
ছবি: জনকন্ঠ
প্রতিবন্ধী হয়েও জীবনযুদ্ধে হার মানেননি রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার জঙ্গল ইউনিয়নের সাধুখালী গ্রামের ষাটোর্ধ এক সংগ্রামী মানুষ প্রশান্ত বিশ্বাস। বয়সের ভার, দারিদ্র্য আর শারীরিক সীমাবদ্ধতা—সব বাধা উপেক্ষা করে এখনও সম্মানের সাথে জীবন চালিয়ে যাচ্ছেন তিনি।
তিন বছর বয়সেই টাইফয়েড জ্বরে আক্রান্ত হয়ে দুটি পা হারান তিনি। পা দুটি অবশ হয়ে ছোট হয়ে যায়। আর কখনো দাঁড়াতে পারেননি স্বাভাবিকভাবে। সেই থেকে শুরু হয় জীবন সংগ্রাম। শৈশবে বাবা-মায়ের ভালোবাসায় বড় হলেও, বাবার মৃত্যুর পর শুরু হয় বাস্তব জীবনের কঠিন পথচলা।
সংসার চালাতে তিনি নৌকার মাঝি হিসেবে কাজ শুরু করেন। যাত্রী পারাপার করে কোনোমতে সংসার চলত। কিন্তু গ্রামের খালে ব্রিজ নির্মিত হওয়ায় সে পথও বন্ধ হয়ে যায়। থেমে যায় মাঝির জীবন, কিন্তু থেমে যায়নি সংগ্রাম।
বর্তমানে ৬২ বছর বয়সী প্রশান্ত বিশ্বাস দুই সন্তানের জনক। সামান্য আয়ে সন্তানদের মানুষ করে দিয়েছেন বিয়ে, কিন্তু তারা ব্যস্ত নিজেদের সংসার নিয়ে। বৃদ্ধ মা-বাবার দায়িত্ব আর নেন না তারা। তাই স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এখনো ছোট একটি টিনের ঘরে বসবাস করছেন তিনি। স্ত্রী মানুষের বাসায় কাজ করেন আর প্রশান্ত বিশ্বাস কখনো জাল বোনেন, আবার কখনো হামাগুড়ি দিয়ে খালে বিলে মাছ ধরেন। সেই মাছ বিক্রি করেই চলে তাদের দু’জনের সংসার।
একদিকে চলাফেরায় অক্ষমতা, অন্যদিকে বয়সজনিত নানা রোগে জর্জরিত শরীর। তবু ভিক্ষা না করে, কারো বোঝা না হয়ে নিজের পরিশ্রমে বাঁচতে চান প্রশান্ত বিশ্বাস। জীবনের এই পর্যায়ে এসে তিনি চান একটু স্বস্তির জীবন। তার ইচ্ছে, একটি ছোট মুদি দোকান দিয়ে নিজের সংসারটা একটু ভালোভাবে চালাবেন।
তবে একটি মুদি দোকান করতে যে পরিমাণ অর্থ ও মালামাল প্রয়োজন, তা তার সামর্থ্যের বাইরে। তাই সমাজের সহৃদয় ও বিত্তবানদের কাছে তিনি আবেদন জানিয়েছেন, যেন তাকে প্রয়োজনীয় সহায়তা দিয়ে একটি মুদি দোকান করে দেওয়ার ব্যবস্থা করেন। তাহলেই হয়তো জীবনের শেষ প্রান্তে এসে স্ত্রীকে নিয়ে দু’মুঠো অন্নের নিরাপত্তা নিয়ে বেঁচে থাকতে পারবেন তিনি।
মুমু