ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৯ মে ২০২৫, ১৫ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

৪০০ বছর ধরে পৃথিবীর বুকে আজো দাঁড়িয়ে আছে বেনামি এক গাছ

শাহাজাদ ইসলাম, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঠাকুরগাঁও 

প্রকাশিত: ১১:১৮, ২৮ মে ২০২৫

৪০০ বছর ধরে পৃথিবীর বুকে আজো দাঁড়িয়ে আছে বেনামি এক গাছ

ছবি- দৈনিক জনকণ্ঠ

সকাল থেকে সন্ধ্যা ঘুমানো যাওয়া পর্যন্ত আমরা কত না গাছপালা দেখে থাকি। কিছু কিছু নামসহ চেনা আবার কিছু অচেনা ও অজানা। জানা গেছে, কালের সাক্ষী হয়ে এখনো দাঁড়িয়ে আছে ৪ শত বছরের পুরনো নাখিজা নামে বেনামি গাছটি। গাছটি এখনো তার যৌবন ধরে রেখেছেন বলে হাজার হাজার পাখির আশ্রয়স্থল এই গাছের ডালে। 

গাছটি প্রতিদিন দেখতে ছুটে আসে হাজারো দর্শনার্থী। যেমনি গাছটির নাম তেমনি দেখতে অনেক সুন্দর ও সবুজ শ্যামল ঘেরা। গাছের ডালে ডালে বসা পাখির কিচিরমিচির ডাক দর্শনার্থীকে মুগ্ধ করে তুলে। 

ঠাকুরগাঁওয়ের একটি গ্রামে দেখা মিললো ৪০০ বছরের পুরনো বিরল নাখিজার গাছ। ফল আর পাতা ডুমুরগাছের মতো। কখনো ফুল ফোটেনি এই ঐতিহাসিক গাছটি আজও তার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এবং ঐতিহ্য সংরক্ষণ করে রেখেছে। স্থানীয়রা গাছটিকে "প্রাচীন নিদর্শন" হিসেবে চিহ্নিত করেছেন এবং এটি এক ধরনের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও জীববৈচিত্র্যের উৎস হয়ে দাঁড়িয়েছে।

গাছটি ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার ঢোলার হাট ইউনিয়নের বদেশ্বরি হাটে অবস্থিত, যেখানে প্রায় শতাব্দীকাল ধরে গাছটি দাঁড়িয়ে আছে। আধুনিক যুগে এটি শুধুমাত্র ঐতিহাসিক এবং প্রাকৃতিক গুরুত্বের জন্য আলোচিত হয়ে উঠেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা মোজা উদ্দিন বলেন, "এই গাছটি আমাদের গ্রামের ইতিহাসের অংশ। এই গাছের ফুল কখনো দেখা যায়নি। ডুমুরগাছের সঙ্গে এই গাছের পাতা ও ফলের অনেক মিল। কিন্তু ফলের আকৃতি ছোট। গ্রামের লোকজন একে নাকিজা নামে ডাকেন। তবে গাছটির প্রকৃত নাম কী, তা কেউ বলতে পারেন না। এমনকি আমাদের পূর্বপুরুষেরাও বলতে পারেননি, কারা কখন লাগিয়েছিলেন গাছটি।’ আমাদের পূর্ব পুরুষরা বলতেন, এই গাছে অনেক ধরনের পাখপাখালি বসবাস করতো এমন কি এক সময়ে পেঙ্গুইন পাখি বসবাস করতো এবং অনেক সময় আমরা এই গাছের ছায়ায় বসে গল্প করতাম। এখন, এর বয়স দেখে সত্যিই অবাক লাগে, এটি আমাদের প্রাকৃতিক ঐতিহ্য এবং গর্ব।"

গাছটির পরিচিতি ও অবস্থান সম্পর্কে স্থানীয় প্রশাসন জানায়, এই গাছটির বয়স প্রায় অনুমানিক ৪০০ বছর হতে পারে এবং এটি নাখিজার গাছ নামে পরিচিত। কেউ কেউ আবার নাগড়ি গাছ নামেও ডাকে এটি একটি বিরল প্রজাতির গাছ, যার উচ্চতা প্রায় ১০০ ফুট এবং প্রশস্ততা প্রায় ৪০ ফুট হতে পারে । এটি বিশেষত দীর্ঘ জীবনকাল এবং শক্তিশালী শিকড়ের জন্য পরিচিত, যা দীর্ঘকাল ধরে টিকে থাকার ক্ষমতা রাখে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাখিজার গাছ একটি প্রাচীন প্রজাতি, যা সাধারণত উষ্ণ অঞ্চলগুলিতে পাওয়া যায়। এই গাছটি রক্ষণাবেক্ষণ করা হলে, এটি আরও দীর্ঘ সময় বেঁচে থাকতে পারে এবং আগামী প্রজন্মের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ হতে পারে।

এ বিষয়ে কথা বলেছেন স্থানীয় আরেক বাসিন্দা মো. আরিফুল ইসলাম। তিনি বলেন, "এই গাছটি আমাদের জেলার জন্য এক গুরুত্বপূর্ণ প্রাকৃতিক সম্পদ। এটি শুধুমাত্র একটি গাছ নয়, বরং আমাদের জীববৈচিত্র্যের অংশ। আমরা এই গাছটির রক্ষণাবেক্ষণ এবং সংরক্ষণে আরও সচেষ্ট হবো, যাতে ভবিষ্যত প্রজন্মও এটি উপভোগ করতে পারে।"

স্থানীয় বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নাখিজার গাছটির প্রাকৃতিক অবস্থান এবং এর বিভিন্ন ঔষধি গুণের কারণে এটি ভবিষ্যতে গবেষণার গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে। তারা বলছেন, এই ধরনের বিরল গাছগুলির রক্ষণাবেক্ষণ অত্যন্ত জরুরি, কারণ এটি প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষা করতে সাহায্য করে।

ঠাকুরগাঁওয়ের এই ঐতিহাসিক নাখিজার গাছটি শুধু এক প্রাকৃতিক সৌন্দর্য নয়, এটি গ্রামের ইতিহাস এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যের অমূল্য অংশ হিসেবেও পরিচিত। স্থানীয়রা আশা করছেন, এই গাছটির সংরক্ষণে সরকার ও স্থানীয় প্রশাসন যথাযথ উদ্যোগ নেবে, যাতে এটি আগামী প্রজন্মের জন্য আরও দীর্ঘকাল টিকে থাকতে পারে।

নোভা

×