ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ০২ মে ২০২৪, ১৯ বৈশাখ ১৪৩১

ঢাকা-ফতুল্লা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে অবৈধ যান

​​​​​​​মো. খলিলুর রহমান, নারায়ণগঞ্জ

প্রকাশিত: ২১:৫৮, ১৯ এপ্রিল ২০২৪

ঢাকা-ফতুল্লা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে অবৈধ যান

ঢাকা-ফতুল্লা-নারায়ণগঞ্জ পুরনো সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে অটোরিক্সা, ব্যাটারি চালিত রিক্সা ও মিশুকসহ নানা ধরনের অবৈধ যানবাহন

ঢাকা-ফতুল্লা-নারায়ণগঞ্জ পুরনো সড়কে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে কয়েক হাজার অটোরিক্সা, ব্যাটারি চালিত রিক্সা মিশুকসহ নানা ধরনের অবৈধ যানবাহন। অটোরিক্সাকে আবার কেউ কেউ ইজিবাইক বলেও অবহিত করে আসছেন। এসব যানবাহন চলাচল করায় সড়কের প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডেই যানজট লেগেই আছে। যতই দিন যাচ্ছে ততই সকল যানবাহন চলাচল আরো বৃদ্ধি পাচ্ছে। অভিযোগ রয়েছে, সকল যানবাহনের অধিকাংশ চালকই অদক্ষ।

এমনকি অপ্রাপ্ত বয়স্ক চালকরাও ব্যস্ততম সড়কে অবাধে চালিয়ে যাচ্ছেন সকল যানবাহন। ফলে প্রতিনিয়তই ঘটছে সড়ক দুর্ঘটনায়। অবৈধ যানবাহনগুলো নির্বিঘ্নে চলাচল করায় যে কোনো সময় ঘটতে পারে বড় ধরনের সড়ক দুর্ঘটনা। অবশ্য ট্রাফিক পুলিশের দাবি, নিয়মিত সকল যানবাহনের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে। কিন্তু রেজিস্ট্রেশন না থাকায় অবৈধ যানবাহন হওয়ায় পরও এদের বিরুদ্ধে কোনো মামলা করা যাচ্ছে না। সকল অবৈধ যানবাহনগুলোর বিরুদ্ধে প্রতিরোধ ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি স্থানীয় বাসিন্দা সচেতন মহলের।

জানা যায়, ঢাকা-ফতুল্লা-নারায়ণগঞ্জ পুরনো সড়কটি স্বাধীনতার আগেই নির্মিত হয়েছে। এক সময়ে সড়ক দিয়েই নারায়ণগঞ্জ শহরসহ ফতুল্লা থানা এলাকার লোকজন ঢাকায় যাতায়াত করতেন। এখন ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ লিংকরোড তৈরি হওয়ায় সড়কটি দিয়েও এখন রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করছেন নারায়ণগঞ্জ শহরের লোকজন। তারপরও সড়কটি গুরুত্ব এতটুকুও কমেনি। দিন দিন সড়কের চাহিদা আরও বাড়ছে। এছাড়াও ঢাকা-মুন্সীগঞ্জ সড়কটি পঞ্চবটি পর্যন্ত এসে ঢাকা-ফতুল্লা-নারায়ণগঞ্জ সড়কের সঙ্গে মিশেছে। ফলে মুন্সীগঞ্জ শহরের লোকজনও সড়ক দিয়ে রাজধানী ঢাকায় যাতায়াত করছেন।

এছাড়াও সড়কের আশপাশে রয়েছে মেঘনা যমুনা ¦ালানি তেলের ডিপো। প্রতিদিন অসংখ্য ট্যাঙ্কিলরি ¦ালানি তেল নিয়ে রাজধানী ঢাকাসহ বিভিন্ন স্থানে যাতায়াত করছে। সড়কের আশপাশে রয়েছে মিল-কারখানা, স্কুল-কলেজ অসংখ্য ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। সব মিলিয়ে সড়কটি ব্যস্ততম সড়কে পরিণত হয়েছে। কিন্তু ব্যস্ততম সড়কে ইদানিং কয়েক হাজার অটোরিক্সা, ব্যাটারি চালিত রিক্সা মিশুকসহ নানা ধরনের অবৈধ যানবাহন দাপিয়ে বেড়াচ্ছে।

খবর নিয়ে যায়, অটোরিক্সার কোনো কাগজপত্র নেই, নেই কোনো নম্বর প্লেটও। পুলিশ, স্থানীয় লোকজনসহ সকলেই জানে ধরনের যানবাহনগুলো সম্পূর্ণ অবৈধ। স্থানীয়রা জানায়, এখন সকল যানবাহন পুলিশ, স্থানীয় পরিবহন শ্রমিক চাঁদাবাজদের আর্থিক সুবিধা দিয়ে অবাধে চলাচল করছে। সড়কের ধরনের যানবাহনগুলো সম্পূর্ণ অবৈধ হলেও অসহায় যাত্রীদের এসব যানবাহনের ওপরই নির্ভর করতে হচ্ছে। পুলিশ প্রশাসনের দাবি, সকল অবৈধ যানবাহনগুলো কোনো নিয়মশৃঙ্খলা মানছে না। এদের কোনো রেজিস্ট্রেশন না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও দেওয়া যাচ্ছে না।

সড়কের অটোরিক্সা চালক কামাল হোসেন বছর ধরে অটোরিক্সা চালিয়ে জীবিকা নির্বাহ করছেন। তার দাবি ঢাকা-ফতুল্লা-নারায়ণগঞ্জ সড়কে কমপক্ষে - হাজার অটোরিক্সা, ব্যাটারি চালিত রিক্সা মিশুকসহ ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। তাদের অটোরিক্সাগুলো ফতুল্লার পঞ্চবটি থেকে রাজধানী ঢাকার পোস্তগোলা পর্যন্ত চলাচল করছে। কেউ বাধা দিচ্ছে না। তবে তারা নিয়মিত পুলিশ এক শ্রেণির লোকজনকে মাসোহারা দিয়ে কাগজপত্র ছাড়াই তারা সড়কে অবাধে চলাচল করছেন। তবে একই স্ট্যান্ডের আরেক অটোরিক্সার চালক উজ্জল মিয়া বলেন, সড়কে প্রায় হাজার ধরনের যানবাহন চলাচল করছে। তিনি বলেন, প্রতিদিন পুলিশসহ চাঁদাবাজদের ২শটাকা করে চাঁদা দিতে হয়।

বিশেষ করে ঢাকার পোস্তগোলায় দেড়শটাকা চাঁদা দিতে হয়। আরেক অটোরিক্সা চালক ইদ্রিস মিয়া বলেন, আমরা পঞ্চবটি থেকে ফতুল্লা পাগলা হলে পোস্তগোলা যাত্রী নিয়ে চলাচল করছি। পঞ্চবটি থেকে পোস্তগোলা পর্যন্ত প্রতি যাত্রীদের ভাড়া হিসেবে ৩০ টাকা গুণতে হচ্ছে। তবে নারায়ণগঞ্জের চাষাঢ়া থেকে পঞ্চবটি পর্যন্তও চলাচল করছে অসংখ্য অটোরিক্সাসহ ধরনের যানবাহন। এখানে ১০ টাকা ভাড়া দিয়ে চাষাঢ়া থেকে পঞ্চবটি পর্যন্ত যেতে হচ্ছে যাত্রীদের।

আলীগঞ্জের বাসিন্দা জামাল হোসেন বলেন, সড়কে আগের মতো যাত্রীবাহী বাস চলাচল করছে না। তাই একমাত্র অটোরিক্সার ওপর নির্ভর করেই আমাদেরকে যাতায়াত করতে হচ্ছে। তবে সকল যানবাহনগুলো কোনো নিয়মশৃঙ্খলা মানছে না। ধরনের অবৈধ যানবাহন চলাচল করার কারণে সড়কে প্রতিনিয়ত যানজট সৃষ্টি হচ্ছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, ধরনের যানবাহনগুলো প্রতিটি বাসস্ট্যান্ডে সড়ক দখল করে যাত্রী উঠানামা করাচ্ছে। সারাক্ষণই তাদের দখলে থাকছে পুরো সড়কটি।

সড়কে চলাচলরত আনন্দ পরিবহন সার্ভিসের একটি যাত্রীবাহী বাসের চালকের সহযোগী রিপন হোসেন বলেন, সড়কের অটোরিক্সা, ব্যাটারিচালিত রিক্সা মিশুকসহ নানা ধরনের অবৈধ যানবাহন চলাচল করায় আমাদের মতো বৈধ যাত্রীবাহী বাসের যাত্রী দিন দিন কমে আসছে। সকলেই ধরনের অবৈধ যানের প্রতি ঝুঁকে পড়ছে। কারণ একটি যাত্রীবাহী বাস বোঝাই করতে ৩০-৩২ জন যাত্রী প্রয়োজন হচ্ছে। সেক্ষেত্রে অটোরিক্সায় জন যাত্রী হলেও তারা চলে যাচ্ছে।

আমাদের যাত্রী উঠাতে সময় লাগছে বিধায় যাত্রীরা সকল অবৈধ যানের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পড়ছে। রুটের যাত্রীবাহী বাসগুলো দিন দিন লোকসানের পথে এগুচ্ছে। ধরনের যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার দাবি জানাচ্ছি।

বিষয়ে নারায়ণগঞ্জ জেলার ট্রাফিক পুলিশের টিআই (প্রশাসন মো. আব্দুল করিম বলেন, অটোরিক্সা উৎপাদন আমদানি বন্ধ না করলে এগুলো বন্ধ করা সম্ভব নয়। উৎপাদন হচ্ছে রাস্তায় এগুলো অবাধে নামছে এবং চলাচল করছে। এখনোতো অটোরিক্সার পরিমাণ এত বেড়েছে যে সমন্বিত পদক্ষেপ ছাড়া অটোরিক্সা নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব নয়। আমাদের মতো আমরা সকল যানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিচ্ছি। রেজিস্ট্রেশন না থাকায় এবং অবৈধ যানবাহন হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো মামলাও নেওয়া যাচ্ছে না। সিটি করপোরেশন, ইউনিয়ন পরিষদ, নেতা, বিআরটিএ, পুলিশ, জেলা প্রশাসন, আমদানি রপ্তানিসহ যা আছে তাদের সমন্বিত উদ্যোগে নিয়ে অটোরিক্সা বিরুদ্ধে তাদের করণীয় কি তা ঠিক করতে হবে। তিনি বলেন, সকল যানবাহন থেকে কেউ চাঁদাবাজি করছে কিনা এটা আমাদের জানা নেই। পুলিশের নাম করেও কেউ চাঁদা নিতে পারে। তবে আমাদের কোনো পুলিশ চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত নয়। তিনি বলেন, কি পরিমাণ অটোরিক্সা, ব্যাটারি চালিত রিক্সা আছে তা জানা নেই। এটি হচ্ছে ফুটপাতের মতো। মন চাইছে কিছু মাল কিনল আর ফুটপাতে বসে পড়ল। তবে ট্রাফিক বিভাগের কন্ট্রোলে আছে বলেই সড়কে যানবাহন চলাচল করে যাচ্ছে। এদেরকে শাস্তির আওতায় আনা হচ্ছে। যদি শাস্তির আওতায় আনা না হতো তবে আপনারা রাস্তায় চলাচল করতে পারতেন না।

×