম প্যারেনকাইমা বা উড প্যারেনকাইমা (ড়িড়ফ ঢ়ধৎবহপযুসধ)বলে। এদের প্রাচীর পুরু বা পাতলা হতে পারে। প্রাইমারি জাইলেমে অবস্থিত প্যারেনকাইমার কোষ পাতলা প্রাচীরযুক্ত। তবে গৌণ জাইলেমে এরা পুরু প্রাচীরযুক্ত হয়ে থাকে।
কাজ: খাদ্য সঞ্চয় ও পানি পরিবহন করা এদের প্রধান কাজ।
ঘ) জাইলেম ফাইবার (ঢুষবস ভরনৎব):
জাইলেমে অবস্থিত সেক্লারেনকাইমা কোষই জাইলেম ফাইবার। এদের উড ফাইবারও বলে। এ কোষগুলো লম্বা। এদের দুপ্রান্ত সরু। পরিণত কোষে প্রোটোপ্লাজম থাকেনা বলে এরা মৃত। উদ্ভিদে এরা যান্ত্রিক শক্তি যোগায়।
অবস্থান: দ্বিবীজপত্রী উদ্ভিদের সব জাইলেমে এরা অবস্থান করে।
কাজ: পানি ও খনিজ পদার্থ পরিবহন, খাদ্যসঞ্চয়, উদ্ভিদকে যান্ত্রিক শক্তি ও দৃঢ়তা প্রদান করা জাইলেম টিস্যুর প্রধান কাজ।
২) ফ্লোয়েম (চযষড়বস): এরা জাইলেমের সাথে একত্রে পরিবহন টিসুগুচ্ছ গঠন করে। সীভনল, সঙ্গীকোষ, ফ্লোয়েম পারেনকাইমা ও ফ্লোয়েম তন্তু নিয়ে ফ্লোয়েম টিস্যু গঠিত হয়।
কাজ: জাইলেম যেমন খাদ্যের কঁচামাল পানি সরবরাহ করে তেমনি ফ্লোয়েম পাতায় প্রস্তুত খাদ্য উদ্ভিদদেহের বিভিন্ন স্থানে পরিবহন করে।
ফ্লোয়েমে কয়েক ধরনের কোষ থাকে, যেমন- সিভকোষ, সঙ্গীকোষ, ফ্লোয়েম প্যারেনকাইমা ও ফ্লোয়েম ফাইবার বা তন্তু। পরবর্তীতে ফ্লোয়েম টিস্যু নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।