ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন  

গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়কে উপেক্ষা, এনজিওদের পরামর্শে সংশোধনী

প্রকাশিত: ২১:০১, ২৩ অক্টোবর ২০২২

গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়কে উপেক্ষা, এনজিওদের পরামর্শে সংশোধনী

তামাক

ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য ব্যবহার (নিয়ন্ত্রণ) আইন ২০০৫ (২০১৩ সালে সংশোধিত) - এ আরও একটি সংশোধনী আনার লক্ষ্যে কাজ করছে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়। ইতোমধ্যে প্রস্তাবিত খসড়াটির বিষয়ে জনমত যাচাইয়ের জন্য নির্ধারিত সময়ে দেশের গুরুত্বপূর্ণ ব্যবসায়িক সংগঠনসমূহ (এফবিসিসিআই, এমসিসিআই, ডিসিসিআই, ফরেন ইনভেস্টর্স চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিস, বাংলাদেশ রেস্তোরাঁ মালিক সমিতি, জাতীয় ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প সমিতি, বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি, বাংলাদেশ ইলেকট্রনিক নিকোটিন ডেলিভারি সিস্টেমস ট্রেডার্স অ্যাসোসিয়েশন ইত্যাদি) প্রস্তাবিত খসড়ায় অন্তর্ভুক্ত বেশ কিছু ধারা/উপধারার বিরোধিতা করেছে।

বাংলাদেশ মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের কার্যবিধি পরিচালনার জন্য নির্ধারিত ‘Rules of Business 1996’ অনুযায়ী যে কোনো অর্থনৈতিকভাবে গুরুত্বপূর্ণ খাতের কোনো প্রকার আইন প্রণয়ন/সংশোধনের ক্ষেত্রে খাতসংশ্লিষ্ট সকল মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে পরামর্শ সাপেক্ষে, বিশ্লেষণ করার উপযুক্ত সময় দিয়ে লিখিত মতামত নেওয়া অপরিহার্য। জনস্বাস্থ্যের জন্য হুমকিস্বরূপ হলেও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে তামাক খাতের গুরুত্ব অপরিসীম। গত বছর মোট অভ্যন্তরীণ রাজস্বের প্রায় ১২ শতাংশ (প্রায় ৩২ হাজার কোটি টাকা) সরকারি কোষাগারে জমা দিয়েছে তামাক কোম্পানিগুলো। এইকসঙ্গে প্রায় ৮০ লাখ মানুষের জীবিকা যোগান দিচ্ছে এই খাত। কিন্তু খাতসংশ্লিষ্ট অংশীজনদের উপেক্ষা করেই প্রস্তাবিত খসড়া প্রণয়ন এবং চূড়ান্ত করা হচ্ছে। 

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের সূত্রমতে, আগামী মঙ্গলবার প্রস্তুতকৃত খসড়া আইন মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে প্রেরণের জন্য একটি সভার আয়োজন করা হচ্ছে। যেখানে খাতসংশ্লিষ্ট অংশীজনদেরতো উপেক্ষা করা হচ্ছেই এমন কি গুরুত্বপূর্ণ কিছু মন্ত্রণালয়কেও তাদের মূল্যবান মতামত ব্যক্ত করার সুযোগ দেওয়া হচ্ছে না। বিশেষ করে তামাকজাত পণ্যের মতো বৃহৎ একটি খাতের ক্ষেত্রে শিল্প, বাণিজ্য, কৃষি, পরিকল্পনা, স্থানীয় সরকার, শ্রম, সমাজকল্যাণ, বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন, পরিবেশ বন ও জলবায়ু মন্ত্রণালয়, এছাড়াও অর্থ মন্ত্রণালয়ের অধীনস্ত জাতীয় রাজস্ব বোর্ডসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ বিভাগের অভিমতও গ্রহণ করা প্রয়োজন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের একটি সূত্র বলছে, একদিকে উপরোক্ত গুরুত্বপূর্ণ মন্ত্রণালয়সমূহকে উপেক্ষা করা হচ্ছে এবং আরেকদিকে বেশ কিছু বেসরকারি দাতাগোষ্ঠীর প্রতিনিধিদের এই সভায় আমন্ত্রণ করা হয়েছে। এমনকি খসড়া প্রস্তুত করার লক্ষ্যে গঠিত কমিটিতেও ৫০ শতাংশের বেশি প্রতিনিধিত্ব ছিল এইসব দাতাগোষ্ঠীর। জানা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক দাতাসংস্থা ব্লুমবার্গ ইনিশিয়েটিভ দ্য ইউনিয়ন এবং ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের দেওয়া তহবিল ব্যবহার করার উদ্দেশে, দাতাসংস্থাদের মতো অনুযায়ী এই প্রস্তাবিত খসড়াটি তৈরি করা হয়েছে। প্রস্তাবিত ধারাসমূহ বাংলাদেশের জন্য কতটা প্রাসঙ্গিক এবং প্রণয়নযোগ্য, তা নিয়ে খাতসংশ্লিষ্ট এবং অর্থনীতিবিদদের মাঝে যথেষ্ট উৎকণ্ঠা তৈরি হয়েছে।

বিষয়টি একাধিকবার গণমাধ্যমে উঠে আসলেও, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় কর্তৃক এই বিষয়ে কোনো প্রকার পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ব্যবসায়ী ছাড়াও বিভিন্ন মহল থেকে এই ব্যাপারে বহুবার উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের মতে, ধূমপান ও তামাকজাত দ্রব্য নিয়ন্ত্রণে বর্তমান আইনটিই যথেস্ট কঠোর। বিশ্বব্যাংকের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৩ সালের সংশোধিত আইনটি সময়মতো ও সফলভাবে বাস্তবায়ন করায় ২০১০ থেকে ২০২০ সালের মধ্যে তামাক ব্যবহারের হার ৪৪ থেকে ৩৪ দশমিক ৭ শতাংশে নেমে এসেছে যা অন্যান্য দেশের তুলনায় লক্ষ্যণীয় অগ্রগতি। কিন্তু তাদের আশঙ্কা, প্রস্তাবিত সংশোধনী বাস্তবায়িত হলে জীবিকা হারানোর মতো শোচনীয় আর্থিক বিপর্যয় নেমে আসবে এবং বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকটের এই সময়ে রাজস্ব আদায়ের হার লক্ষ্যণীয়ভাবে কমে যাবে।


 

×