ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

হাটে পাইকার কমে যাওয়ায় উবৃত্ত পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারী

ফুয়াদ হাসান,রংপুর

প্রকাশিত: ১৬:২৭, ২৯ মে ২০২৫

হাটে পাইকার কমে যাওয়ায় উবৃত্ত পশু নিয়ে দুশ্চিন্তায় খামারী

রংপুরে গত কয়েক বছর ধরে কোরবানির পশু উৎপাদন হয় চাহিদার চেয়ে বেশি। উদ্বৃত্ত এ পশুর মূল ক্রেতা ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকার পাইকারি ক্রেতারা। তবে আগের বছরগুলোতে বেশি হাসিল আদায়, দালালের দৌরাত্ম্যের কারণে এবার সেই পাইকারি পশু ক্রেতাদেরই দেখা মিলছে না হাটগুলোতে। একই কারণে সাধারণ ক্রেতাদের মধ্যেও দেখা গেছে হাটবিমুখতা। এজন্য অনেকে পশু কিনছেন সরাসরি খামার থেকে। এতে কোরবানি ঈদের এক সপ্তাহ আগেও জমেনি জেলার বেশির ভাগ হাট। এদিকে বাহির থেকে পাইকার না আসায় দুশ্চিন্তায় পড়েছেন রংপুরের খামারিরা। 


এ বিষয়ে কথা হয় জমজম ক্যাটেল ফার্মের খামারী আব্দুল মতিন আজিজের সাথে, তিনি জানান, কোরবানীর পশু হাটে তোলা ও নানা সমস্যার কারণে কয়েক বছর ধরে তিনি খামারেই তার পশু বিক্রি করছেন। প্রতিবছর কিছু পশু থেকে গেলেও হাটে তোলেন না তিনি। এবছর তার খামারে, গরু, মহিষ, ছাগল ও দুম্বাসহ প্রায় ২ শতাধিক পশু রয়েছে। যদিও তিনি দাবী করেন, প্রায় বেশির ভাগ গরু বিক্রি হয়েছে তারা। তবে থেকে যাবে কিছুটা।

এ বিষয়ে কথা হয় বুড়ির হাটের ক্রিয়েটিভ খামারের স্বতাধিকারী, ইসতিয়াক আহম্মেদ তুষারের সাথে তিনি জানান, ৭ বছর ধরে তিনি কোরবানীর জন্য গরু তৈরি করছেন। এবছরও ২৬ টি গরু প্রস্তুত করেছেন তিনি। তবে হাট অব্যবস্থাপনার কারণে তিনিও হাটে তোলেন না তার গুরু। তিনি ন্যাচারাল খাবারে গরু প্রস্তুত করেন। বিষয়টি জানা ব্যক্তিরাই এখানে এসে কেনে। তাই সেই ক্রেতাদের কথা চিন্তা করেই প্রতিবছর গরু তৈরি করি। এবছর তার ২৩ টি গরু বিক্রির হবে জানান তিনি।


তবে রংপুরের বেশির ভাগ খামারীর কোরবানীর জন্য প্রস্তুত পশু, ওঠে জেলার বিভিন্ন হাট-বাজারে। 
যেগুলো পাইকারের মাধ্যমে চলে যায় দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। তবে এখন পর্যন্ত গুটি কয়েক পাইকার ছাড়া হাট গুলোতে পাইকারের দেখা না মেলায় হতাশ তারা। 


প্রাণিসম্পদ অধিদপ্তর থেকে জানা গেছে, এ বছর রংপুরে কোরবানির পশুর চাহিদা নির্ধারণ করা হয়েছে ২ লাখ ২৪ হাজার ৭শ ৫২টি। খামার ও বাসাবাড়িতে রয়েছে ৩ লাখ ৬৩ হাজার ৩শ ১২ টি পশু। সেই হিসাবে উদ্বৃত্ত পশুর সংখ্যা ১ লাখ ৩৮ হাজার ৫শ ৬১টি।

নগরীর অন্যতম লালবাগ পশুর হাটের ইজারাদার আব্দুল্লাহেল কাফি বলেন, আগের বছরগুলোতে কোরবানি ঈদের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে রংপুরসহ উত্তরাঞ্চলের প্রায় দেড় হাজার হাটে ২৫ লাখের বেশি গরু বিক্রি হতো। এই গরুর ৮০ ভাগ ক্রেতাই থাকত উত্তরাঞ্চলের বাইরে বৃহত্তর ঢাকা, চট্টগ্রাম, সিলেট, বরিশাল থেকে আসা ব্যবসায়ীরা। তবে এবার তাদের দেখা তেমন মিলছে না।

জেলার প্রধান পশুর হাটগুলোর মধ্যে অন্যতম  নগরীর লালবাগ, বুড়িরহাট,  নিসবেতগঞ্জ ও গঙ্গাচড়ার বেতগাড়ি হাট ঘুরে দেখা যায়, গরু নিয়ে অপেক্ষায় রয়েছেন খামারী ও গৃহস্থরা। অথচ ক্রেতা নেই বললেই চলে। যদিও কিছু ক্রেতা পাওয়া যায় তবে বনিবনা না হওয়ায় বিক্রি হচ্ছে না।

প্রতিবছর বিভিন্ন জেলার পাইকারদের পাশাপাশি স্থানীয় ক্রেতার ভিড় দেখা গেলেও এবার তা চোখে পড়েনি। হাতেগোনা দু’একজন পাইকারের দেখা মিললেও বিক্রি না হওয়ায় হতাশ বিক্রেতারা।


ঢাকা থেকে আসা পাইকার নিজামউদ্দিন ও বাদশা মিয়া জানান, আগের বছরগুলোতে হাসিলের নামে হাট ইজারাদারের লোকজনের বেশি টাকা আদায় ও দালালদের উৎপাতের কারণে অনেক পাইকার আগ্রহ হারিয়েছেন। এ বছর হাসিলের পাশাপাশি দালালদের অসহনীয় উৎপাত রয়েছে। সেই সাথে পরিবহন খরচও অধিক হওয়ায় আগ্রহ কম পাইকারদের। এ ছাড়াও গতবছরের তুলনায় অতিরিক্ত দাম চাওয়ায় হচ্ছে হাট গুলোতে। ফলে  লস হবার আশংকায় পাইকার কমে গেছে বলে জানান এই দুই পাইকার।

 
বেতগাড়ি হাটের ইজারাদার শহিদুল ইসলাম বলেন, ঈদের সময় ঘনিয়ে এলেও বিক্রি নেই। যেখানে অন্য বছর গুলোতে প্রতিহাটে এক হাজার গরু বিক্রি হয়। সেখানে বিক্রি হচ্ছে আশংকা হারে কম। অথচ আগের বছরগুলোতে ঈদের ১৫ থেকে ২০ দিন আগে থেকেই পাইকারদের তোরজোর চলতো। তা এখন দেখা যাচ্ছে না। তিনি জানান একই সাথে পাইকার ও স্থানীয় ক্রেতা কমে যাওয়ায় খামারীর সাথে বিপদে তারাও।


বেতগাড়ি হাটে গরু নিয়ে আসা হাসেম আলী বলেন, ‘লোকজন শুধু দাম শোনে , আর যায়। দুই একজন ছাড়া বেশিরভাগেই দাম করে না।

হাটে আসা আসাদুল হক ও লিটন মিয়া জানান, এবার গরুর দাম বেশি চাচ্ছে তাই এখনও কেনেন নি। চেষ্টা করছেন বাজেটের মধ্যে হলে নিয়ে যাবেন। এজন্য প্রায় সকল হাটে যাবার কথা জানান তারা।

নুর মোহাম্মদ নামে এক সরকারি চাকরিজীবী বলেন, কষ্টে উপার্জিত টাকা দিয়ে গরু কেনার জন্য হাটে এসেছি। কিন্তু দালালকে ডিঙিয়ে হাটে গরু কেনার সুযোগ নেই। নিজেরা দরদাম করে গরু বের করলেও নানা কায়দায় দালালরা টাকা আদায় করে। এজন্য অনেকে হাটের অদুরে রাস্তা থেকো গরু কিনছে। এতে দালালের হয়রানি, হাসিল থেকে মুক্ত হওয়া যায়। 

তবে হাটে পশু কেনা বেচা হলে, হাট কর্তৃপক্ষের পাশাপাশি রাজস্ব পায় সরকার। অথচ হাটের বাহিরে রাস্তায় এসব পশু কেনাবেচায়, একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে হাট কর্তৃপক্ষ। অন্যদিকে বিপুল পরিমান রাজস্ব বঞ্চিত হচ্ছে সরকার।

সায়মা

×