ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৭ মে ২০২৪, ২ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩১

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে  এবার আর্থিক প্রতিষ্ঠান

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২২:৪৬, ১৯ ফেব্রুয়ারি ২০২৪

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে  এবার আর্থিক প্রতিষ্ঠান

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে এবার ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠান

সর্বজনীন পেনশন স্কিমে এবার ব্যাংকবহির্ভূত আর্থিক প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা-কর্মচারীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করতে নির্দেশনা দিয়েছে বাংলাদেশ ব্যাংক। সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের আর্থিক প্রতিষ্ঠান ও বাজার বিভাগ সব আর্থিক প্রতিষ্ঠানের প্রধান নির্বাহী বরাবর এ সংক্রান্ত নির্দেশনা পাঠায়।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় বলা হয়, সর্বস্তরের জনগণকে একটি টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ে অন্তর্ভুক্তির উদ্দেশ্য পূরণকল্পে আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কর্মরত কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন স্কিমে অংশগ্রহণে উদ্বুদ্ধ করার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য নির্দেশনা প্রদান করা হলো।
সরকার ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি দেশের সর্বস্তরের জনগণকে বিশেষ করে বয়স্ক জনগোষ্ঠীকে টেকসই ও সুসংগঠিত সামাজিক নিরাপত্তা বলয়ের আওতাভুক্ত করার লক্ষ্যে সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থাপনা আইন এবং একই বছরের ১৩ আগস্ট সর্বজনীন পেনশন স্কিম বিধিমালা, ২০২৩ প্রণয়ন করে।
সর্বজনীন পেনশন স্কিমে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারী বা ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক, অনানুষ্ঠানিক খাতে কর্মরত বা স্বকর্মে নিয়োজিত ব্যক্তি, দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী স্বল্প আয়ের ব্যক্তিরা অংশ নিতে পারেন। অংশগ্রহণের সুযোগ রয়েছে বিদেশে কর্মরত বা অবস্থানকারী যে কোনো বাংলাদেশী নাগরিকেরও।
এদিকে ব্যাংকের চেয়ে তুলনামূলক কম সুদ, মেয়াদ শেষে এককালীন কোনো অর্থ না পাওয়ার বিধান এবং ডলারের তুলনায় টাকার উচ্চহারে অবমূল্যায়নের কারণে সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রবাসীসহ বাংলাদেশীদের মধ্যে আগ্রহ তৈরি করতে পারছে না বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা।
জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের তথ্য অনুযায়ী, গত ১৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত সর্বজনীন পেনশন স্কিম চালুর প্রথম এক মাসে ৩৯৮ জন প্রবাসী এতে অন্তর্ভুক্ত হয়ে চাঁদা পরিশোধ করেন। কিন্তু এ হারও পরে বজায় থাকেনি। গত ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত পরের তিন মাসে এই স্কিমে যুক্ত হয়েছেন মাত্র ৯১ জন প্রবাসী। যদিও বিপুল পরিমাণ প্রবাসী এই পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্ত হয়ে বৈধ চ্যানেলে বৈদেশিক মুদ্রা পাঠাবেন বলে আশা করা হয়েছিল।
গত বছরের ১৭ আগস্ট চালু করা সর্বজনীন পেনশনে চারটি স্কিম রাখা হয়েছে- প্রবাসীদের জন্য ‘প্রবাস’, বেসরকারি খাতের চাকরিজীবীদের জন্য ‘প্রগতি’, অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের জন্য ‘সুরক্ষা’ এবং অসচ্ছল ব্যক্তিদের জন্য ‘সমতা’। এই চারটি স্কিমে প্রথম মাসে ১২ হাজার ৯৭০ জন অন্তর্ভুক্ত হয়েছেন। পরের তিন মাসে এটি বেড়ে হয়েছে ১৭ হাজার ১৬৬ জনে। গত বছরের ১৯ ডিসেম্বর পর্যন্ত পেনশনের স্কিমগুলোয় চাঁদা জমা পড়েছে প্রায় ২১ কোটি ১৫ লাখ টাকা। সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় অন্তর্ভুক্তদের জন্য প্রায় ৮ শতাংশ হারে সুদহার নির্ধারণ করা হয়েছে। বেসরকারি বিভিন্ন ব্যাংক মেয়াদি আমানতের ক্ষেত্রে এর চেয়ে বেশি সুদ দেয়। এ ছাড়া অন্যান্য সেভিংস ইন্সট্রুমেন্টে বিনিয়োগ করলে উচ্চ সুদহারের পাশাপাশি মূল আমানতের অর্থও ফেরত পাওয়ার সুযোগ রয়েছে। 
একজন ব্যক্তি ৬০ বছর বয়স পর্যন্ত মাসিক কিস্তি জমা দেওয়ার পরে মাসিক পেনশন পাওয়া শুরু করবেন। বেসরকারি খাত ও অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের এত দীর্ঘ সময় ধরে কিস্তি দেওয়ার মতো পর্যাপ্ত আয় থাকবে কি না, এ নিয়েও সংশয় রয়েছে। এসব নানা কারণে সর্বজনীন পেনশন স্কিমে মানুষের আশানুরূপ সাড়া মিলছে না। এখন এই স্কিমে সরকারি ও বেসরকারি চাকরিজীবীদের অন্তর্ভুক্ত করার চেষ্টা করছে সরকার। প্রবাসীদের সর্বজনীন পেনশনে আকৃষ্ট করার পাশাপাশি করপোরেট হাউসগুলোকে সর্বজনীন পেনশনে অন্তর্ভুক্ত করার ক্ষেত্রে ব্যাংকগুলোর সহযোগিতাও চেয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। 
দেশের করপোরেট হাউসগুলোর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের বেতন-ভাতা সাধারণত ব্যাংকের মাধ্যমেই পরিশোধ করা হয়ে থাকে। ব্যাংকগুলো যেসব করপোরেট হাউসের পে-রোল সেবা দিয়ে থাকে, সেসব কোম্পানির কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থার ‘প্রগতি’ স্কিমে অন্তর্ভুক্তির জন্য প্রচার ও উদ্বুদ্ধকরণ কার্যক্রম চালাতে ব্যাংকের সিইওদের এরই মধ্যে অনুরোধ করেছে অর্থ বিভাগ।

×