ঢাকা, বাংলাদেশ   সোমবার ১৭ জুন ২০২৪, ৩ আষাঢ় ১৪৩১

গ্রীষ্মের কনকচূড়া

উঁচু গাছের দীর্ঘ হলুদ মঞ্জরি থেকে লুটিয়ে পড়া ফুল 

​​​​​​​মোরসালিন মিজান

প্রকাশিত: ২৩:১৫, ২৫ মে ২০২৪

উঁচু গাছের দীর্ঘ হলুদ  মঞ্জরি থেকে লুটিয়ে  পড়া ফুল 

রাজধানীর রমনা পার্কে গাছভর্তি কনকচূড়া। হলুদ ফুলের শোভা মুগ্ধ করে রাখছে দর্শনার্থীদের

কৃষ্ণচূড়া রাধাচূড়ার গল্প তো অনেক হয়েছে। প্রায় সবার জানা। তবে   দুই ফুলের বাইরে আছে আরও একটি নাম কনকচূড়া। অত পরিচিত নয়। তাতে কী? গ্রীষ্মের প্রকৃতিকে রঙিন করে তোলার ক্ষেত্রে ফুলেরও আছে জোরালো ভূমিকা। কাঁচা হলুদ রঙের অজস্র ফুল একসঙ্গে ফুটে। ফলে ব্যাপকভাবে দৃশ্যমান হয়।

এখন রাজধানীতে যারা মেট্রোরেলে চড়েন তারা বাইরে তাকালে ফুলটি নিশ্চিত দেখতে পাবেন। সুনির্দিষ্ট জায়গার কথা বললে, টিএসসি। টিএসসি এলাকায় মেট্রো ঢুকতেই সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে তাকান। দুএকটি গাছের  কোনো পাতা দেখা যাবে না। হলুদ কনকচূড়া দেখা যাবে শুধু। কারণ গাছের ছড়িয়ে থাকা ডালপালার অগ্রভাগে খাড়া থোকা। থোকায় থোকায় ফুল।   

কনকচূড়া যেমন ব্যাপক হারে ফোটে, তেমনি ঝরে পড়ে নিয়মিত। কারণে গাছের নিচটাও হলুদ হয়ে থাকে। উদাহরণ হতে পারে হোটেল সোনারগাঁওয়ের পশ্চিম পাশের ফুটপাতটি। ফুটপাত দিয়ে যাওয়া আসার সময় প্রতিদিনই কনকচূড়া পড়ে থাকতে দেখা যায়। অনিন্দ্যসুন্দর ফুল একেবারে পায়ের কাছে এসে লুটিয়ে পড়ে। ঘন হয়ে বিছিয়ে থাকা ফুলে ঢাকা পড়ে যায় বিবর্ণ ফুটপাত। নিচের দিকে তাকিয়ে উদাসীনভাবে হেঁটে গেলেও দৃষ্টি এড়ায় না।

মজার বিষয় হলো নামটি দেশীয় হলেও, কনকচূড়া আমাদের দেশী ফুল নয়। বহির্বিশ্বে Peltophorum pterocarpum নামে পরিচিত। কনকচূড়া নাম দিয়ে একে বাংলাদেশের করে নেন উদ্ভিদবিদ দ্বিজেন শর্মা। তিনি লিখেছেন, তিনটি মূল বৈশিষ্ট্যের জন্য অন্য গাছপালা থেকে এটি খুঁজে পাওয়া সহজ। প্রথমত, বিরাট দ্বিপক্ষল পত্র; দ্বিতীয়ত, শাখায়িত দীর্ঘ হলুদ মঞ্জরি এবং শেষত, চ্যাপ্টা তামাটে ফলের অজস্রতা। শেষের এই বৈশিষ্ট্য ঢাকার তরুরাজ্যে আর নেই। জ্যৈষ্ঠ মাসের মাঝামাঝি থেকে বর্ষাকাল অবধি পেল্টোফোরামের গাঢ় তামাটে ফলের প্রাচুর্য বহু গাছের প্রস্টম্ফুটনের চেয়েও অধিকতর আকর্ষণীয়।

কনকচূড়া শ্রীলঙ্কা আন্দামান মালয়েশিায়া অস্ট্রেলিয়ার প্রজাতি। প্রায় ২০ মিটিার পর্যন্ত উঁচু হয় গাছ। শাখায়িত পত্রমোচি গাছের ডালপালা ঊর্ধ্বমুখী। ঘন বিন্যস্ত। ওপরের দিকটা আবার ছত্রাকৃতির। ফলে এই অসহনীয় গরমে চমৎকার ছাওয়া পাওয়া যায়।   

ফুলের কথায় ফিরি। গাঢ় হলুদ ফুলের পাঁচ পাপড়ি। মৃদু ঘ্রাণ আছে।  হলুদ অসমান ১০টি পরাগকেশর। পরাগকোষ আবার গাঢ় কমলা রঙের। পাতলা চ্যাপ্টা তামাটে দেখতে ফল হয়। তবে ফুলটাই মূল আকর্ষণ। গ্রীষ্মের পুরোটা জুড়েই থাকবে কনকচূড়া। এর সঙ্গে পরিচিত হোন। উপভোগ করুন সৌন্দর্য।

×