ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৩ জুন ২০২৫, ৩০ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

যুক্তরাষ্ট্রে ব্রেন-ইটিং অ্যামিবার আক্রমণে নারীর মৃত্যু

অনলাইন ডেস্ক

প্রকাশিত: ০৯:৩৬, ১২ জুন ২০২৫

যুক্তরাষ্ট্রে ব্রেন-ইটিং অ্যামিবার আক্রমণে নারীর মৃত্যু

ছবি: সংগৃহীত

যুক্তরাষ্ট্রের টেক্সাসে এক ৭১ বছর বয়সী সুস্থ ও সক্রিয় নারী মারা গেছেন এক ভয়ংকর এবং বিরল মস্তিষ্কসংক্রান্ত সংক্রমণে, যার নাম প্রাইমারি অ্যামিবিক মেনিনজোএনসেফালাইটিস (Primary Amebic Meningoencephalitis বা PAM)। এই প্রাণঘাতী রোগটি হয় Naegleria fowleri নামক একটি অতিক্ষুদ্র এককোষী জীবাণুর সংস্পর্শে এলে, যাকে সাধারণভাবে "ব্রেন-ইটিং অ্যামিবা" বলা হয়।

মার্কিন রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC)-এর সাম্প্রতিক এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ওই নারী একটি ক্যাম্পগ্রাউন্ডে অবস্থানকালে নাক ধোয়ার যন্ত্র (nasal irrigation device) ব্যবহার করেন, যেখানে তিনি স্থানীয় ট্যাপ পানিই ব্যবহার করেছিলেন। ধারণা করা হচ্ছে, এই অনিরাপদ পানির মাধ্যমেই Naegleria fowleri তার নাক দিয়ে প্রবেশ করে এবং মস্তিষ্কে পৌঁছে মারাত্মক সংক্রমণ ঘটায়।

এই অ্যামিবা সাধারণত উষ্ণ পানিতে পাওয়া যায়—যেমন হ্রদ, পুকুর, নদী, উষ্ণ প্রস্রবণ কিংবা অপরিষ্কার ট্যাপ পানি। যখন কেউ সাঁতারের সময় কিংবা নাক পরিষ্কার করার সময় নাকে এমন দূষিত পানি টেনে নেয়, তখন অ্যামিবাটি নাকের ভেতর দিয়ে মস্তিষ্কে প্রবেশ করে এবং স্নায়ুতন্ত্র আক্রমণ করে।

ওই নারী সংক্রমণের পরপরই অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং উপসর্গ শুরু হওয়ার মাত্র ৮ দিনের মাথায় মৃত্যুবরণ করেন। PAM রোগটি এতটাই প্রাণঘাতী যে, CDC-এর হিসেব অনুযায়ী, সংক্রমণ হলে মৃত্যুর হার প্রায় ৯৭ শতাংশ। ১৯৬২ থেকে ২০২৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে এই রোগে আক্রান্ত হয়েছেন মাত্র ১৬৪ জন, যার মধ্যে মাত্র ৪ জন বেঁচে ফিরেছেন।

প্রথম দিকে PAM রোগের লক্ষণগুলো দেখতে অনেকটা ব্যাকটেরিয়াল মেনিনজাইটিসের মতো—মাথাব্যথা, জ্বর, বমি বমি ভাব। তবে এরপরই শুরু হয় আরও মারাত্মক উপসর্গ—ঘাড় শক্ত হয়ে যাওয়া, খিঁচুনি, বিভ্রান্তি, মানসিক অবস্থা পরিবর্তন ও কোমায় চলে যাওয়া।

চিকিৎসা প্রসঙ্গে চিকিৎসক ড. স্টেফানি উইডমার বলেন, “এই সংক্রমণ যেকোনো সুস্থ মানুষেরও হতে পারে। এর জন্য কোনো পূর্ব-অসুস্থতা থাকা প্রয়োজন নেই।” তিনি জানান, PAM ধরা পড়লে দ্রুত চিকিৎসা শুরু করাটা সবচেয়ে জরুরি। যদিও কিছু ওষুধ যেমন অ্যান্টিফাংগাল এবং অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োগে আংশিক সাড়া পাওয়া যায়, এখনো পর্যন্ত একে প্রতিরোধ বা চিকিৎসার জন্য ১০০% কার্যকর কোনো ওষুধ নেই।

এই প্রাণঘাতী অ্যামিবার সংক্রমণ থেকে বাঁচতে, CDC ও চিকিৎসকরা কিছু সতর্কতা মেনে চলার পরামর্শ দিয়েছেন:

  • অপরিশোধিত বা সন্দেহজনক হ্রদ, নদী বা পুকুরের পানিতে সাঁতার না কাটা

  • নাক ধোয়ার সময় সর্বদা ফুটানো বা ডিস্টিল্ড পানি ব্যবহার করা

  • সাঁতারের সময় পানি যেন নাক দিয়ে ঢুকে না পড়ে, তা নিশ্চিত করা

  • ক্লোরিনযুক্ত সুইমিং পুল ও সমুদ্রে সাঁতার সাধারণত নিরাপদ হলেও, স্থানীয় নির্দেশনা মেনে চলা

এই ঘটনা আবারও স্মরণ করিয়ে দেয়, দৈনন্দিন স্বাস্থ্যচর্চার সময় সচেতনতা ও সতর্কতা কতটা জরুরি হতে পারে। ছোট্ট এক ভুল প্রাণঘাতী পরিণতির দিকে নিয়ে যেতে পারে।

মুমু ২

×