ছবি: সংগৃহীত।
বর্তমান ডিজিটাল যুগে ব্যাংকিং লেনদেন আমাদের দৈনন্দিন জীবনের অবিচ্ছেদ্য অংশ হয়ে উঠেছে। আর্থিক সুবিধা যেমন বেড়েছে, তেমনই বেড়েছে সাইবার জালিয়াতির ঝুঁকি। সামান্য অসাবধানতা বা অজ্ঞতার কারণে আমাদের ব্যাংক একাউন্ট অরক্ষিত হয়ে পড়তে পারে এবং এর ফলস্বরূপ বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির শিকার হতে হয়। ব্যাংক একাউন্টকে সুরক্ষিত রাখতে কিছু নির্দিষ্ট কাজ থেকে বিরত থাকা অত্যন্ত জরুরি।
নিচে এমন ১১টি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় উল্লেখ করা হলো, যা আপনার ব্যাংক একাউন্টকে নিরাপদ রাখতে সহায়ক হবে।
১. অপরিচিত লিংকে ক্লিক করা যাবে না: ইমেইল, এসএমএস বা যেকোনো সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আসা অপরিচিত বা সন্দেহজনক লিংকে ক্লিক করা থেকে বিরত থাকুন। এই লিংকগুলো ফিশিং স্ক্যাম হতে পারে, যা আপনার ব্যক্তিগত তথ্য হাতিয়ে নেওয়ার চেষ্টা করে। ব্যাংকের নাম করে আসা ভুয়া লিংকে প্রবেশ করলে আপনার লগইন আইডি, পাসওয়ার্ড বা অন্যান্য সংবেদনশীল তথ্য প্রতারকদের হাতে চলে যেতে পারে।
২. ফোন বা ইমেইলে ব্যক্তিগত তথ্য দেওয়া যাবে না: ব্যাংক বা কোনো আর্থিক প্রতিষ্ঠান কখনোই ফোন বা ইমেইলের মাধ্যমে আপনার পিন, পাসওয়ার্ড, ওটিপি (OTP) বা সম্পূর্ণ কার্ড নম্বর জানতে চায় না। যদি কেউ এমন তথ্য চায়, নিশ্চিত থাকুন যে সেটি একটি প্রতারণার চেষ্টা। ব্যাংক সংক্রান্ত কোনো জিজ্ঞাসা থাকলে সরাসরি ব্যাংকের অফিসিয়াল হেল্পলাইন নম্বরে যোগাযোগ করুন।
৩. পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে ব্যাংকিং লেনদেন নয়: পাবলিক ওয়াইফাই নেটওয়ার্ক সাধারণত অরক্ষিত থাকে। এসব নেটওয়ার্ক ব্যবহার করে অনলাইন ব্যাংকিং লেনদেন করলে আপনার সংবেদনশীল তথ্য চুরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে। একান্ত প্রয়োজন না হলে পাবলিক ওয়াইফাই ব্যবহার করে ব্যাংকিং অ্যাপ বা ওয়েবসাইট ব্যবহার করা থেকে বিরত থাকুন। সম্ভব হলে সুরক্ষিত ব্যক্তিগত নেটওয়ার্ক বা মোবাইল ডেটা ব্যবহার করুন।
৪. সহজে অনুমান করা যায় এমন পাসওয়ার্ড ব্যবহার নয়: আপনার ব্যাংক একাউন্ট এবং অন্যান্য অনলাইন অ্যাকাউন্টের জন্য শক্তিশালী ও জটিল পাসওয়ার্ড ব্যবহার করুন। জন্মতারিখ, ফোন নম্বর, বা সাধারণ নাম—এমন কিছু পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহার করা যাবে না। পাসওয়ার্ডে ছোট ও বড় হাতের অক্ষর, সংখ্যা এবং বিশেষ অক্ষরের মিশ্রণ ব্যবহার করুন।
৫. পাসওয়ার্ড বা পিন কোথাও লিখে রাখা যাবে না: আপনার ব্যাংক একাউন্টের পাসওয়ার্ড বা এটিএম পিন কোথাও লিখে রাখা নিরাপদ নয়। বিশেষ করে মানিব্যাগ বা ব্যাগে এমন তথ্য লিখে রাখলে তা চুরি হয়ে গেলে বড় ধরনের বিপদে পড়তে পারেন। পাসওয়ার্ড মনে রাখার চেষ্টা করুন, অথবা নিরাপদ পাসওয়ার্ড ম্যানেজারের সাহায্য নিতে পারেন।
৬. এটিএম বুথে অপরিচিতদের সাহায্য নেওয়া যাবে না: এটিএম বুথে টাকা তোলার সময় কোনো অপরিচিত ব্যক্তির সাহায্য নেবেন না। কার্ড প্রবেশ করানো বা পিন নম্বর দেওয়ার সময় অন্য কেউ যেন আপনার লেনদেন দেখতে না পারে, সেদিকে লক্ষ্য রাখুন। প্রয়োজনে বুথের নিরাপত্তারক্ষীর সাহায্য নিন।
৭. ভুয়া কল বা মেসেজের ফাঁদে পা দেওয়া যাবে না: অনেক সময় লটারি জেতার লোভ দেখিয়ে বা উপহারের নাম করে ফোন বা মেসেজ আসে, যেখানে আপনার ব্যাংক একাউন্ট নম্বর বা ওটিপি চাওয়া হয়। এসব ভুয়া কলের ফাঁদে পা দেবেন না এবং কোনো তথ্য দেবেন না।
৮. সফটওয়্যার আপডেটে অবহেলা নয়: আপনার কম্পিউটার বা মোবাইলে ব্যবহৃত ব্যাংকিং অ্যাপ এবং অপারেটিং সিস্টেম নিয়মিত আপডেট করুন। সফটওয়্যার আপডেটে নিরাপত্তার নতুন ফিচার যুক্ত হয়, যা আপনার ডিভাইসকে হ্যাকিং থেকে রক্ষা করে।
৯. ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিরীক্ষায় অবহেলা নয়: আপনার ব্যাংক স্টেটমেন্ট নিয়মিত পরীক্ষা করুন। কোনো অপরিচিত লেনদেন বা অসঙ্গতি চোখে পড়লে দ্রুত আপনার ব্যাংকের সাথে যোগাযোগ করুন। এটি ছোটখাটো জালিয়াতি থেকে বড় ক্ষতি প্রতিরোধে সহায়ক হতে পারে।
১০. কার্ডের তথ্য সেভ করে রাখা যাবে না: অনলাইন কেনাকাটার সময় ওয়েবসাইটে আপনার ডেবিট বা ক্রেডিট কার্ডের তথ্য 'সেভ' করে রাখা নিরাপদ নয়, বিশেষ করে যদি ওয়েবসাইটটি সুপরিচিত বা সুরক্ষিত না হয়। এতে আপনার কার্ডের তথ্য চুরি হওয়ার ঝুঁকি থাকে।
১১. একাউন্ট থেকে দীর্ঘ সময় লগআউট না হওয়া নয়: অনলাইন ব্যাংকিং বা ব্যাংকিং অ্যাপ ব্যবহার করার পর অবশ্যই লগআউট করুন। বিশেষ করে পাবলিক কম্পিউটার ব্যবহার করার সময় এই বিষয়টি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। যদি আপনি লগআউট করতে ভুলে যান, তবে অন্য কেউ আপনার একাউন্টে প্রবেশ করে আপনার ক্ষতি করতে পারে।
ব্যাংকিং জালিয়াতি থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে ব্যক্তিগত সতর্কতা এবং সচেতনতা অপরিহার্য। উপরের উল্লেখিত বিষয়গুলো মেনে চললে আপনার ব্যাংক একাউন্ট অনেকটাই সুরক্ষিত থাকবে এবং আপনি নিশ্চিন্তে ডিজিটাল ব্যাংকিং এর সুবিধা উপভোগ করতে পারবেন। মনে রাখবেন, আপনার আর্থিক নিরাপত্তা আপনার নিজের হাতেই।
নুসরাত
