.
ঈদের লম্বা ছুটিতে অনেকেরই কোথাও যাওয়া হয়নি। মন তো ছটফট করছে কোথাও গিয়ে একটু বেড়িয়ে আসার জন্য। এতদিন ছুটির পর আবার ছুটি পাওয়াটা সবার জন্য সহজ নয়। তাহলে কি বেড়ানো হবে না? কেন হবে না! ছুটির দিনে ঢাকার কাছেই প্রাকৃতিক পরিবেশ আর বিশুদ্ধ বাতাসে সারাদিনের জন্য বেড়িয়ে আসুন কোথাও থেকে। অথবা যেতে পারেন বাচ্চারা পছন্দ করবে, আবার নিজেদেরও সময়
কাটবে এমন কোথাও। তেমনি সুন্দর দুটি জায়গায়
বেড়ানোর অভিজ্ঞতা জানাচ্ছেন- শোয়েব মাহমুদ
মাটির মায়ায় একদিন...
ঢাকা থেকে সকালে গিয়ে সন্ধ্যায় চলে আসা যায় এমন নিরিবিলি এবং সুন্দর একটা জায়গা খুঁজছিলাম। উদ্দেশ্য পরিবারের সবাই মিলে প্রকৃতির কাছাকাছি কিছুটা সুন্দর সময় কাটানো। খুঁজতে খুঁজতে মন মতো একটা জায়গা পেয়েও গেলাম। রোজার আগেই ঘুরে এলাম মাটির মায়া থেকে। একদম সকাল সকাল ঢাকা থেকে রওনা দিয়ে ঘণ্টা দুয়েকের মধ্যেই আমরা পৌঁছে গেলাম মাটির মায়ায়। গাজীপুরের শ্রীপুরে উত্তর পেলাইদে এর অবস্থান। ভিতরে প্রবেশের পর যেদিকেই তাকাচ্ছিলাম, সবুজের দেখা মিলছিল। এখানে এসে ‘মাটির মায়া’ নামকরণের স্বার্থকতাও খুঁজে পেলাম। থাকার জন্য যেসব কটেজ রয়েছে, সেগুলো মাটির তৈরি। কেউ বলে না দিলে সেটা বোঝার উপায় নেই। প্রতিটা কটেজ এতো সুনিপুণভাবে মাটি দিয়ে তৈরি করা হয়েছে যে মুগ্ধ হতে হয়। মাটির তৈরি ঘর তো আগেও দেখেছি, তবে এই কটেজগুলোতে আধুনিক সব সুযোগ সুবিধাও বিদ্যমান। ঐতিহ্য আর আধুনিকতার মিশেলে তাই এটা রূপ নিয়েছে নান্দনিকতায়।
রিসোর্টে পৌঁছে কটেজে কিছুক্ষণ বিশ্রাম নিয়ে আমরা সকালের নাস্তার পর্ব সেরে নিলাম। এরপর চারপাশটা ঘুরে দেখতে বের হলাম। পুরো জায়গাটাই বেশ খোলামেলা। চারপাশের সবুজ প্রকৃতি আর অসংখ্য গাছগাছালি চোখের আরাম দিচ্ছিল। এখানে অহরহ ঝিঁঝিঁপোকার আর পাখিদের ডাক শোনা যায়। শহুরে কোলাহলময় ব্যস্ত জীবনের বাইরে নিরিবিলি এরকম একটা জায়গায় ঘুরে বেড়াতে বেশ লাগছিল। বাচ্চারা এদিক ওদিক ছুটোছুটি করছিল। দুপুরের আহার পর্ব শেষে আমরা গেলাম মাটির মায়ার পুকুরপাড়ের দিকে। ছায়া সুনিবিড় এই জায়গাটা দারুণ। পুকুরপাড়ে পানির ওপর একটা দোলনা আছে, যেটায় দোল খেতে খেতে অনায়াসে একটা অলস দুপুর পার করে দেওয়া যায়। বাচ্চারা এর মধ্যে কিছুক্ষণ সুইমিংপুলে দাপাদাপিও করে এলো। শেষ বিকেলে স্ন্যাক্স আর কফি খেতে খেতে আড্ডাটাও জমেছিলো বেশ। সবমিলিয়ে মাটির মায়ায় মায়াময় রিফ্রেশিং একটা দিন কাটিয়ে আমরা ফেরার পথ ধরলাম।
জিরো গ্র্যাভিটি বাংলাদেশ
ঢাকায় প্রথমবারের মতো চালু হয়েছে ট্রাম্পোলিন পার্ক ‘জিরো গ্র্যাভিটি বাংলাদেশ’। ১০০ ফিট মাদানি এভিনিউতে শেফস টেবিল কোর্ট সাইডের ঠিক পাশেই এর অবস্থান। এখানে বিশাল জায়গা নিয়ে গড়ে তোলা হয়েছে এই ট্রাম্পোলিন থিম পার্ক। ছুটির দিনে পরিবার নিয়ে গেলাম জিরো গ্র্যাভিটিতে। ভিতরে ঢুকতেই চারপাশের ঝা চকচকে রঙিন সাজসজ্জা মুগ্ধ করল। টিকেট কাউন্টার থেকে টিকেট সংগ্রহ করে জুতা এবং অন্যান্য জিনিসপত্র এখানকার লকারে রেখে ঢুকে পড়লাম লাফানোর জগতে। এখানে প্যাকেজ আছে ৩ ধরনের- ৩০ মিনিট, ৬০ মিনিট, ১২০ মিনিট। জনপ্রতি খরচ পড়বে সময়সীমা অনুযায়ী ৭২০-১৫০০ টাকা পর্যন্ত। বিশাল জায়গা জুড়ে লাফালাফি, ঝাপাঝাপি করার জন্য আছে নানারকম আয়োজন। অন্য যেকোনো কিডস পার্কে গেলে দেখা যায় শুধু বাচ্চারা লাফালাফি করছে। কিন্তু এখানে বাচ্চা-বুড়ো সবাই মিলে লাফাচ্ছে। ওজন, গ্র্যাভিটি এগুলো এখানে কোনো ব্যাপারই না। ছেলেমেয়েরা ইচ্ছামতো লাফালাফি শুরু করে দিয়েছে।
কেউ তাদের বারণ করছে না। বাসায় যেখানে বাচ্চারা লাফালাফি করলে তাদের মা বকুনি দিতে থাকে, সে নিজেও এখানে এসে লাফাচ্ছে। এই দৃশ্য দেখে বেশ মজা লাগল। আমি নিজেও লাফিয়েছি জান-প্রাণ দিয়ে। লাফালাফি করার পাশাপাশি এখানে আছে বেশ কিছু রাইড আর একটিভিটিজ। ডোনাট স্লাইড, ক্লাইম্বিং ওয়াল, জিপ লাইন, ওয়াইপ আউট, ট্রাম্পোলিন ব্যাটেল- প্রতিটা একটিভিটিই ছিল বেশ মজার। আমাদের মনের ভিতর লুকানো বাচ্চামি যেন বের হয়ে এসেছিল। সবমিলিয়ে, ক্রেজি লেভেলের ফান আর এন্টারটেইনমেন্টে ভরপুর দারুণ কিছু সময় কাটল আমাদের। পরিবারের সবাই মিলে একসঙ্গে মজা করার জন্য খুব বেশি জায়গা নেই আমাদের দেশে। তাই নিশ্চিতভাবেই জিরো গ্র্যাভিটি নতুন হাইপড প্লেস হতে যাচ্ছে। এবার লাফাবে বাংলাদেশ! ঈদের এই ছুটিতে যারা ঢাকাতেই থাকছেন। তারা পরিবার নিয়ে ছুটির দিনটি কাটিয়ে আসতে পারেন চমৎকার এই জায়গাগুলোতে।