ঢাকা, বাংলাদেশ   রোববার ০১ জুন ২০২৫, ১৮ জ্যৈষ্ঠ ১৪৩২

সড়কে ১০ বছর ঘোরেনি বাসের চাকা

আপেল মাহমুদ, কন্ট্রিবিউটিং রিপোর্টার, ঠাকুরগাঁও

প্রকাশিত: ০৯:৪৮, ৩১ মে ২০২৫; আপডেট: ০৯:৪৯, ৩১ মে ২০২৫

সড়কে ১০ বছর ঘোরেনি বাসের চাকা

ছবি: জনকণ্ঠ

ঠাকুরগাঁও-রুহিয়া-আটোয়ারী-পঞ্চগড় আঞ্চলিক সড়কটি পাকা, ব্রিজ-কালভার্টও আছে। কিন্তু গত ১০ বছর ধরে এই সড়কে চলাচল করছে না কোনো যাত্রীবাহী বাস। রাস্তায় চলছে শুধু পাগলু, ভটভটি, নসিমন, ব্যাটারিচালিত অটো ও ভ্যান।

যাত্রীদের এই বিকল্প যানবাহনে প্রতিনিয়তই ঘটছে দুর্ঘটনা, ঘটছে প্রাণহানির ঘটনা। অথচ এই সড়ক ধরে প্রতিদিন গন্তব্যে যেতে বাধ্য হচ্ছেন হাজারো মানুষ—জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।

ঠাকুরগাঁও সদর থেকে রুহিয়া ১৮ কিলোমিটার, রুহিয়া থেকে আটোয়ারী ৭ কিলোমিটার এবং আটোয়ারী থেকে পঞ্চগড় ২০ কিলোমিটার।

এই রুটে আগে বাস চললেও এখন কেবল ঢাকাগামী কিছু রাতের কোচ ছাড়া আর কোনো আন্তঃজেলা বা উপজেলাগামী বাস চলাচল করে না।

শিক্ষক রাবেয়া সুলতানা বলেন, “আমাদের সময় বাসে করেই স্কুলে যাওয়া হতো। এখন শিক্ষার্থীরা ছোট ছোট যানবাহনে ঝুঁকি নিয়ে যাতায়াত করছে। এটা খুবই দুঃখজনক।”

ব্যবসায়ী রিংকু জানান, “বাসস্ট্যান্ডে আমার দোকান ছিল। বাস বন্ধ হতেই ব্যবসা একেবারে শেষ হয়ে যায়। বাধ্য হয়ে এখন ঢাকায় এসে থাকি। নিজ এলাকায় ব্যবসা করতে পারলে আজ এতটা ভুগতে হতো না।”

রুহিয়া চৌরাস্তায় মৌসুমি আক্তার বলেন, “অটোতে বসে আছি, কখন ছাড়বে জানি না। কিন্তু আর কোনো উপায় নেই। বাস থাকলে এত কষ্ট হতো না।”

স্থানীয় সূত্র বলছে, এই রুটে প্রতিনিয়ত ছোট যানবাহনের কারণে দুর্ঘটনা ঘটছে। অনেকেই নিহত বা পঙ্গু হচ্ছেন। সড়ক পাকা হলেও নিরাপদ গণপরিবহন না থাকায় ঝুঁকিপূর্ণ যাত্রাই নিয়মে পরিণত হয়েছে।

রুহিয়া-পঞ্চগড় বাসস্ট্যান্ডের বুকিং মাস্টার সাইফুল ইসলাম জানান, “১০–১১ বছর হয়েছে বাস বন্ধ হওয়ার। অনেকদিন বেকার ছিলাম। এখন ব্যাটারিচালিত অটো চালিয়ে সংসার চলছে।”

রুহিয়া থানা শ্রমিক দলের সভাপতি দবিরুল ইসলাম বলেন, “অবৈধ পাগলু ও থ্রি হুইলারের কারণে মিনিবাস চালানো যাচ্ছে না। আমরা আবারও উদ্যোগ নেব।”

ঠাকুরগাঁও জেলা শ্রমিক দলের সভাপতি আব্দুল জব্বার বলেন, “আমরা কয়েকবার বাস চালুর চেষ্টা করেছি, আবারও করব।”

ঠাকুরগাঁও সদর ইউএনও খাইরুল ইসলাম বলেন, “বাস চালুর জন্য স্থানীয় পরিবহণ উদ্যোক্তাদেরই উদ্যোগ নিতে হবে। প্রশাসন সব ধরনের সহায়তা দিতে প্রস্তুত।”

ঠাকুরগাঁও-রুহিয়া-আটোয়ারী-পঞ্চগড় রুটে যেখানে রাস্তাঘাট উন্নত, সেখানে গন্তব্যে পৌঁছাতে হয় জীবনের ঝুঁকি নিয়ে।

বাস চালুর দাবি এখন শুধু সময়ের দাবি নয়, এটি মানুষের অধিকার। এই অঞ্চলের মানুষ উন্নয়ন চায়, নিরাপত্তা চায়, সময়মতো গন্তব্যে পৌঁছাতে চায়। বাস আবার চালু হলে শুধু একটি পরিবহন ব্যবস্থা নয়, পুরো একটি অঞ্চলের অর্থনীতি, শিক্ষা, চিকিৎসা ও জীবনের গতি ফিরবে। সেই প্রত্যাশাই এখন সকলের।

মুমু

×