
দৈনিক জনকণ্ঠ
তথ্যপ্রযুক্তি ও ইন্টারনেটের ক্রমবর্ধমান ব্যবহার জীবনযাপনে নিয়ে এসেছে নতুন গতি। জীবন বদলে দেওয়ার এই জাদুর কাঠির সঙ্গে হারিয়ে গেছে জীবনের সঙ্গে ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে থাকা অনেক জিনিসপত্রও। আশি বা নব্বই দশকে যে যন্ত্রগুলো অত্যন্ত প্রয়োজনীয় ছিল, একবিংশ শতাব্দীতে সবই কালের গর্ভে বিলীন।
কালের গর্ভে বিলীন হওয়া অধিকাংশ জিনিসপত্রই এখন ইতিহাস হয়ে গেছে। যে-সব জিনিসের নাম বই-পুস্তক কিংবা বৃদ্ধদের মুখের গল্পে শোভা পায়। হারিয়ে যাওয়া অতি পরিচিত জিনিস পত্রের মধ্যে অন্যতম একটি বস্তু ‘ডাকবাক্স’। মোবাইলের ব্যবহার শুরু হওয়ার পর থেকে ধীরে ধীরে বিলীন হয়ে যায় ডাকবাক্স।
এখন দেশে পোস্ট অফিস কিংবা ডাকঘর থাকলেও ডাকবাক্সের দেখা মেলে ভাঁড়। দুয়েকটা ডাকবাক্স দেখা গেলেও সেগুলো অযত্নেœ অবহেলায় নষ্ট হয়ে গেছে। প্রতিবছর ০৯ অক্টোবর বিশ^ ডাক দিবস পালিত হলেও ডাকবাক্সের দিকে নজর থাকে না কারোরই।
প্রাচীন ইতিহাসের ধারক বাহক ডাকবাক্সের ইতিহাস বাস্তবতা থেকে প্রায় মুছে যাচ্ছে। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের কাছেও এটি একটি অজানা বিষয় হয়ে যাচ্ছে। দুয়েকটা গ্রামীণ জাদুঘরে ডাকবাক্স সংরক্ষণ করে রাখা হলেও উপজেলা পর্যায়ে এসব স্মৃতি বিজড়িত প্রয়োজনীয় বস্তু এগুলোর সংরক্ষণের বড়ই অভাব।
সম্প্রতি সিরাজগঞ্জের উল্লাপাড়া উপজেলা পরিষদে উন্মুক্ত স্থানে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার উদ্যোগে প্রাচীন ইতিহাসের ধারক বাহক হিসেবে একটি ‘ডাকবাক্স’ ও তৎকালীন সময়ে ‘টিএনও’দের ব্যবহৃত একটি জিপ গাড়ি সুসজ্জিত করে সাজিয়ে রাখা হয়েছে । এটি উদ্বোধন করেছেন সিরাজগঞ্জ জেলা প্রশাসক নজরুল ইসলাম। উপজেলা পরিষদে উন্মুক্ত স্থানে এমন সংরক্ষণে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা প্রশংসিত হচ্ছে।
উপজেলায় আসা নানা শ্রেণীপেশার মানুষ সংরক্ষিত স্থানে গাড়ি ও ডাকবাক্সটি দেখছেন। ডাকবাক্সটি দেখে শিশু-কিশোররা অতীতের ব্যবহৃত ‘ডাকবাক্স’ সম্পর্কে জানতে উদ্বুদ্ধ হচ্ছে। ডাকবাক্স দেখে ইন্টারনেটের যুগ এবং ডাকবাক্সের যুগে তথ্য আদান-প্রদানের পার্থক্যও খুঁজছে।
শিশু-কিশোরদের পাশাপাশি ‘ডাকবাক্স’ দেখে বয়োবৃদ্ধরাও তাদের অতীতের স্মৃতি স্মরণ করছেন। আশি-নব্বই দশকে অধিকাংশ মানুষের অতিপ্রয়োজনীয় ছিল পোস্ট অফিস বা ডাকঘর। প্রতিদিন চিঠি আদান প্রদানের জন্য যেতে হতো ডাকঘরে। সেখানে অতি যেতœর চিঠি খানা ফেলতেন ডাকবাক্সে। উপজেলার সামনে সেই সময়ের প্রিয় জিনিসটি দেখে অতীতের স্মৃতিতে বিভোর হয়েছি।
বাঙ্গালা ইউনিয়ন থেকে উপজেলা নির্বাচন অফিসে কাজের জন্য এসে অপেক্ষারত আব্দুর রহমান নামে এক বৃদ্ধ বলেন, উপজেলায় এসে হঠাৎ করেই চোখে পড়লো ডাকবাক্সের। হঠাৎ করে ডাকবাক্স দেখে তো আমি অবাক হয়ে গেছি। ডাকবাক্সের সাথে আমার কত স্মৃতি জড়িয়ে আছে তা প্রকাশ করতে পারবো না।
ছাত্র জীবন থেকেই চিঠি আদান প্রদান করছি। একসময় প্রতিদিন চিঠি আদান করতে পোস্ট অফিসে গিয়ে ডাকবাক্সে চিঠি ফেলতাম। জরুরি সংবাদ পৌঁছানো থেকে শুরু করে যাবতীয় তথ্য আদান প্রদানে ডাকবাক্সের ব্যবহার ছিল। আমাদের প্রজন্মের কাছে অতিপরিচিত ছিল এই জিনিসটি।
কয়েকজন ক্ষুদে স্কুল শিক্ষার্থী বলেন, আমরা এখান দিয়ে স্কুলে যাওয়ার সময় ডাকবাক্স এবং পুরাতন একটি গাড়ি দেখতে পাই। ডাকবাক্স দেখে আমরা প্রাচীন ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারছি।
উপজেলায় উন্মুক্ত স্থানে তৎকালীন সময়ে টিএনওদের ব্যবহৃত জিপ গাড়ি এবং ডাকবাক্স সংরক্ষণ করায় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকে সাধুবাদ জানিয়েছেন সচেতন মহল। তারা মনে করছেন, এগুলো সংরক্ষণ করে রাখার মাধ্যমে ভবিষ্যৎ প্রজন্মকে অতীত সম্পর্কে জানান দেয়া হচ্ছে।
দৈনিক সমকালের উল্লাপাড়া প্রতিনিধি প্রবীণ সাংবাদিক কল্যাণ ভৌমিক বলেন, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার এমন উদ্যোগ সত্যিই প্রশংসনীয়। এ কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে আমাদের মতো বয়োজ্যেষ্ঠ যারা আছে তারা অতীতের স্মৃতি সহজে মনে করতে পারবে এবং ভবিষ্যৎ প্রজন্মরাও সম্পর্কে ধারণা পাবে।
এ বিষয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবু সালেহ মোহাম্মদ হাসনাত বলেন, জেলা প্রশাসক স্যারের অনুমতিক্রমে উপজেলা পরিষদের উন্মুক্ত স্থানে তৎকালীন সময়ে ‘টিএনও’দের ব্যবহৃত গাড়ি সংরক্ষণ করা হয়।
গাড়ির সাথে ইতিহাস ঐতিহ্যের ধারক একটি ডাকবাক্সও সংরক্ষণ করা হয়। এগুলো সংরক্ষণের ফলে মানুষ ইতিহাস ঐতিহ্য সম্পর্কে জানতে পারবে। মূলত এসব দিক বিবেচনা করেই এগুলো সংরক্ষণ করা হয়েছে। এতে সৌন্দর্যও বৃদ্ধি পেয়েছে।
হ্যাপী