ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩১ মে ২০২৫, ১৭ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

দাম কমবে নাকি বাড়বে? শেরপুরে ৮৫ হাজার পশু প্রস্তুত

রফিকুল ইসলাম আধার, শেরপুর

প্রকাশিত: ১৬:৩৮, ২৯ মে ২০২৫

দাম কমবে নাকি বাড়বে? শেরপুরে ৮৫ হাজার পশু প্রস্তুত

ছবি: জনকণ্ঠ

ঈদুল আজহা মানেই কোরবানির ঈদ। আর এ ঈদ ঘনিয়ে আসার সাথে সাথে শেরপুরে ব্যস্ততা বেড়েছে পশু খামারিদের মধ্যে। পশুদের আকর্ষণীয় করে তোলার জন্য যত্নে কোনো ঘাটতি রাখছেন না তারা। গরু-মহিষকে কাঁচা সবুজ ঘাস, ভুষি, খৈল খাইয়ে মোটাতাজা করতে দিনরাত পরিশ্রম করছেন খামারিরা। তবে গো-খাদ্যের মূল্যবৃদ্ধির কারণে বাড়তি খরচ মিটিয়ে বাজারে উপযুক্ত মূল্যে বিক্রয়ের বিষয়ে রয়েছেন শঙ্কায়।

অন্যদিকে, জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর বলছে, জনগণ যাতে স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদভাবে কোরবানি সম্পন্ন করতে পারে, সে লক্ষ্যে মাঠপর্যায়ে কার্যক্রম চলমান রয়েছে। স্থানীয় চাহিদা পূরণ করে পশুগুলো জেলার বাইরের হাট-বাজারেও পাঠানো হবে।

জেলা প্রাণিসম্পদ দপ্তর সূত্রে জানা যায়, শেরপুরের ৫টি উপজেলায় ছোট-বড় প্রায় ১৩ থেকে ১৪ হাজার খামারি রয়েছেন। অনেক পরিবার ব্যক্তি উদ্যোগেও গরু-মহিষ ও ছাগল পালন করেন। ঈদুল আজহা উপলক্ষে জেলায় কোরবানির জন্য প্রস্তুত রয়েছে ৮৫ হাজার ৭৬৩টি পশু, যা জেলার চাহিদার তুলনায় ২৪ হাজার ২৪০টি বেশি। এর মধ্যে কোরবানিযোগ্য গরু ও মহিষের সংখ্যা ৫৫ হাজার ২৪৫টি এবং ছাগল ও ভেড়া রয়েছে ৩০ হাজার ৬১৮টি।

স্থানীয় খামারি ও কৃষকদের উৎপাদিত পশু জেলার চাহিদা মেটানোর পর দেশের বিভিন্ন স্থানে রপ্তানি করাও সম্ভব হবে বলে জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট দপ্তর।

এদিকে কোরবানির পশুর প্রাপ্যতা, নিরাপদ সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করতে জেলায় সমন্বিত পরিকল্পনা অনুযায়ী কাজ করছে প্রাণিসম্পদ বিভাগ। কৃত্রিম উপায়ে মোটাতাজাকরণ রোধে নিয়মিত মনিটরিং টিম গঠন করা হয়েছে। প্রতিটি উপজেলায় ভেটেরিনারি টিমের মাধ্যমে সচেতনতামূলক কার্যক্রম ও নজরদারি চালানো হচ্ছে। পশুর শরীরে কৃত্রিম উপাদান প্রয়োগের অভিযোগ পেলে তাৎক্ষণিকভাবে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ব্যবস্থাও রাখা হয়েছে।

জেলায় ২৪টি অনুমোদিত হাটে ভেটেরিনারি মেডিকেল টিম রাখা হয়েছে। হেলথ সার্টিফিকেট যাচাই, দ্রুত সেবা প্রদানে হটলাইন ও কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। সরাসরি হাটের বিকল্প হিসেবে অনলাইন হাটও রাখা হয়েছে এবং পশু বিক্রিতে অনলাইন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহারকে উৎসাহিত করা হচ্ছে। প্রতিটি উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিসে ‘ডিজিটাল তথ্য সহায়তা ডেস্ক’ চালু করা হয়েছে। জনসচেতনতামূলক প্রচারপত্র, ব্যানার, মাইকিং ও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রচার চালানো হচ্ছে।

নিরাপদ কোরবানি ও বর্জ্য ব্যবস্থাপনায় সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোর সঙ্গে সমন্বয় করে কাজ চলছে। জরুরি হটলাইন নম্বর: জেলা কন্ট্রোল রুম—০২৯৯৭৭৮১০৩৬, ০১৩২৪২৯০১৩৫। প্রতিটি উপজেলার জন্য আলাদা হেল্পডেস্ক নম্বর প্রচার করা হচ্ছে।

সরেজমিনে কয়েকটি খামারে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, কোরবানির জন্য প্রস্তুতকৃত পশুগুলোর আলাদাভাবে যত্ন নিচ্ছেন খামারিরা। নিয়মিত পশুদের স্বাস্থ্য পরীক্ষা করানো হচ্ছে। উপজেলা প্রাণিসম্পদ অফিস থেকেও খামারগুলোর নিয়মিত খোঁজখবর নেয়া হচ্ছে। খামারিরা জানান, গরুগুলোকে প্রতিদিন কাঁচা ঘাস খাওয়ানো হয় এবং পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখার ওপর বিশেষ গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে, যাতে কোনো রোগবালাইয়ের সংক্রমণ না হয়।

নালিতাবাড়ী উপজেলার খামারি বিল্লাল হোসেন বলেন, “কোরবানি উপলক্ষে আমার খামারে ২০টি গরু প্রস্তুত করেছি। প্রতিটি গরুর নিয়মিত যত্ন নিচ্ছি। তবে গো-খাদ্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় খরচ অনেক বেড়েছে।” একই কথা জানান সদর উপজেলার পাকুড়িয়া গ্রামের খামারি ফজিলা খাতুন, বলায়েরচর গ্রামের খামারি দুলাল মিয়া ও গাজীরখামার এলাকার খামারি আতিউর রহমান।

এ বিষয়ে শেরপুর জেলা প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা (ভারপ্রাপ্ত) ডা. রেজওয়ানুল হক ভূঁইয়া বলেন, “কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে পশুকে অসদুপায়ে মোটাতাজা না করতে আমরা বিভিন্ন এলাকায় সচেতনতামূলক ক্যাম্পেইন করেছি। পাশাপাশি, ভেটেরিনারি ফার্মেসিগুলোতে নিম্নমানের ওষুধ সামগ্রী না রাখার বিষয়টি তদারকি করা হচ্ছে। কয়েক দফায় গো-খাদ্যের দাম বাড়ায় উৎপাদন খরচ কিছুটা বেড়েছে। তবে আমরা সর্বাত্মক প্রস্তুতি গ্রহণ করেছি, যাতে জেলার জনগণ স্বাস্থ্যসম্মত ও নিরাপদভাবে কোরবানি সম্পন্ন করতে পারে। সেইসাথে চাহিদা মিটিয়ে বাড়তি পশু উপযুক্ত মূল্যে রপ্তানি করতে পারে।”

শহীদ

×