ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০৮ ডিসেম্বর ২০২৪, ২৩ অগ্রাহায়ণ ১৪৩১

গ্রাহকের ৫৫ হাজার টাকাও দিতে পারল না আইসিবি ব্যাংক

প্রকাশিত: ২০:২৩, ২১ মে ২০২৪

গ্রাহকের ৫৫ হাজার টাকাও দিতে পারল না আইসিবি ব্যাংক

ব্যাংক। ফাইল ফটো

এমন অবস্থা দাঁড়িয়েছে মাত্র ৫৫ হাজার টাকার চেক দিলে ব্যাংকটির একটি শাখাও গ্রাহককে টাকা দিতে পারছে না। গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকটি লোকসানে আছে। ২০২৩ সালে লোকসান দাঁড়িয়েছে ৫৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এমন কী লোকসানের কারণে দীর্ঘদিন ধরে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে ব্যর্থ হয়েছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক। 

ব্যাংকের দুর্দশা তুলে ধরে মঙ্গলবার আব্দুল হামিদ মাহবুব নামে একজন গ্রাহক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে একটি পোস্ট করেন। তিনি বলেন, আইসিবি ইসলামি ব্যাংক মৌলভীবাজার শাখায় গিয়েছিলাম টাকা উঠাতে। ব্যাংক থেকে বললো, ক্যাশ সংকট। টাকা দিতে পারবে না। জানতে চাইলাম কত দিন ধরে এই অবস্থা? উপস্থিত গ্রাহকরা জানলেন, দুই মাস ধরে এই ব্যাংক টাকা দিচ্ছে না। 

ব্যাংকের এক কর্মকর্তা বলেন, আমাদের কিছুই করণীয় নাই। যত পারেন বাংলাদেশ ব্যাংকে অভিযোগ করুন। বাংলাদেশ ব্যাংকই আমাদেরে এই অবস্থার মধ্যে ফেলেছে।

শরিয়াহভিত্তিক ব্যাংকটিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নিয়োজিত পর্যবেক্ষক থাকা সত্তে্বও আর্থিক অবস্থার এই দশা হয়েছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের পরিচালক মো. রজব আলীকে ২০২২ সালে পর্যবেক্ষক হিসেবে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংকে পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু, পূর্বসূরিদের মতো তিনিও কোনো ইতিবাচক পরিবর্তন আনতে ব্যর্থ হন।

জানা গেছে, গত কয়েক বছর ধরে ব্যাংকটি লোকসানে আছে এবং ২০২৩ সালে লোকসান দাঁড়িয়েছে ৫৬ কোটি ৫০ লাখ টাকা। এমনকি লোকসানের কারণে দীর্ঘদিন ধরে লভ্যাংশ ঘোষণা করতে ব্যর্থ হয়েছে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক।

 সর্বশেষ প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, ২০২২ সাল শেষে ব্যাংকটির আমানত ছিল ১ হাজার ২১২ কোটি টাকা, যার মধ্যে ফ্রোজেন ডিপোজিট ছিল ৪৪৪ কোটি টাকা। ফ্রোজেন ডিপোজিট হলো ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের আমানত, যা মূলত কেন্দ্রীয় ব্যাংক আটকে রেখেছিল। ব্যাংকটির ফ্রোজেন ডিপোজিট ছিল ২ হাজার কোটি টাকা এবং এ পর্যন্ত ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের আমানতকারীদের প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা পরিশোধ করা হয়েছে।

ব্যাংকটির উৎপত্তি ১৯৮৭ সালে, তখন এটি আল-বারাকা ব্যাংক নামে পরিচালিত হতো। ১৯৯৪ সালে এটি ‘সমস্যাযুক্ত ব্যাংকে’ পরিণত হয়। তখন ব্যাংকিং খাতে শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনতে ত্রুটিযুক্ত ব্যাংকগুলোতে পর্যবেক্ষক নিয়োগের প্রথা চালু করে বাংলাদেশ ব্যাংক। এরপর ২০০৪ সালে এটি ওরিয়েন্টাল ব্যাংক নামে বাণিজ্যিক ব্যাংক হিসেবে কার্যক্রম শুরু করে। 

তবে ব্যাপক অনিয়ম ধরা পড়ার পর ২০০৬ সালের জুনে কেন্দ্রীয় ব্যাংক ওরিয়েন্টাল ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদ বিলুপ্ত করে দেয়। ওরিয়েন্টাল ব্যাংক থেকে আনুমানিক ৩৪ কোটি টাকা আত্মসাতের অভিযোগে ২০০৫ ও ২০০৬ সালে ৩৪টি মামলা হয়েছিল। তখন বাংলাদেশ ব্যাংক এটির পূর্ণ নিয়ন্ত্রণ নেয় এবং আমানতকারীদের অর্থ সুরক্ষার জন্য ব্যাংকের প্রশাসক হিসেবে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের একজন নির্বাহী পরিচালককে নিয়োগ দেওয়া হয়। 

২০০৭ সালের আগস্টে ব্যাংকটির অধিকাংশ শেয়ার বিক্রির জন্য দরপত্র আহ্বান করে বাংলাদেশ ব্যাংক। তখন এশিয়া ও আফ্রিকায় ব্যাংকিং ব্যবসা পরিচালনাকারী সুইস আইসিবি গ্রুপের সঙ্গে দরপত্রে অংশ নেন দুজন দরদাতা। ২০০৮ সালে ব্যাংকটির নাম পরিবর্তন করে আইসিবি ইসলামিক ব্যাংক করা হয়।
 

এসআর

×