ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১০ জুলাই ২০২৫, ২৬ আষাঢ় ১৪৩২

দাম কমাতে নীতিগত সহায়তা চায় এফবিসিসিআই

ডিমের হালি ফের ৫০-৫৫ টাকা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার

প্রকাশিত: ২৩:২০, ১ অক্টোবর ২০২২

ডিমের হালি ফের ৫০-৫৫ টাকা

ডিম

সপ্তাহের ব্যবধানে আবার বাড়তে শুরু করেছে আমিষের প্রধান উৎস ডিমের দাম। খুচরা বাজারে প্রতিহালি ফার্মের মুরগির লাল ডিম বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকায়। ১৫০ টাকায় মিলছে এক ডজন ডিম। দাম আরও বাড়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন ব্যবসায়ীরা। সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবির মতে, গত এক বছরে ডিমের দাম বেড়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ। ডিমের দাম বাড়ায় সাধারণ মানুষের কষ্ট বেড়েছে। স্বল্প ও সীমিত আয়ের মানুষ ডিম খাওয়া কমিয়ে দিয়েছেন।
এদিকে ডিমের দাম কমাতে সরকারের নীতিগত সহায়তা চেয়েছেন উদ্যোক্তারা। তাদের মতে, কৃষি খাতের মতো ভর্তুকি মূল্যে বিদ্যুত পেলে সাশ্রয়ী মূল্যে ভোক্তার প্রোটিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। শনিবার সকালে ফেডারেশন অব বাংলাদেশ চেম্বার অব কমার্স এ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির (এফবিসিসিআই) স্ট্যান্ডিং কমিটি অন লাইভস্টক, পোল্ট্রি এ্যান্ড ফিশারিজের প্রথম সভায় নীতিগত সহায়তা বাড়ানোর দাবি জানানো  হয়েছে। ওই সময় উদ্যোক্তারা জানান, পোল্ট্রি, গরুর খামার, মাছ ও চিংড়ি চাষে বাণিজ্যিক হারে বিদ্যুত বিল পরিশোধ করতে হয়।

এতে উৎপাদন ও পরিচালন ব্যয় বাড়ছে। কৃষি খাতের মতো ভর্তুকি মূল্যে বিদ্যুত পেলে সাশ্রয়ী মূল্যে  ভোক্তার প্রোটিনের চাহিদা মেটানো সম্ভব হবে। তারা জানান, সরকারের নীতি সহায়তা পেলে বর্তমান বাজারদরের চেয়ে অনেক কম দামে ভোক্তার কাছে মাংস, ডিম ও দুধ সরবরাহ করা সম্ভব। এজন্য গবাদিপশু, পোল্ট্রি ও মাছের খামারিদের কৃষি খাতের মতো একই ধরনের নীতি সহায়তা দেয়া প্রয়োজন।
সভায় প্রধান অতিথির বক্তব্যে এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন বলেন, গরু, মুরগি, মাছ ও চিংড়ির খামারে সরকারী সেবার মূল্য বিশেষায়িত হারে হওয়া উচিত। এতে নতুন উদ্যোক্তারা এ খাতে বিনিয়োগ করতে উৎসাহিত হবেন। ২০৪১ সাল নাগাদ উন্নত দেশ হতে হলে বাংলাদেশকে ৩০০ বিলিয়ন ডলার রফতানি করতে হবে। এজন্য মাছ, চিংড়ি ও মাংসকে রফতানি খাত হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

তাই এসব খাতে সরকারী নীতি সহায়তা জরুরী। গুটিকয়েক অসাধু ব্যবসায়ীর জন্য সম্প্রতি ডিমের বাজারে অস্থিরতা তৈরি হয়েছে। এতে পুরো ব্যবসায়ী সমাজের ভাবমূর্তি নষ্ট হয়। বাজার নিয়ন্ত্রণ ও ব্যবসায়ীদের ইমেজ রক্ষায় অসাধু ব্যবসায়ীদের চিহ্নিত করার আহ্বান জানান এফবিসিসিআই সভাপতি।
তিনি বলেন, প্রান্তিক খামারিদের ন্যায্য দাম নিশ্চিতে লজিস্টিকস ও সরবরাহ শৃঙ্খলা নিয়ে কাজ করতে হবে। এর আগে কমিটির ডিরেক্টর ইন-চার্জ ও এফবিসিসিআই’র সহসভাপতি সালাহউদ্দীন আলমগীর বলেন, কৃষিঋণের মতোই বাংলাদেশ ব্যাংককে লাইভস্টক খাতে ৫ শতাংশ ঋণের বাধ্যবাধকতা আরোপ করা উচিত। এ খাতে আমদানির ক্ষেত্রে ডলার মূল্য ১০০ টাকা নির্ধারণ করে দেয়ার দাবিও জানান তিনি। খামারিদের সুরক্ষা দিতে স্বল্পহারের প্রিমিয়ামে বীমা সুবিধা চালুর সুপারিশ করা হয়।
কমিটির চেয়ারম্যান ও ফিড ইন্ডাস্ট্র্রিজ এ্যাসোসিয়েশন বাংলাদেশের নির্বাহী সদস্য মোঃ মশিউর রহমান জানান, সরকারের প্রাণিসম্পদ অধিদফতর ও বিএসটিআই দেশের গবাদিপশু ও পোল্ট্রি খামারের বিভিন্ন মান তদারিক করে থাকে। দুই সংস্থার মধ্যে সমন্বয় না থাকায় খামারিদের ভোগান্তি পোহাতে হয়, যা এ খাতের বিকাশকে বাধাগ্রস্ত করছে। সরকারী সংস্থাগুলোর আন্তঃসমন্বয় জোরদারের আহ্বান জানান তিনি। এছাড়া খামারের  শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করতে সুষ্ঠু বর্জ্য ব্যবস্থাপনার ওপর জোর দেন তিনি।
এদিকে, সপ্তাহের ব্যবধানে আবার বাড়তে শুরু করেছে ডিমের দাম। গত আগস্ট মাসের মাঝামাঝি সময়ে প্রতিডজন ডিমের দাম ১৫০ থেকে ১৫৫ টাকায় দাঁড়ায়। এরপর তৎপর হয় জাতীয় ভোক্তা-অধিকার সংরক্ষণ অধিদফতর। সেই সময় বিভিন্ন আড়ত ও বাজারে অভিযান চালিয়ে একাধিক ব্যবসায়ীকে জরিমানা করা হয়। সংস্থাটির অভিযানে ডিমের ডজন ১১৫-১২০ টাকায় নেমে আসে।

সেই সময় অভিযোগ ওঠে কারসাজি করে ডিমের বাজার থেকে প্রায় ৫০০ কোটি টাকা বাড়তি মুনাফা করেছে কিছু অসাধু প্রতিষ্ঠান। অভিযানের মুখে ডিমের বাজার কিছুদিন স্থিতিশীল থাকলেও সেপ্টেম্বরের শেষ সপ্তাহ থেকে আবারও অস্থিতিশীল হতে শুরু করেছে বাজার। পর্যাপ্ত জোগান থাকলেও  স্থান ও বাজারভেদে প্রতিডজন ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৪৫ থেকে ১৫৫ টাকায়। আর প্রতিপিস ডিম বিক্রি হচ্ছে ১৩ থেকে ১৪ টাকায়।
এ প্রসঙ্গে খিলগাঁও গোড়ান কাঁচাবাজারের ডিম ব্যবসায়ী হালিম হাওলাদার  জনকণ্ঠকে বলেন, এক সপ্তাহ ধরে আবার বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে ডিম। বর্তমানে প্রতিহালি ডিম কিনতে ভোক্তাকে গুনতে হচ্ছে ৫০-৫৫ টাকা পর্যন্ত। পাইকারি বাজারে দাম বেশি নেয়ার কারণে খুচরায়ও দাম বেড়ে গেছে।

সম্প্রতি ডিমের দাম কমাতে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় থেকে আমদানির উদ্যোগ নেয়া হলেও তাতে সাড়া দেয়নি কৃষি মন্ত্রণালয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, খামার মালিক ও পাইকার ব্যবসায়ীরা সরবরাহ কমিয়ে ফায়দা লুটছেন। এদিকে সরকারী বাজার নিয়ন্ত্রণকারী সংস্থা ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ-টিসিবি’র মতে, গত এক বছরে ডিমের দাম বেড়েছে প্রায় ৩৫ শতাংশ, যা গত কয়েক বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।

×