ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৫ জুন ২০২৫, ১১ আষাঢ় ১৪৩২

 ঢাকার আড্ডার নতুন অনুষঙ্গ ফিশ বারবিকিউ

​​​​​​​জনকণ্ঠ রিপোর্ট

প্রকাশিত: ২১:১১, ১৯ জানুয়ারি ২০২৪

 ঢাকার আড্ডার নতুন অনুষঙ্গ  ফিশ বারবিকিউ

ঢাকার স্ট্রিট ফুডের দোকানে তৈরি হচ্ছে রূপচাঁদার বারবিকিউ

সাম্প্রতিক বছরগুলোতে ঢাকার আড্ডার অন্যতম অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছেফিশ বারবিকিউ একটা সময় ছিলো বারবিকিউ বলতে শহুরে মানুষ বুঝতো নানা রকম পোড়া মাংসের কথা। আগুনে ঝলসে মাছ খাওয়ার রীতি তখনো চালু হয়নি শহরে। কেবল সমুদ্রের পাড়েই চোখে পড়ত এসব খাবার। তবে মানুষের আগ্রহের কথা চিন্তা করে ঢাকার স্ট্রিট ফুডের দোকানগুলোতে যুক্ত হয়েছে মাছের কাবাব। দাম হাতের নাগালে হওয়ায় ভোজন বিলাসীদের মন জয় করেছে অল্প দিনে। আগুনে ঝলসানো মাছ এখন তাই ভোজন রসিকদের আড্ডার অপরিহার্য অংশ।

ঢাকার বিভিন্ন স্থানে কাবাবের দোকানগুলোতে ফিশ বারবিকিউ না পাওয়াই যেন অস্বাভাবিক ঘটনা এখন। পুরান ঢাকার নাজিমুদ্দিন রোডে বেশকিছু দোকান মাছের বারবিকিউয়ের জন্যই অর্জন করেছে খ্যাতি। এছাড়াও রাজধানীর পরীবাগ, আগারগাঁও, খিলগাঁওয়ের মতো জায়গাগুলোও মাছের বারবিকিউর জন্য বিশেষ নাম করেছে।

খিলগাঁও তালতলা মার্কেটে বিকেল থেকে সরব হয়ে ওঠে খাবারের দোকানগুলো। সন্ধ্যার দিকে কাবাব আর বারবিকিউয়ের গন্ধে ভরে ওঠে চারপাশ। পরিবার কিংবা বন্ধুদের সঙ্গে নিয়ে যারা ঘুরতে আসেন, একে একে তারা ভিড় জমান দোকানগুলোতে। এদের অনেকেরই চোখ থাকে দোকানে সাজিয়ে রাখা হরেক রকম মাছের দিকে। মিঠা আর নোনা জলের সুস্বাদু মাছগুলোতে ততক্ষণে মাখানো হয়েছে প্রয়োজনীয় মশলা। দেখে জিভে জল আসবে যে কোনো খাদ্য রসিকের। ক্রেতারা তাদের পছন্দ অনুযায়ী মাছ বেছে দিতেই ব্যস্ততা শুরু হয় বিক্রেতাদের। তৎক্ষণাৎ মাছটিকে তুলে ঝলসানো হয় কয়লার আগুনে। খানিক পরেই লুচি কিংবা পরোটার সঙ্গে তা পরিবেশিত হয় ভোজন রসিকের প্লেটে।

একসময় সামুদ্রিক এলাকা ছাড়া মাছের বারবিকিউ তেমন দেখা যেত না। তবে সাম্প্রতিক বছরগুলোতে শহুরের মানুষের মাঝে বেড়েছে মাছের বারবিকিউয়ের জনপ্রিয়তা। তা কুয়াকাটা, কক্সবাজার কিংবা সেন্টমার্টিন থেকে মাছের বারবিকিউ কীভাবে জনপ্রিয় হয়ে উঠল ঢাকায়? খিলগাঁও তালতলা মার্কেটের বিক্রেতা আনিসুর রহমান জানালেন কারণ। তিনি বললেন, ‘সত্যি কথা হলো, মাছের বারবিকিউ মাংসের চেয়ে অনেক মজাদার হয়। এছাড়া অনেকেই বয়লার মুরগি খাইতে চায় না। অনেকে হার্টের রোগী, ডায়বেটিসের রোগী, তারা মাংস খেতে চায় না। মাছটা স্বাদ বেশি, ক্ষতি কম।

আরেক বিক্রেতা সুমন হোসেন মাছের বারবিকিউ বিক্রি করছেন দুই বছর হলো। তার মতে, ভালো কিছু খাওয়ালে ক্রেতারা অবশ্যই কিনে খাবেন, মাছের বারবিকিউ সে কারণেই এত জনপ্রিয়। ভোজন বিলাসীদের জন্য পরীবাগও এক আকর্ষণীয় জায়গা। শাহবাগ থেকে বাংলামোটর যাওয়ার পথে জননী গর্বিত বর্ণমালা ভাস্কর্যের পাশেই বিকেল থেকে শুরু হয়ে নানা ধরনের খাবার বিক্রি। এরমধ্যে বেশ কয়েকটি দোকানে বিক্রি হয় বারবিকিউ। সন্ধ্যা হলেই আলো জ্বলে ওঠে সেসব দোকানে। কাবাবের দোকান হলেও মাংসের চেয়ে মাছের বারবিকিউ এখানে প্রাধান্য পেয়ে থাকে।

এদের মূল আকর্ষণ সমুদ্রের মাছ। শুধু পরীবাগ হয়, ঢাকার অন্যান্য স্থানের দোকানগুলোও সামুদ্রিক মাছ বিক্রি করে থাকে। ফলে কক্সবাজার কিংবা কুয়াকাটা না গিয়েও সামুদ্রিক মাছের স্বাদ পাওয়া যায় এসব দোকানে। কোন কোন জায়গায় বিক্রি হয়ে থাকে সামুদ্রিক কাঁকড়া কিংবা অক্টোপাস।

ছেলে-মেয়ের আবদারে সামুদ্রিক মাছের বারবিকিউ কিনতে ছুটে এসেছেন ব্যাংক কর্মকর্তা রুবেল হোসেন। সঙ্গে পাঁচ-ছয় বছরের ছেলে। রুবেল অর্ডার দিলেন একটি তেলাপিয়া আর একটি কোরাল মাছ। জানালেন, ফেসবুকে ভিডিও দেখে ছেলে-মেয়ের আবদারে কিনতে এসেছেন। তেলে ভাজা মাছের চেয়ে এটা বেশি মজার। এখানে তো তেল ব্যবহার করা হয় না।

পরীবাগ মোড়ের আল মুসলিম কাবাবের ম্যানেজার বাবু জানালেন, সারাবছর সন্ধ্যা ছয়টায় শুরু করে রাত দশটা পর্যন্ত থাকেন। তবে শীতের দিনে খাবার তৈরি হয় বারোটা পর্যন্ত। সপ্তাহে সাতদিন খোলা থাকে। শীতকালে ১২টা পর্যন্ত আমরা থাকার কারণ, শীতে বিক্রি বেশি হয়।

ঢাকার নামীদামী রেস্টুরেন্টে ফিশ বারবিকিউ অনেক আগে থেকে পাওয়া গেলেও, স্ট্রিট ফুডের দোকানগুলোতে এটির সংযোজন ভোজন রসিকদের জন্য আশীর্বাদ, বলছেন ক্রেতারা। শীতের দিনে খাবারটির সবচেয়ে উপভোগ্য বলেও মত তাদের।

স্বাদু পানির মাছ হিসেবে তেলাপিয়া মাছের বারবিকিউ সবচেয়ে জনপ্রিয়। আর সামুদ্রিক মাছের মধ্যে কোরাল, টুনা স্যামনের চাহিদা বেশি। এর পাশাপাশি রূপচাঁদা সুরমা মাছের খোঁজ করেন ক্রেতারা। মাছের দামগুলো নির্ধারিত হয়ে থাকে ধরন আকারভেদে। সামুদ্রিক মাছের মধ্যে কোরাল মাছের দাম সবচেয়ে বেশি। এক কেজি ওজনের কোরাল ৮০০ থেকে ৯০০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে। টুনা মাছ কিনতে ক্রেতাদের খরচ করতে হয় ৩০০ থেকে ৬০০ টাকা। তেলাপিয়া সামুদ্রিক মাছ না হলেও আকারভেদে ৪৫০ টাকাতেও বিক্রি হয়ে থাকে। যে মাছ আকারে যত বড়, যে মাছের দামও বাড়িয়ে দেন বিক্রেতারা। তবে সমুদ্র সৈকতের তুলনায় ঢাকায় মাছের দাম বেশ কম বলেই দাবি করলেন তারা। অন্যদিকে দাম নিয়ে ক্রেতাদের পক্ষেও অভিযোগ নেই খুব একটা। 

নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্যের দাম বাড়ায় অন্যান্য পেশাজীবীদের মতোই বিপাকে পড়েছেন ফিশ বারবিকিউ বিক্রেতারা। খিলগাঁওয়েবাচ্চু ভাই কাবাব ঘর’-এর কর্মচারী অমল চন্দ্র শিকদার জানালেন, বেচাকেনা আগের মতো থাকলেও এখন তাদের লাভ হচ্ছে সীমিত।

এক কেজি কয়লার দাম ১১০ টাকা। কর্মচারীদের দৈনিক বেতন আছে। এক কেজি মরিচ ৮০০ টাকা। আগে ১০০ গ্রাম কাবাব মশলা কেনা যেত ১০০ টাকা দিয়ে, এখন ৭০ গ্রাম মেলে ১০০ টাকা। মানে ৩০ গ্রাম নেই। সরিষার তেল, টমেটো সসসহ আরও বিভিন্ন ধরনের খরচ রয়েছে।

×