
সিসা কারখানা
ময়মনসিংহ সদরের চরকালীবাড়ি আবাসিক এলাকার ফসলি জমিতে গড়ে তোলা সিসা তৈরির কারখানা থেকে বিষাক্ত ধোঁয়ায় মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকিতে পড়েছে আশপাশের লক্ষাধিক মানুষ। হেভি মেটালযুক্ত কারখানার বিষাক্ত ধোঁয়ার প্রভাবে এলাকার নানা শ্রেণি-পেশার মানুষ ইতোমধ্যে আক্রান্ত হয়েছেন শ্বাসকষ্টসহ নানা জটিলতায়। অকালেই ঝরে পড়ছে ফলদ বৃক্ষের ডাব, নারকেল ও আম।
কারখানার নির্গত বর্জ্য ফসলি জমি, ঘাস, খালে, ডোবায় ছড়িয়ে পড়ছে। এতে কমছে নানা ফসলের উৎপাদন। ঘাস খেয়ে মারা গেছে অনেক কৃষকের গবাদিপশু। মরে ভেসে উঠছে ডোবার মাছ। এসব নিয়ে উদ্বিগ্ন ও ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী।
ময়মনসিংহের সিভিল সার্জন মোহাম্মদ নজরুল ইসলাম জনকণ্ঠকে জানান, সিসা তৈরির কারখানার ধোঁয়ায় হেভি মেটালযুক্ত ও জনস্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর বিষাক্ত উপাদান থাকায় মানুষের শ্বাসকষ্টসহ নানা রোগ দেখা দিতে পারে। কারখানার ধোঁয়া ও বর্জ্য থেকে মানুষের ক্যান্সার হতে পারে বলেও জানান সিভিল সার্জন। ফসলি জমিতে কারখানা স্থাপনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার বারণ থাকলেও অনুমোদন প্রশ্নে পরিবেশ অধিদপ্তর ময়মনসিংহ কার্যালয়ের উপ-পরিচালক মেজ-বাবুল আলম প্রশ্ন রেখে জানান, যেখানে আলাদা শিল্প জোন নেই সেখানে কারখানা কোথায় হবে? খালি জায়গা ও কোনো বসতি নেই-ময়মনসিংহ সিটি কর্তৃপক্ষের এমন ছাড়পত্র পেয়ে সরেজমিন পরিদর্শন করে সিসা তৈরির কারখানার অনুমোদন দেয় পরিবেশ অধিদপ্তর জানান এই উপ পরিচালক। তবে কারখানা পরিবেশের শর্ত মেনে চলছে কিনা প্রশ্নে উপ পরিচালক জানান, বিষয়টি তার জানা নেই!
স্থানীয় সূত্র জানায়, ময়মনসিংহ নগরীর সম্প্রসারিত ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের চরকালীবাড়ি চায়না মোড় এলাকায় মোশাররফ হোসেনের মালিকানাধীন ‘মন্ডল কর্পোরেশন’ এর ব্যাটারি পুড়িয়ে সিসা তৈরির কারখানা থেকে প্রতিনিয়ত ছড়িয়ে পড়ছে হেভি মেটালযুক্ত বিষাক্ত ধোঁয়া। এতে চরঈশ্বরদিয়া ও চরনিলক্ষীয় ইউনিয়নের চরকালীবাড়ি, চরঝাউগড়া, চরগোবদিয়া, চরঈশ্বরদিয়া, শম্ভুগঞ্জ বাজার ও রঘুরামপুরসহ আশপাশের আরও কয়েক গ্রামের লক্ষাধিক মানুষ মারাত্মক স্বাস্থ্যঝুঁকির মধ্যে বসবাস করছে।
কারখানা থেকে নির্গত ব্যাটারির অ্যাসিড আশাপাশের ডোবা, খাল ও নিচু এলাকার কৃষিজমিতে ছড়িয়ে পড়ায় কৃষি অধ্যুষিত এসব এলাকার ঘাস খেয়ে অনেক কৃষকের গবাদিপশু এরই মধ্যে মারা গেছে। নষ্ট হচ্ছে ফসলি জমি, উঠতি ফসল, গাছাপালাসহ আম,ডাব ও নারকেল। এ নিয়ে ক্ষুব্ধ এলাকাবাসী। অথচ বিষ ছড়ানোর এই কারখানা বন্ধে নির্বিকার স্থানীয় প্রশাসনসহ পরিবেশ অধিদপ্তরের স্থানীয় কর্মকর্তারা।
স্থানীয় এলাকাবাসী জানায়, কারখানা চালুর পর এর বিষাক্ত ধোঁয়ার উৎকট দুগর্ন্ধের কারণে বসতঘরের দরজা-জানালা খোলা যায় না। নিঃশ্বাস বন্ধ হয়ে আসে। অনেকের শ্বাসকষ্ট দেখা দিয়েছে। কৃষক গোলাম রসুল (৬০) জানান, মাঠের ঘাস খেয়ে অনেকের গবাদিপশু মারা গেছে। গত তিন বছরে আশপাশের অন্তত কৃষকের ২০ টি গবাদিপশু মারা গেছে।
স্কুল শিক্ষক ইসমাইল হোসেন (৫০) জানান, গত কয়েক বছর ধরে কারও গাছের ডাব, নারকেল, আম টিকছে না। অকালেই ঝরে পড়ছে সবকিছু। কারখানা চালু করা হলে বিষাক্ত কালো ধোঁয়া বের হতে দেখা গেছে এবং এর বর্জ্য হোজ পাইপ দিয়ে পাশের ডোবায় ও ফসলি জমিতে ফেলতে দেখা গেছে। এলাকাবাসী আরও জানায়, কারখানা বন্ধে সড়ক অবরোধসহ আন্দোলন হলেও কোনো পদক্ষেপ নেয়নি পরিবেশ অধিদপ্তর ও স্থানীয় প্রশাসন। পরিবেশ ধ্বংসকারী ও জনস্বাস্থ্যের জন্য মারাত্মক হুমকির সিসা তৈরির এই কারখানাটি অবিলম্বে বন্ধ করে এর মালিককে আইনের আওতায় আনবে এমন দাবি স্থানীয় ক্ষতিগ্রস্তদের।
চাহিদার সকল ছাড়পত্র জমা ও পরিবেশ অধিদপ্তরের অনুমোদন নিয়ে নিয়মমাফিক কারখানা পরিচালনার দাবি করেছেন মন্ডল কর্পোরেশনের মালিক মোশাররফ হোসেন।